Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি পরে নির্বাচন

তৃণমূল নেতাদের মত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০১ এএম

সবার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এরপরই নির্বাচন নিয়ে ভাবতে বলেছেন দলটির তৃণমূলের নেতারা। তারা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এবং বর্তমান সংসদ বহাল রেখে ও এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে গেলে তা হবে আত্মঘাতী। এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে গেলে পরিণতি কি হবে তা খুলনা, গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশালসহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোই দেখিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। গতকাল (শনিবার) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো তৃণমূল নেতাদের সাথে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এসব কথা তুলে ধরেন তারা। বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে বিএনপির ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগের নেতারা জোরালো মতামত তুলে ধরেছেন।
এসব বিভাগের তৃণমূল নেতারা বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন কি হয়? তাই আগামী নির্বাচন এই সরকার, নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনের চিন্তা না করে আগে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। তার বলেন, মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী কারাগারে রয়েছেন। আগে তাকে মুক্ত করতে হবে। মুক্তি পাওয়ার পর নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি কঠিন মন্তব্য করে দেশের বিভিন্ন জেলার নেতার বলেন, আইনি লড়াইয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব হলে এতোদিনে তিনি মুক্ত হয়ে যেতেন। তাই আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি কঠোর আন্দোলন প্রয়োজন। বেগম জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশের সংগঠন গুছিয়ে ঈদুল আজহার পরে শর্টটার্মে ‘ডু অর ডাই’ আন্দোলনে যেতে নীতি-নির্ধারকদের পরামর্শ দিয়েছেন তৃণম‚লের নেতারা। এছাড়া সিলেটসহ সাম্প্রতিক সিটি নির্বাচনগুলোতে জোট শরিক জামায়াতের ভূমিকায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা। জামায়াত ভবিষ্যতে সংযত হয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত মেনে না চললে তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রস্তাবও অনেক নেতা। আন্দোলনে যাওয়ার আগে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে ইতিবাচক ইমেজসম্পন্ন রাজনৈতিক দলসহ বাম-ডান সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান তারা।
অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তুলে তৃণমূল নেতারা বলেন, বিতর্কিত ও অযোগ্যদের দিয়ে অধিকাংশ জেলার কমিটি করা হয়েছে। এখনই এসবের ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আন্দোলন ও জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে দলের করণীয় নির্ধারণে ছয় বিভাগের সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সাথে কেন্দ্রীয় বিএনপির এই বৈঠক হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সিলেট, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগ এবং বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঢাকা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। তবে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তৃণম‚ল নেতাদের প্রস্তাবগুলো নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে আলোচনা করে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। সেই সিদ্ধান্ত তৃণম‚ল নেতাদের পরে জানিয়ে দেয়া হবে। তবে বৈঠকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঈদুল আজহার পরে এবং জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে কঠোর আন্দোলনের ডাক আসতে পারে জানিয়ে বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের পক্ষ থেকে তৃণম‚লের নেতাদের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ। তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ৬টি সাংগঠনিক বিভাগের অধীনে থাকা প্রতিটি জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৫জন করে প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এর আগে শুক্রবার রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগের তৃণমূল নেতাদের সাথেও বৈঠক করে বিএনপি নেতারা। সেই বৈঠকেও তৃণমূলের নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তিকেই প্রথম এবং একমাত্র লক্ষ্য নির্ধারণ করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার আহ্বান জানান। একইসাথে জামায়াতের বিষয়ে ভাবার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে পরামর্শ দেন।
বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান বলেন, গনমাধ্যমে খবর দেখি ৩০০ আসনে ৯০০ প্রার্থী প্রস্তুত। তাহলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তাদেরকে যার যার এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হোক। তিনি বলেন, আন্দোলনের কথা শুনলে বিশেষ করে সাবেক মন্ত্রী-এমপি যারা বিদেশে পাড়ি জমান বা নিষ্ক্রিয় থাকেন। তাদেরকে পরিহার করতে হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয় না। ফরিদপুর জেলা সভাপতি শাহাজাদা মিয়া বলেন, যুবদল, ছাত্রদল ও সেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে ছাত্রলীগ নেতাদের ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাতে আন্দোলন না করা যায়। মুন্সিগঞ্জ জেলার সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, নেত্রীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। আন্দোলনের জন্য যে কোন নির্দেশ সফলে তারা প্রস্তুত আছেন।####



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়ার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ