Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে

প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব রিপোর্ট : ছিনতাই, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, দখল, টেন্ডারবাজি ও একাধিক হত্যামামলাসহ ডজন ডজন মামলার আসামি ও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারে ব্যস্ত থাকায় এখন সন্ত্রাসী গ্রেফতারে কোনো বিশেষ অভিযানও নেই। অথচ বিএনপি, জামায়াতসহ সরকারী দলের ভিন্ন মতাবলম্বী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নির্বিচারে গ্রেফতার করার অভিযোগ রয়েছে। কুমিল্লার তনু হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়নি। এমনকি খোদ রাজধানীতেই দাঁড়িয়ে বেড়াছে দাগী ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীরা। তাদের গ্রেফতারে নেই কোনো মাথাব্যথা। ফলে দিন দিন বেপেরোয়া হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীরা। রাজধানী এবং এর আশপাশ এলাকাসহ গাজীপুর, সাভার, চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। গাজীপুরের মশিউর রহমান মশি হত্যা ও অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি হলেও তার টিকিটি ছুঁতে পারেনি র‌্যাব-পুলিশ। এলাকার ত্রাস হিসাবে পরিচিত সন্ত্রাসী মশি এখন দামি গাড়ি নিয়ে গাজীপুর ও রাজধানীসহ ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর খাতায় সে পলাতক। বন্দরনগরীর সদরঘাট এলাকার সাহেবপাড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মো. ইদ্রিস (২৮) নামে এক যুবক খুন হয় গত ৮ এপ্রিল। ওই খুনের প্রধান অভিযুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর এখনও ধরা পড়েনি। ২০১৩ সালে ইদ্রিসের চাচাতো ভাই আবদুল গণিকেও একইভাবে খুন করে জাহাঙ্গীরের সহযোগীরা। একের পর এক খুনের পরও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশ বলছে, তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিহত ইদ্রিসের স্বজনদের অভিযোগ, আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে পুলিশের নাকের ডগায়। জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগীদের মতো মহানগরীতে খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজিতে জড়িত সন্ত্রাসীদের বেশিরভাগই ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের বেপরোয়া তা-বে এলাকায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। অথচ এসব সন্ত্রাসীদের ধরতে নেই কোনো বিশেষ অভিযান। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সন্ত্রাসীদেরও জার্সি বদল হয়েছে। পেশাদার অপরাধী তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরাও এখন সরকারি দলে। আর এ কারণে তাদের ধরতে পারে না পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও মিডিয়া শাখার প্রধান উপপুলিশ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেছেন, পুলিশের বিশেষ অভিযান বন্ধ হয়নি। চলতি মাসেও পহেলা বৈশাখের আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছিল। এ অভিযানে বেশ কিছু সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হযেছে। আসামিতেও এ ধরনের অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানান।
ঢাকা মহানগরীতে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে পড়ছে। এদের গ্রেফতার না করায় প্রকাশ্যেই ঘুরছে। মিরপুরের একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনীর তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মিরপুরের শাহদাত বাহিনীর নামে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের মধ্যে বিদ্যুৎ, কাওসার, আমান, জামাই শাহীন, এমরান, উত্তম, মোক্তার, রানা, সোহেল, ময়না, ফিরোজ আসলাম, নান্টু, ভাগিনা জুয়েল এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ করেই যাচ্ছে। পুলিশের খাতায় এরা পলাতক। কিন্ত এলাকাবাসী বলছেন, এরা আছে বহাল তবিয়তে।
গাজীপুরের ত্রাস মশি ধরাছোঁয়ার বাইরে
স্থানীয় সূত্র জানায়, গাজীপুরের ত্রাস মশিউর রহমান মশি একাধিক মামলার আসামি হলেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে কাগজে-কলমে পলাতক থাকলেও এক দিনের জন্যও পুলিশ ও র‌্যাব তার বাড়িতে হানা দেয়নি। র‌্যাবের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় চার্জশিটুভুক্ত হলেও ওই সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে ঘুরছে। হত্যা এবং অস্ত্রসহ একাধিক মামলার আসামি এই সন্ত্রাসীর নাম মশিউর রহমান মশি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতারে রহস্যজনক কারণে নীরব থাকায় মামলার হুলিয়া মাথায় নিয়েও একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর কাছে আতঙ্কের নাম হলো ওই সন্ত্রাসী মশি।
গত বছর বৈশাখের দিন গাজীপুর এলাকার সাইনবোর্ডে চাঁদাবাজির জন্য ব্যবসায়ীদের ওপর প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় মশি ও তার বাহিনী। এতে বেশ ক’জন গুলিবিদ্ধ হন এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর এলোপাতাড়ি কোপে বেশ কজন ব্যবসায়ীও আহত হন। এ ঘটনায়ও জয়দেবপুর থানায় মামলা হলেও সেটি মশি ও তার বাহিনীর হুমকির মুখে টেকানো যায়নি। মামলার বাদী জলিল খন্দকার জানিয়েছেন, সন্ত্রাসী মশি এবং তার বাহিনীর হুমকির মুখে তিনি মামলাটি তুলে নিতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, অস্ত্র মামলা মাথায় নিয়ে মশি প্রকাশ্যে ঘুরছে। মামলা না তুললে তাকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত অনোন্যপায় হয়ে তিনি মামলা তুলে নেন।
জানা গেছে, র‌্যাব-১-এর একটি দল গোপন সংবাদের খবর পেয়ে ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর মশির গোপন আস্তানা গাজীপুর জেলার বোর্ডবাজার এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে তার অন্যতম সহযোগী জুয়েলকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করে ৩টি পিস্তল, ৪টি পিস্তলের ম্যাগজিন, ৪০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ৬৩ রাউন্ড শটগানের গুলি, ৫০ রাউন্ড শটগানের গুলির খোসা, ১ রাউন্ড থ্রি নট থ্রি রাইফেলের গুলি, ১টি শটগান, ৪ লাখ ৪৮ হাজার নগদ টাকা এবং একটি ল্যাপটপ ও মোটরসাইকেল। এ সময় গ্রেফতারকৃত জুয়েল জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের কাছে অস্ত্র, গুলি এবং টাকাগুলো সন্ত্রাসী মশির বলে স্বীকার করে। ওই সময় র‌্যাবের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কালিয়াকৈরে নিটল টাটা গার্মেন্টসে সোহেল হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মশি।
র‌্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, অস্ত্র মামলার পর বেশ কিছুদিন মশি পার্শ্ববর্তী একটি দেশে পলাতক ছিল। সম্প্রতি সে আবারও দেশে ফিরে এসেছে। দেশে ফিরেই রাজধানী এবং গাজীপুর জেলাসহ আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকা- শুরু করেছে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর খিলক্ষেত থানায়ও মামলা রয়েছে। হত্যা চেষ্টার অভিযোগে জনৈক রানার মা এই মামলাটি দায়ের করেন। এছাড়া আরও একাধিক মামলা এবং জিডি রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মামুন ম-ল হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে মশির বিরুদ্ধে জিডিও করেছেন।
র‌্যাব জানিয়েছে, মশিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে ধূর্ত হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না।
মামলার এজাহারে দেখা যায়, র‌্যাবের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় মশিকে অভিযোগভুক্ত করে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। জামিন না নিলেও রাজনৈতিক আশ্রয়ে মশি প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। নাম প্রকাশে গাজীপুর এবং উত্তরা এলাকার একজন স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান, মশি সব সময় অত্যাধুনিক গাড়িতে চলাফেরা করে। তার একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী গ্রুপ রয়েছে এদের সাথে নিয়ে সে চলাফেরা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে দেখেও না দেখার ভান করে। মনে হচ্ছে মশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করেই চলাফেরা করে। তিনি আরও জানান, মশি গ্রেফতার না হওয়ায় সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
মশির বিরুদ্ধে এর বাইরেও জামাল খান নামে এক ব্যবসায়ী হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা (নং-৭৬) রয়েছে। মামলায় চাঁদা না দেয়ায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে ভাংচুর এবং ম্যানেজার সোহেলকে কোপানোর অভিযোগ করা হয়েছে।
র‌্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারি দলের পরিচয়ে মশি অস্ত্রের লাইসেন্সও নিয়েছিল। তবে মশি বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারও করছে। জেলার সদর হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষের উপর গুলি চালানো এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সামনে প্রতিপক্ষের উপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালাতেও পিছপা হয়নি মশি ও তার বাহিনী। এর বাইরে এদের বিরুদ্ধে ছোটখাটো অভিযোগের অন্ত নেই। কিন্তু পুলিশ প্রতিটি ঘটনায়ই রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করে। কালিয়াকৈরেও তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ দুটি মামলা রয়েছে। র‌্যাবের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মশি ঢাকা, গাজীপুর ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, অস্ত্র ব্যবসা এবং জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে। এভাবে সে অল্প কয়েক দিনেই বিপুল বিত্তবৈভবের মালিকও হয়। দুটি আলিশান বাড়ি ছাড়াও চলাচলের জন্য রয়েছে ২টি গাড়ি।
জানা গেছে, ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে ওই তালিকার সঙ্গে আরো কিছু নাম জুড়ে দিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪২ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম সংসদে প্রকাশ করেন। নতুন সদস্যদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা না হলেও তাদের মধ্যে ১০ জন গ্রেপ্তার, ১০ জন পলাতক এবং একজন নিখোঁজ থাকার তথ্য দেন। বাকি ২১ জনের বিস্তারিত পরিচয় এবং অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই তালিকা নিয়েও সেই সময় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে মোস্ট ওয়ানটেড সন্ত্রাসীদের কোনো নামের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হয়নি।
পুলিশের একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পুলিশের স্বার্থেই প্রতি বছর মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ করা উচিত। এতে যে কোনো ধরনের অপরাধের পর অপরাধী সম্পর্কে একটা আনুমানিক ধারণা পাওয়া যায়। দলীয় পরিচয় এ ক্ষেত্রে বিবেচনায় আসা উচিত নয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করা হয়। তাদের মধ্যে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে ৮ জন। মারা গেছে চারজন। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছে দুজন। পলাতক ৯ জন। পলাতকদের মধ্যে মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন শুভ্র ভারতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে।
বর্তমানে ভারতে পলাতক শাহাদাতের বন্ধু খোরশেদের বাড়ি কলাবাগান এলাকায়। খোরশেদ ভাসমান সন্ত্রাসী। বিভিন্ন অপরাধে যৌথ নেতৃত্ব দেওয়ায় এই গ্রুপটির নাম হয়ে যায় খোরশেদ-শাহাদাত বাহিনী। শাহাদাত বাহিনীর এই সদস্যদের সবার বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। পল্লবীর সেকশন ৭ ও ১১ নম্বর এলাকায় আরেকটি গ্রুপ শাহাদাতের সহযোগী হিসেবে সক্রিয়। এর নাম ফারুক আহমেদ হেলাল। লিটন, আসাদ, জহির, আসলামের হত্যাসহ প্রায় ২০টি মামলার আসামি ওই হেলাল পুলিশের খাতায় পলাতক। চুক্তিতে খুন করাই তার কাজ। হেলালের সহযোগী দুলু, নান্ন- বর্তমানে চাঁদাবাজি করে মিল্ক ভিটা, দুয়ারীপাড়া এলাকায়। তার অপর সহযোগী নাজুর আশ্রয়ে বিভিন্ন খুনখারাবিতে জড়িত টুটুল, চুন্নু, বুক্কো সুমন। বর্তমানে দুলু, নান্নু, স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্লাার চাচা আমির হোসেন মোল্লা ও মনির হোসেন মোল্লার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করছে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে ইলিয়াস মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাদের চেনেন না বলে জানান। তবে অন্য একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এরা ৯২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী। যুবলীগ মহানগর সহসভাপতি তছলিম চৌধুরী, বিএনপির নেতা নবী সোলায়মান, এল রহমান, পিচ্চি ফারুক, থানা ছাত্রলীগ নেতা সায়েম, কামরুল, মিজান, কাইল্যা লিটন, কালা মোস্তফা, সুন্দর বাদশাহ, লাম্বু সেলিম, তেজতুরী বাজারের বাবলু, রাজাবাজারের ভুট্টা, হিরু ও পাকিস্তানি সোহেলের সঙ্গে আশিকের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা যায়। পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় স্বপন, কালাম, ভুয়া সাংবাদিক সেলিম, ঢালী বাড়ির মাসুদ এবং পান্থপথ এলাকায় তরকারি রফিক, ফারুক, ইলেকট্রিক মাসুদ এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মধ্যে ভাসানটেক, মানিকদী, কচুক্ষেত সন্ত্রাসীদের আখড়া। পল্লবী থানার বাউনিয়া বাঁধ, বিহারি কলোনি এলাকায়ও অপরাধ কার্যক্রম বাড়ছে। সবুজবাগ ও খিলগাঁও থানা এলাকার মান্ডা, ঝিল প্রজেক্ট এলাকা, নন্দীপাড়া, মানিকনগর, ত্রিমোহনী, নাসিরাবাদ এলাকায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ক্রমশ বাড়ছে। এ ছাড়া মতিঝিল থানা এলাকায় এজিবি কলোনি, শাহজাহানপুর, ফকিরাপুল, রেলওয়ে কলোনি, গোপীবাগ, টিটিপাড়া, রামপুরা থানার বনশ্রী, বাড্ডা থানা এলাকার নূরের চালা, বেরাইদ, ছোলমাইদ, শাহজাদপুর, খিলক্ষেত থানার নামাপাড়া, কুড়িল, নিকুঞ্জ এলাকা, উত্তরা থানার উত্তরা, উত্তরখান ও দক্ষিণখান থানা এলাকার মৈনারটেক, আটিপাড়া এলাকার পলাতক সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে এখন প্রকাশ্যেই বীর দর্পে ঘুরা ফেরা করছে।
চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের খাতায় অনেক অপরাধীর নাম নেই। একসময় শীর্ষ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজ, অপহরণকারী ও ছিনতাইকারীদের আলাদা আলাদা তালিকা ছিল। কয়েকদিন পরপর ওই তালিকা ধরে চলতো অভিযান। গ্রেফতারের পর এসব অপরাধীরা ফের জামিনে বের হয়ে আসছে কিনা সে বিষয়টিও মনিটর করা হতো নগর পুলিশের পক্ষ থেকে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকে জামিন পেয়ে কারাফটক পার হতে পারেনি। তার আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে এসব অপরাধীরা। অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের বন্দি রাখা হয়েছে কারাগারে। এতে সুফলও মিলেছে, অপরাধও কমেছে। সাম্প্রতিককালে নগর পুলিশের থানাভিত্তিক কোন সন্ত্রাসী তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি। আর এ কারণে কোথাও কোন অপরাধের ঘটনা ঘটলে পুলিশকে অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়তে হচ্ছে।
জানা যায়, সন্ত্রাসীরা দলবদল করে সরকারি শিবিরে ঢুকে যাওয়ায় বেকায়দায় পুলিশ। প্রকাশ্যে অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে তারা। সিআরবিতে রেলওয়ের টেন্ডারবাজি নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের দুই গ্রুপের প্রচ- বন্দুকযুদ্ধে এক শিশুসহ ২ জন মারা যায়। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের প্রায় সবাই এখন কারাগারের বাইরে। মার্চ মাসে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নগরীর সদরঘাট থানার কামাল গেইটে এক ঝুট ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই খুনের ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নামধারী বেশ কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে আসামি করে মামলা হয়। তাদের কাউকে পুলিশ ধরতে পারেনি। নগরীর বায়েজিদ এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান বাদলকে। ওই ঘটনায় যুবলীগ ক্যাডার সাদ্দাম ধরা পড়েছে। কিন্ত তার সহযোগীরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরছে। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের কোন্দলে খুন হয় মেধাবী ছাত্র নাসিম আহমেদ সোহেল। ওই ঘটনায় ১৬ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। সিসিটিভির ফুটেজে সোহেলকে কারা কুপিয়ে হত্যা করেছে তার ছবিও পুলিশের হাতে। কিন্ত এসব আসামিরাও ধরা পড়ছে না। ছাত্রলীগের সমাবেশে প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সোহেল হত্যার বিচারের দাবিতে ছাত্রলীগের সমাবেশ চলাকালে প্রকাশ্যে গুলির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থানার ওসি জানায়, গুলি হয়েছে ঠিক, তবে এত মানুষের ভিড়ে কারা গুলি ছুঁড়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর এ কারণে কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি। সরকারী দলের দলীয় কোন্দলে খুনোখুনির পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগের নামে মহাগরজুড়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা থাকলেও পুলিশ তাদের ধরছে না। অভিযোগ রয়েছে, অপরাধীরা সরকারি দলের নেতাদের আশ্রয়ে থাকায় পুলিশ তাদের গ্রেফতারে সাহস পাচ্ছে না। মহানগরীর মতো জেলার বিভিন্ন উপজেলাতেও সন্ত্রাসীদের দাপট চলছে। খুনোখুনি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি চলছে সমানতালে। সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। পুলিশের ভূমিকায় মানুষ রীতিমতো হতাশ।
২ শতাধিক গডফাদার ধরাছোঁয়ার বাইরে
খুলনা থেকে আবু হেনা মুক্তি জানান, কেএমপি এলাকার ৭টি থানাসহ বৃহত্তর খুলনার ২৩টি থানায় ২শতাধিক পলাতক বিভিন্ন মেয়াদের সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও থানা পুলিশ প্রভাবশালী রাজনৈতিক গডফাদারদের ক্ষমতার দাপটের কারণে অনেক সময় তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারছে না। এসব দুর্ধর্ষ সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের খুলনার প্রভাবশালী রাজনীতিকদের সাথে, তাদের মিছিলে, বাড়ীতে, এমনকি তাদের কার্যালয়েও প্রকাশ্য ভাবে চলাফেরা করতে দেখা যেতো।
সূত্রমতে, আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নে পুলিশ, ও র‌্যাব ব্যাপক অভিযান চালালেও খুলনা মহানগরী ও বৃহত্তর খুলনার হত্যা, বোমাবাজীসহ বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ ২ শতাধিক আসামি ও কথিত গডফাদাররা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চরমপন্থী রয়েছে। যাদের কোনো হদিস করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভাড়াটে ও ভাসমান এ সকল আসামিদের অধিকাংশই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে সীমান্তপথে ভারত পাড়ি দিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আবার কেউ কেউ ইতিমধ্যে দেশে ফিরতে শুরু করেছে এমন আভাসও দিচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থা। এছাড়া খুলনার কয়রার ইলিয়াস বাহিনীর প্রধান ইলিয়াস ২০-২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এবং মাথায় হত্যা ডাকাতি অপহরণ সহ সুন্দরবনে ডাকাতি করছে। এছাড়া কয়রার জোনাব আলী ডাকাত, রামপালের কাদের মাষ্টার বাহিনীর প্রধান কাদের, সোহাগ, মংলার রাজু ডাকাতের চাচাতো ভাই নোয়া ডাকাত সহ গোয়ান্দা ও পুলিশের তালিকাভূক্ত ৩০-৪০জন সন্ত্রাসী এখন সুন্দরবন চষে বেড়াচ্ছে। খুলনা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের গডফাদারদের সাথে রয়েছে এদের যোগাযোগ।
সাভার প্রতিনিধি জানান, রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাভার ও আশুলিয়া এলাকা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এখানে একের পর এক নৃশংস হত্যাকা- ঘটছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে পাওয়া যাচ্ছে লাশ। জনপদটি যেন একটি কিলিং জোন। হত্যাকান্ডগুলো ঘটছে নানা কারণে। কখনও প্রেম করার অপরাধে, কখনও ধর্ষণ শেষে, আবার কখনও পূর্বশত্রুতা কিংবা জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে। হত্যা করা হ”েছ গুলি করে অথবা নৃশংসভাবে কুপিয়ে। পারিপারিক কলহের জের ধরে গৃহবধূকে হত্যার পর ঘটনা অন্য খাতে প্রবাহিত করতে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলেও প্রচার করা হচ্ছে। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় অনেকে পিটিয়ে মারছে সন্ত্রাসী, চোর, ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের। আবার অনেক হত্যাকান্ডের কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না। একের পর এক এসব হত্যাকা-ে ভীতসন্ত্রস্ত, আতঙ্কিত এলাকাবাসী।
গত বুধবার সাভারে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে স্থানীয় বিএনপির এক নেতার ছেলে রেজাউল করিম রাজাকে দিনে দুপুরে সাভার থানা রোডে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিন মিয়া বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় সাভার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি এরশাদুর রহমানসহ ১২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাভার পৌর যুবলীগের সাবেক আহব্বায়ক মজিদুর রহমান মজিদ, এক নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম ও যুবলীগ কর্মী হামজাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।তবে ঘটনার মুল হুতা পৌরসভার এক নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি এরশাদুর রহমান ক্ষমতাসীন দলের সার্পোটে থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না।
জানা গেছে, পুলিশের কাছে বিএনপি-জামায়াতের পিকেটার এবং স্থানীয় নেতাদের নামের একটি তালিকা রয়েছে। কয়েকজন ছিঁচকে চোর এবং মাস্তানের তালিকাও রয়েছে। তবে সন্ত্রাসী হিসেবে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নামই এখন বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা থাকায় তারাই এখন পুলিশের খাতায় সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত। তবে পেশাদার সন্ত্রাসীদের হালনাগাদ কোনো তালিকা তাদের কাছে নেই। এ কারণে কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর বিপাকে পড়তে হচ্ছে পুলিশকে। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন কয়েকটি থানার অফিসার ইনচার্জ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্ত্রাসীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ