পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখেরও বেশি ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। নিষিদ্ধ সত্ত্বেও সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কখনও সোজা, কখনও উল্টো পথে। বাড়ছে ঝুঁকি, বাড়ছে দুর্ঘটনা। দেশব্যাপি নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে বাসসহ বিভিন্ন পরিবহনযানের ফিটনেস নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও আড়ালেই থেকে গেছে ইজিবাইক। অথচ সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ তিন চাকার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ঘটনাপ্রবন এই যানের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফ খোকন বলেন, সড়ক-মহাসড়ককে নিরাপদ করতে হলে ইজিবাই ও ব্যাটারিচালিত রিকশাকে কোনোভাবে বৈধতা দেয়া যাবে না। দেশব্যাপি নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে নিষিদ্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ এ যান অনেকটা আড়ালেই থেকে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অনিরাপদ যানকে রাস্তায় রাখলে নিরাপদ সড়কের সব প্রচেষ্টাই বিফলে যাবে।
দুর্ঘটনা কমানোর জন্যই ২০১৫ সালের ১ আগস্ট দেশের ২২টি মহাসড়কে সব ধরণের থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। কিন্তু নিষিদ্ধ করার পরেও এসব যানের দৌরাত্ম থামানো যায় নি। বরং সড়ক-মহাসড়ক হয়ে খোদ রাজধানীতে এগুলো প্রবেশ করেছে। এখন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার অবৈধ এ যানকে বৈধতা দেয়ার পায়তারা করছে। যদিও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো এর বিরোধীতা করে আসছে।
জানা গেছে, সারাদেশে ১০ লাখ ইজিবাইক ও রিকশায় ৪০ লাখ ব্যটারি রয়েছে। এসব ব্যাটারি চার্জ করতে বিপুল পরিমান বিদ্যুত খরচ হচ্ছে-যার সিংহভাগই অবৈধ সংযোগের। বাড়তি এই বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। আবার ৪০ লাখ ব্যাটারি এক বছরের মাথায় ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ার পর সেগুলো ধ্বংস করতে গিয়ে পরিবেশের দূষণ বাড়ছে। নিষিদ্ধ ইজিবাইক সড়কে সচল করার নেপথ্যে সারাদেশে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে, এই সিন্ডিকেটের সাথে স্থানীয় রাজনীতিক থেকে শুরু করে এমপি পর্যন্ত জড়িত।
যোগাযোগ ব্যবস্থা গতিশীল করতে দেশের সড়ক মহাসড়ক উন্নয়নে গত পাঁচ বছরে ২৭ হাজার ২১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। চলতি বছরে এর সাথে যোগ হয়েছে আরও দেড় হাজার কোটি টাকা। এই টাকায় গত ৫ বছরে সড়কের দৈর্ঘ্য এক ইঞ্চিও বাড়েনি। বাড়ানো যায় নি যানবাহনের গতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশার বৈধতা দিলে সড়কে দুর্ঘটনার হার অনেক বেড়ে যাবে। কমবে যানবাহনের গতি, বাড়বে যানজট, ভোগান্তি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফ খোকন বলেন, ইজিবাইকের ব্যাটারিগুলো পরিবেশবান্ধব নয়। এগুলো বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত গিলে খাচ্ছে, যার সিংহভাগই অবৈধ সংযোগ থেকে চার্জ করা। এতে করে একদিকে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে জনগণ লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় এর খেসারত দিচ্ছে। তিনি বলেন, ধীর গতির এই যানগুলোর ব্রেকের সিস্টেম ভালো না। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। তাছাড়া সড়কের বিশাল একটি অংশ দখল করে এই পরিবহনগুলো রাখা হয়। এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হলে সড়ক-মহাসড়কে যানজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। দুর্ঘটনার হারও বেড়ে যাবে।
দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ১৯২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে সরকারের খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর অংশ ৮ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। যার মধ্যে কোথাও এক লেন, কোথাও দুই লেন ইতোমধ্যে বেদখল হয়ে গেছে। ব্যয়বহুল এ মহাসড়কের সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ মহাসড়কে চলাচলকারি যানবাহনগুলো। যার মধ্যে অন্যতম একটি কারন মহাসড়কে ইজিবাইক চলাচল।
২০১৫ সালে দেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার। এখনও কাগজে-কলমে সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। তবে থেমে নেই থ্রি-হুইলারের দাপট। ঝুঁকিপূর্ণ এ যানের কারণে প্রতিদিনই সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের জন্য আলটিমেটাম দেয়া হয়ছিল। হাইকোর্টও এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং আগে মহাসড়কে শুধুমাত্র সিএনজি অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ ব্যটারিচালিত থ্রি হুইলার চলাচল করতো। এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা। এগুলোর আবার চলার কোনো গতিপথ নেই। কখনও সোজা পথে চলে কখনও চলে উল্টো। এতে করে ঝুঁকি এবং দুর্ঘটনা দুটোই বাড়ছে।
এদিকে, দেশের মফস্বল এলাকা ছাপিয়ে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশায় রাজধানী সয়লাব। এগুলোর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে যানজট, ভোগান্তি। শ্রমিক সংগঠনের হিসাবে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত নিষিদ্ধ এ যানের সংখ্যা এখন এক লাখেরও বেশি। আর ঢাকার চারপাশে ইজিবাইক চলছে কমপক্ষে দেড় লাখ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশেই নিষিদ্ধ এ যানগুলো চালানের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা। পুলিশকে ম্যানেজ করে রেখেছে তারাই।
জানা গেছে, রাজধানীর শ্যামপুর, কদমতলী, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, দারুস সালাম, কাফরুল, পল্লবী, উত্তরখান, দক্ষিণখান, খিলগাঁও, সবুজবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, তুরাগ, হাজারীবাগ, আদাবর থানা এলাকার অলি গলি ব্যটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশায় সয়লাব। পুলিশের চোখের সামনেই এগুলো চলাচল করলেও উচ্ছেদে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। জব্বার নামে এক চালকের ভাষায়, আগে এগুলো অবৈধ ছিল। চলতে চলতে এখন অনেকটাই বৈধ হয়ে গেছে। চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে অবৈধ এ যানগুলো রাস্তায় নামালে পুলিশ বাধা দিতো। এখন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় পুলিশ আর কিছু বলে না। এজন্য সিন্ডিকেটের নেতাদের প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয়।
পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় ইজিবাইক নিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সাথে সরকারের আলোচনা হয়। সেখানে মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ইজিবাইক চলাচল বন্ধের দাবি জানালেও সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। বরং সরকার আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ইজিবাইককে বৈধতা দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে বলে জানান ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মালিক-শ্রমিক নেতা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।