পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ওই দিনই তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যাক্ত কারাগারে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত তিনি সেখানেই রয়েছেন। তার কারাবাসের ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে। খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর থেকেই তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন, অনশন কর্মসূচি, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান, গণসাক্ষর অভিযান, বিভাগীয় সমাবেশ, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।
এর মধ্যে চলছে আইনি লড়াইও। কিন্তু কারাগারে নেয়ার পর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন সময় বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে পরিত্যাক্ত কারাগারের সেঁতসেঁতে একটি কক্ষে একা ৭৩ বছর বয়সী একজন বয়স্ক মহিলাকে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রতিদিনই তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। খালেদা জিয়া নিজেও তার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে তা কোর্টকে জানানোর জন্য তার ব্যক্তিগত আইনজীবীদের বলেছেন। এরইমধ্যে বেগম জিয়া গত ৫ জুন কারাগারে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানায় বিএনপি। দলের চেয়ারপারসনের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষ হাসপাতালে বা ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করাতে সরকারের কাছে দাবি জানায় বিএনপি। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে একাধিকবার দেখাও করেন দলের সিনিয়র নেতারা। কিন্তু বিএনপির দাবিকে সরকার গুরুত্ব দেয়নি।
তবে ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩ আগস্ট (শুক্রবার) বিকেলে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন তার বড় বোন সেলিমা ইসলাম ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক মামুন। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলার মধ্যে মাত্র তিনটির জামিন বাকি থাকলেও কবে নাগাদ তিনি মুক্তি পেতে পারেন তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না আইনজীবীরাও। তবে আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনের মাধ্যমেই তার মুক্তির পথ দেখছে বিএনপি। দলীয় নেত্রীর মুক্তির দাবিতে দীর্ঘ এই সময়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীই পালন করে আসছে বিএনপিসহ এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। অহিংস কমর্স‚চিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে দলটি। এসব কর্মসূচীর মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন, গণস্বাক্ষর, স্মারকলিপি প্রদান, কালো পতাকা প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ, জনসভা, আলোচনাসভা এবং প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচী পালন করে বিএনপি। এরমধ্যে কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচীতে পুলিশ বাধা দিয়ে তা পন্ড করে দেয়। শুধু তাই নয় ঢাকায় একটি জনসভার জন্য ৪ বার অনুমতি চেয়েও তা পায়নি। সর্বশেষ গত ২০ জুলাই ঢাকার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা করেছে বিএনপি।
গত ছয় মাসে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে কারাগারে প্রচন্ড অসুস্থ খালেদা জিয়া। তাকে তার পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবিও জানিয়ে আসছে বিএনপি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। সর্বশেষ গত ৫ জুন দাঁড়ানো অবস্থায় হঠাৎ ঘুরে মাটিতে পড়ে যান খালেদা জিয়া। সত্তরোর্ধ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার এখনো তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এজন্য পরিবারের সদস্য, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী নির্বাচন একতরফা করতে সম্প‚র্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মিথ্যা ও জাল নথি তৈরি করে সাজানো মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে তার আগের চেয়ে অসুস্থতা বেড়েছে। কিন্তু তার সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না, যা অমানবিক ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। দেশনেত্রীর চিকিৎসক ও স্বজনেরা জানিয়েছেন খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ, মোটেই ভালো কাটছেনা। তিনি ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেননা। ঘুমাতেও কষ্ট হয়। আমরা বারবার বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছি। নেত্রীর মুক্তির জন্য কর্মসূচি অব্যাহত আছে। শিগগিরই নতুন কর্মসূচি আসবে। এদিকে বন্দিত্ব ঘোচাতে বিএনপির আইনজীবীরা আদালতের বারান্দায় হন্যে হয়ে দৌড়ালেও শেষসীমা খুঁজে পাচ্ছেন না। একটি মামলায় জামিন হলে, অন্য মামলা মুক্তির পথে বাদ সাধছে। আর এভাবেই পেরিয়ে গেছে ছয় মাস। খালেদা জিয়া সহসা মুক্তি পাবেন কি না তা-ও অনিশ্চিত।
খালেদা জিয়ার মামলার সবের্শষ অবস্থা প্রসঙ্গে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া গতকাল বলেন, ৩৬টি মামলার মধ্যে ৩৩টি মামলায় জামিনে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনটি মামলার জামিন বাকি আছে। কবে নাগাদ খালেদা জিয়া মুক্তি পেতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় লাগবে। কারণ, কয়েকটি মামলার কিছু খুঁটিনাটি সমস্যা আছে। আমরা ফাইট করে যাচ্ছি। আদালত তো লম্বা সময় দেয়। সরকারও কনসার্ন। সবকিছুই নির্ভর করবে আদালতের ওপর। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে আইনজীবীদের সবার্ত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ ছয় মাসেও দলের চেয়ারপারসন মুক্তি না পাওয়ায় আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তির আশা অনেকটা ছেড়ে দিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। দলের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে তৃণম‚ল নেতারাও এখন বলছেন, এ সরকার যতদিন ক্ষমতায় আছে, ততদিন আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া মুক্ত হতে পারবেন না। তাকে মুক্ত করতে রাজপথে নামতে হবে। তাদের ভাষায়, যেহেতু রাজনৈতিক কারণে তিনি জেলে আছেন, তাই তাকে রাজনৈতিকভাবেই মুক্ত করতে হবে। কঠোর আন্দোলন করতে হবে। তা না হলে সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবেনা। আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচী সামনে রেখে এরইমধ্যে গত ৩ ও ৪ আগস্ট তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মতবিনিময় করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। তারও আগে ২২ জুলাই নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরনো ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে অধিকাংশ সময় চুপচাপই থাকেন খালেদা জিয়া। ইবাদত বন্দেগি করার পাশাপাশি বই ও পত্রিকা পড়ে সময় কাটান তিনি। এছাড়া গৃহকর্মী ফাতেমাসহ সেখানে দায়িত্বরত কারা মহিলা স্টাফদের সঙ্গেও আলাপচারিতায় বেশির ভাগ সময় কাটে বেগম জিয়ার।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।