Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাশিয়া গড়ে তুলেছে সোনার বিশাল মজুদ

রাশিয়ান টুডে : | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

ভূ রাজনীতি ও বাণিজ্য বিরোধের কারণে বিশ্ব অর্থবাজারে ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার মধ্যে বিভিন্ন দেশ ও বিনিয়োগকারীরা সাধারণত সোনার মধ্যেই তাদের নিরাপত্তা খোঁজে। সে কারণে তারা প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণ ক্রয় করে। বর্তমানে বিশ্বে সোনার বৃহত্তম ক্রেতা হচ্ছে রাশিয়া। তারা গড়ে তুলেছে স্বর্ণের বিশাল মজুদ।
কিছু দেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সক্রিয়ভাবে হয় বিদেশে রাখা সোনা ফিরিয়ে আনতে নয়ত এ মূল্যবান ধাতু কিনতে শুরু করেছে। গত বছর জার্মান কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বুন্ডেসব্যাংক) স্নায়ু যুদ্ধের সময় প্যারিস ও নিউইয়র্কে রাখা ৬৭৪ টন স্বর্ণ মজুদ ফিরিয়ে এনেছে। তুরস্কের সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে যে ২০১৭ সালে তুরস্ক বিদেশে রাখা ২২০টন সোনা ফিরিয়ে এনেছে যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রাখা ছিল ২৮.৭ টন। একই সময়ে হাঙ্গেরির জাতীয় ব্যাংক লন্ডন থেকে দেশের ১ লাখ আউন্স (৩ টন) সোনা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে।
বিশ্ব স্বর্ণ পরিষদের মতে (ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল), সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নিট সোনা বিক্রেতা থেকে নিট সোনা ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। ২০১৭ সালে তাদের সরকারী খাতের ক্রয় তৎপরতা ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৬৬ টনে পৌঁছেছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চাহিদা ছিল ৪২ শতাংশ , ক্রয়ের পরিমাণ ছিল মোট ১১৬.৫ টন যা ২০১৪ থেকে প্রথম প্রান্তিকে ছিল সর্বোচ্চ পরিমাণ।
প্রায় ২ হাজার টন করে সোনা মজুদ আছে বিশ্বের এমন দেশের সংখ্যা পাঁচটি। তাদের মধ্যে অন্যতম রাশিয়া গত ছয় বছর ধরে এই মূল্যবান ধাতুর বৃহত্তম ক্রেতা। ২০১৭ সালে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২২৪ টন সোনার বার কেনে। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে তারা আরো ১০৬ টন সোনা কিনেছে। ব্যাংক অব রাশিয়া এ কৌশলকে মার্কিন ডলার থেকে দেশের মজুদ বহুমুখী করণের অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।
দেশের দু’তৃতীয়াংশ সোনা মস্কোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভান্ডারে রক্ষিত আছে বলে খবরে বলা হয়েছে। বাকি সোনা দেশের উত্তরাঞ্চলীয় রাজধানী সেন্ট পিটার্সবার্গ এবং উরাল অঞ্চলের শহর ইয়েকাতেরিনবার্গে রক্ষিত আছে। রাশিয়ার সব সোনা ১শ’ গ্রাম থেকে ১৪ কেজি ওজনের বার হিসেবে রাখা আছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
সেই জারের আমল থেকেই সোনার প্রতি রাশিয়ার আকর্ষণের কথা সুবিদিত। সে সময় জাতীয় মুদ্রাকে শক্তিশালী করতে এ মূল্যবান ধাতু ব্যবহৃত হত। ১৮৯৪ সালে রুশ সাম্রাজ্যের স্বর্ণ মজুদের পরিমাণ ১৪শ’ টনে পৌঁছে। ১৯১৪ সাল পর্যন্ত এ মজুদ ছিল বিশ্বে বৃহত্তম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর রুশ বিপ্লবের কারণে বিদেশী ব্যাংকে ঋণ পরিশোধ করার জন্য সোনার মজুদ গুরুত্বপূর্ণ পরিমাণে হ্রাস পায়। এভাবে জার আমলের সোনার মজুদ বলশেভিক আমলের খাদ্য ও শিল্প সরঞ্জাম ক্রয় বাবদ ব্যয় হয়ে যায়। ১৯২৮ সালে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে মাত্র ১৫০ টন সোনা অবশিষ্ট ছিল।
সোভিয়েত নেতা স্ট্যালিন মনে করতেন যে মূল্যবান ধাতু সোনা দেশের দ্রুত শিল্পায়নের অন্যতম স্তম্ভ। তার আমলে সোনার মজুদ ২ হাজার ৫শ’টনে পৌঁছে। কিন্তু মজুদ কমতে কমতে ১৯৯১ সালে মাত্র ২৯০ টনে এসে দাঁড়ায়।
রাশিয়ার স্বর্ণখনিগুলো প্রধানত মাগাদান দূরপ্রাচ্য অঞ্চলে অবস্থিত। এছাড়া চুকোৎকা, ইয়াকুতিয়া, ইর্খুটস্ক ও আমুর অঞ্চল, জাবেকালস্কি ক্রাই, পাশাপাশি স্ভার্দলভস্ক ও চেলিয়বিনস্ক এবং বুরাইয়াতিয়া ও বাশখোরতোস্তান প্রজাতন্ত্রেও এ মূল্যবান ধাতু পাওয়া যায়।
যে সব বৃহৎ কোম্পানি রাশিয়ায় সোনা সংগ্রহে নিয়োজিত আছে তার একটি হল পলিয়াস গোল্ড। বিশ্বব্যাপী শীর্ষ স্বর্ণ উৎপাদনকারী ১০টি কোম্পানির একটি, টরন্টো ভিত্তিক কিনরস গোল্ড কর্পোরেশন ও রাশিয়ার খনি শ্রমিকদের পলিমেটাল ইন্টারন্যাশনাল, ইউজিসি গ্রুপ ও জিভি গোল্ড।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশাল মজুদ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ