Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুজিবনগর দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী নোংরামি মুক্তচিন্তা নয়

প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩১ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নোংরামি পর্নচিন্তা, মুক্তচিন্তা নয়। মুক্তচিন্তা যদি পর্নচিন্তা হয়, নোংরা, জঘন্য চিন্তা হয়, তবে এটি মুক্তচিন্তা হতে পারে না। যে লেখা পড়লে ঘৃণা হয়, লজ্জা হয়, তা মুক্তচিন্তা নয়। এটা বিকৃত মানসিকতা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা লেখা আছে। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ যার যার ধর্ম পালন করতে পারবে। ইসলাম ধর্মেও সেই কথা বলা আছে। আমিও ধর্ম মানি। কিন্তু যখন আমি যাকে মানি তার সম্পর্কে বিকৃত কথা লেখে, তখন আমার খারাপ লাগে। বিরোধিতা করে মানুষের ধর্ম-বিশ্বাসে আঘাত কাম্য নয়। আমি বিশ্বাস করি, যার যার ধর্ম তার তার। কাউকে আঘাত করে লিখলেই মুক্তচিন্তা হয়ে যায় না। যারা এসব লিখছেন, তারা রুচিবোধ রেখে লিখুক, তবে তো কোনো সমস্যাই নেই।
এসময় প্রধানমন্ত্রী ব্লগার হত্যাকা-ের বিরুদ্ধেও কথা বলেন। তিনি বলেন, যারা ইসলাম কায়েমের নামে মানুষকে সঠিক পথে আনার জন্য হত্যাকা- চালাচ্ছেন, তারা কোন অধিকারে হত্যা করছেন? খুন-খারাবি করার দায়িত্ব আল্লাহ কাউকে দেননি। আল্লাহ কাউকে বিচারের দায়িত্ব দিয়ে দেননি। গতকাল সোমবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় একথা বলেন শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ চক্রান্তে মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের সমালোচনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, যে ষড়যন্ত্রকারী, তাদের জন্য মায়াকান্না, আর যারা ভিকটিম তাদের জন্য কিচ্ছু না! সেটা মানবাধিকার হরণ না? আর সেটা নিয়ে তোলপাড়, সেটা নিয়ে অনেক কথা। এটা নিয়ে যারা বলে তাদেরও লজ্জা হওয়া উচিত।
শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ষড়যন্ত্রের জন্য যাদের নাম বিদেশের আদালতে উঠেছে, নিন্দা করা উচিত তাদের। অপরাধীকে গ্রেপ্তার করলে যদি অপরাধ করা হয়, তাহলে আমি মনে করি, এরা কোনোদিন কোনো হত্যার বিচারও চাইবে না। বিচার চাওয়াও তাদের উচিত নয়। কারণ কোনো অপরাধকে অপরাধ হিসেবেই তারা দেখবে না। তারা একজন সাংবাদিক দেখল, কিন্তু তার অপকর্মটা দেখল না। শফিক রেহমানকে পেশাগত কাজের কারণে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে স্পষ্ট করেন সরকারপ্রধান।
আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী, তাকে গ্রেপ্তার করলেই সেটা নাকি খুব নিন্দার হয়ে যায়। আর যারা ষড়যন্ত্র করল, তাদেরকে সমর্থন করা কেন? এ প্রশ্নটা জাতির কাছে আমরা রেখে গেলাম।
এফবিআইয়ের অফিসারকে ঘুষ দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে ষড়যন্ত্র করেছে। কার বিরুদ্ধে? জয়, তাকে অপহরণ করবে, তাকে হত্যা করবে। এটাও কিন্তু ধরা পড়েছে আমেরিকায়। তারাই এটা ধরেছে, তারাই বিচার করেছে। তাদেরই তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে, সেখানে তাদের অফিসার এবং সেই অফিসারকে ঘুষ প্রদান করেছে কে? সে বিএনপিরই নেতা।
কোর্টে তারা যেটা বলেছে, সেখানে বেরিয়ে এসেছে এই শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমানসহ তাদেরই নাম। এটা কিন্তু আমাদের করা নয়, এটা আমেরিকার কোর্টে প্রমাণিত। যারা এত বড় ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করা হলেও যাদের মনে এত ব্যথা জাগে বা যারা এটাকেই নিন্দা করে, অথচ ষড়যন্ত্র যে করল তার জন্য নিন্দা করে না। এটা কোন ধরনের সাংবাদিকতা আর কোন ধরনের স্বাধীনতা? এ প্রসঙ্গে পঁচাত্তরপরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার থেকে দায়মুক্তি দেওয়া নিয়ে নিজের বেদনার কথাও প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা
আমরা কেউ মারা গেলে বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে আমাদের কি কোনো মানবাধিকার নেই? আমাদের কি এদেশে বাঁচবার অধিকার নেই? ২১ বছর আমরা সেই যন্ত্রণায় ভুগেছি। ক্ষমতায় আসার পর সেই ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স বাতিল করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যেখানে অন্যায় দেখি, সেখানেই প্রতিকারের ব্যবস্থা নিই। অন্যায়কে আমরা কখনও প্রশ্রয় দিই না, দেব না।
বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই খালেদা জিয়ার ছেলেরা টাকা পাচার করেছে বিদেশে। এটা আমাদের বলা লাগেনি, আমেরিকার ফেডারেল কোর্টে তা প্রমাণিত হয়েছে, সিঙ্গাপুরের কোর্টে প্রমাণিত হয়েছে। আমরাই ওই লুণ্ঠিত টাকা ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছি।
শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে বলেন, হাজার কথা বলেও এতিমের টাকা মেরে খাওয়া লোকদের বিচার বিনষ্ট করা যাবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেমন হচ্ছে, তেমনিভাবে তাদেরও হবে। জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়েই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এখানে কোনো বাধা আমরা মানব না।
আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী মুজিবনগর সরকারের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তারপর ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদাররা, গ্রেফতার করে বঙ্গবন্ধুকে, তার আগে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ওপর ভিত্তি করেই একাত্তরের এপ্রিলে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তারপর ২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদাররা, গ্রেফতার করে বঙ্গবন্ধুকে, তার আগে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলেও তার ভাষণের ওপর ভিত্তি করে এবং তার নির্দেশনামতো এপ্রিলের ১০ তারিখে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। এরপর ১৭ এপ্রিল সে সরকার শপথ নেয়। এই সরকার গঠনের মধ্য দিয়েই বিশ্বে স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাঙালি।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, মহানগর নেতা এ কে এম রহমত উল্লাহ, আবুল হাসনাত, শাহে আলম মুরাদ ও সাদেক খান প্রমুখ। সভায় সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুজিবনগর দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী নোংরামি মুক্তচিন্তা নয়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ