পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ.টি.এম. রফিক ও আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : দস্যু-দুষ্কৃতিকারী ও পাচারকারীদের আগ্রাসনে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে বিশ্বঐতিহ্যের সুন্দরবন ও বনের জীববৈচিত্র্য। সুন্দরবনে অগ্নিসংযোগ, বন্যপ্রাণী নিধন ও দস্যুতার বিষয়ে বিশ্ব সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পাচারকারীদের ধরতে এবার বন মন্ত্রণালয়কে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। দেশের অভ্যন্তরে সুন্দরবনের সম্পদ ধ্বংস ও অপরাধীদের একটি তালিকাও দিয়েছে তারা। তালিকা হাতে পাওয়ার পর অপরাধীদের ধরতে নড়েচড়ে বসেছে বনবিভাগ। ইতিমধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে তাদের। সুনির্দিষ্ট তালিকা পাওয়ায় শিঘ্রীই দস্যু ও পাচারকারী নিধনে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানা গেছে।
বন বিভাগের সূত্রমতে, গত ৭ এপ্রিল খুলনায় বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে ইন্টারপোলের দেয়া সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের নামের তালিকা প্রকাশ না করলেও; অপরাধীদের নির্মূলে করণীয় নির্ধারণে আলোচনা হয়। বক্তারা খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের সুন্দরবন উপকূলীয় বাসিন্দাদের বননির্ভরতা কমানোর উদ্যোগের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। সর্বশেষ বাঘ শুমারিতে সুন্দরবনে মাত্র ১০৬টি বাঘ আছে এমন চিত্র উঠে আসার পর থেকেই বাঘ ও সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষায় নড়ে চড়ে বসেছে সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। শুধু বাঘ নয়, কমেছে হরিণ, কুমিরসহ অন্যান্য প্রাণী ও মূল্যবান উদ্ভিদের সংখ্যাও। চোরাশিকারীদের দৌরাত্ম্যই এর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বিভিন্ন সংস্থার গবেবষণায়। আন্তর্জাতিক মহল এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে চোরাকারবারীদের একটি তালিকা দিয়েছে বন মন্ত্রণালয়কে। সাথে কিছু দিক নির্দেশনাও রয়েছে। বনদস্যু, কাঠপাচারকারী, বাঘ, হরিণ, কুমিরসহ অন্যান্য প্রাণীর চামড়া ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারকারীদের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। আর তাই হাতে পাওয়া তালিকাকে গুরুত্বে সাথে দেখছে খোদ বনবিভাগ। বন বিভাগের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে ১০টি বাঘের চামড়া আর হরিণের ৪৭টি চামড়া উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনায় আটক হয়েছে ১০৭জন আর মামলা হয়েছে ১১০টি।
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মোঃ জহিরউদ্দিন আহমদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয় বলে ঐ সভায় ইন্টারপোল থেকে পাওয়া অপরাধীদের আংশিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। টাস্কফোর্স, র্যাব-পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বনবিভাগ যৌথবাহিনীর কাজ চলছে। এমনকি নৌবাহিনীরও সহায়তা থাকতে পারে। খুব শিঘ্রীই প্রকাশ্যে যৌথ অভিযান শুরু হবে।
তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, পূর্ণ তালিকা তাদের কাছে রয়েছে এবং এই তালিকা ধরে অচিরেই অভিযান শুরু হবে।
সুন্দরবনে বাঘ ও সম্পদ রক্ষায় নিয়মিতই অভিযান চালাচ্ছে র্যাব। উদ্ধারও হয়েছে বাঘ, হরিণসহ অন্যান্য বিভিন্ন প্রাণীর মূল্যবান চামড়া ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। ধরা পড়ছে চোরাকারবারীরা। দুর্বৃত্তদের হালনাগাদ একটি তালিকাও করেছে তারা। র্যাব মনে করছে, ইন্টারপোলের তালিকা অপরাধী দমনে আরো সুবিধা হবে। ইন্টাপোলের দেয়া তালিকায় বনবিভাগ ও পুলিশের কতিপয় অসাধু কমকর্তা-কমচারীর নামের পাশাপাশি মৎস্য ও কাঁকড়া ব্যবসায়ী, বনদস্যু, প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিকদের নাম থাকায় সতর্কতার সাথে সকল দপ্তরের সমন্বয়ে অভিযানর পরিকল্পনা করার কথা জানান, পুলিশের খুলনা রেঞ্জের সর্বোচ্চ এই কর্তা।
ইন্টারপোলের প্রতিবেদন পেশের বৈঠকে অংশগ্রহণকারী খুলনা রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে পারছি না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে শিকার হওয়া বাঘের চামড়া ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শেষ গন্তব্য মিয়ানমার-থাইল্যান্ড-লাওস সীমান্তেও চোরাচালান সাম্রাজ্য গোল্ডেন ট্রায়াংগেলের বিদেশি গডফাদারদের নামও রয়েছে। রয়েছে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের কিছু অপরাধীর নামও। জানা গেছে, সুন্দরবনের পশ্চিম বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার অপরাধীদের সংখ্যা পূর্ব বিভাগের চেয়ে বেশি। তবে ইন্টারপোলে তালিকায় অপরাধীর ‘সঠিক সংখ্যাটি’ জানাতে আগ্রহী নয় বনবিভাগ। বন বিভাগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বন বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইন্টারপোলের তালিকা হাতে পাবার পর নড়েচড়ে বসেছে বনবিভাগের ঊর্ধ্বতনরা। গত ৭ এপ্রিল সকালে খুলনায় সার্কেলের বনবিভাগের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের সংরক্ষক অসিত রঞ্জন পালসহ খুলনা সার্কেলের সুন্দরবন বিভাগের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা, উপকূলবর্তী পাঁচ জেলার পুলিশ সুপার, র্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি কমান্ডারবৃন্দ।
যৌথবাহিনীর অভিযান সম্পর্কে র্যাব-৬ খুলনার অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ‘কাজ চলছে। প্রকাশ্যেই আসলে তো সবাই দেখতে পাবেন। আর ইন্টারপোল যে সম্পূর্ণ নতুন কোন তথ্য দিয়েছে তা নয়; আমাদেরও একটা হালনাগাদ তালিকা রয়েছে। সবমিলিয়েই কাজ চলছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।