Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

গোপনে কমিশনবসিয়ে বিক্রি হলো বগুড়ার নবাব প্যালেস

প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : সরকারিভাবে অধিগ্রহণের জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসন এবং প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের চিঠি চালাচালির মধ্যেই প্রায় সাড়ে ৩শ’ বছরের প্রাচীন বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাব প্যালেস কঠোর গোপনীয়তার মধ্যেই বিক্রি করে দিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মরহুম সৈয়দ মোহাম্মদ আলীর দুই ছেলে সৈয়দ হাম্মাদ আলী ও সৈয়দ হামদে আলী। এই বিক্রির ক্ষেত্রে তারা তাদের বৈমাত্রেয় ভাই মাহমুদ আলী এবং বোন মাহমুদা আলীকেও সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে বগুড়া শহরের সূত্রাপুর মৌজায় (দাগ নং ১৭০৮) ১ দশমিক ৫৫ একর জায়গাসহ প্যালেসটি বগুড়ার তিন শীর্ষ ব্যবসায়ীর নামে দলিল (দলিল নং ৪৩১৮) করে দিয়েছেন।
যে তিন ব্যবসায়ী এই প্যালেসটি কিনেছেন তারা হলেন, বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের পুত্র মাছুদার রহমান মিলন, একই সংস্থার সহ-সভাপতি শফিকুল হাসান জুয়েল এবং সাবেক সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল গফুর। পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র ও প্রধাণমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর পুত্র সৈয়দ হাম্মাদ আলী ও সৈয়দ হামদে আলী ঢাকায় অবস্থানের কারণে সেখানেই দলিল সম্পাদন করা হয়। এক আবেদনের প্রেক্ষিতে বগুড়া রেজিস্ট্রি অফিস থেকে নিয়োগ করা কমিশন গত ১৫ এপ্রিল শুক্রবার ঢাকায় সম্পাদিত দলিলে দুই ভাইয়ের স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। তবে ছুটির দিনে এই দলিলটি স্বাক্ষরিত হলেও অফিসিয়ালি রেজিস্ট্রি হয়েছে ১৭ এপ্রিল রোববার। দলিলে কৌশলগত ভাবে নওয়াব প্যালেসসহ ১ দশমিক ৫৫ একর জায়গার ক্রয় মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৭ হাজার টাকা উল্লেখ করা হলেও বিক্রেতারা মাত্র ১৬ কোটি টাকা পেয়েছেন বলে একটি নির্ভর যোগ্য সুত্রে জানা গেছে।
তবে ক্রেতারা তা অস্বীকার করে বলেছেন, ‘বিক্রেতারা দলিলে বর্ণিত টাকার অঙ্কই বুঝে পেয়েছেন। তারা বলেন, বিক্রেতাদের দরকার ছিল টাকা আর আমাদের দরকার সম্পত্তি দুয়ে দুয়ে চার মিলে যাওয়ায় আমরা তা কিনেছি।’ প্যালেসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম খান প্যালেস বিক্রি হয়ে যাওয়ার খবরটি শুনেছেন কিন্তু এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি বলে সাংবাদিকদের তথ্য দিলেও তিনি এই বিক্রি প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং দলিল শনাক্তকারী বলে জানা গেছে। দলীলে সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন প্যালেসের কর্মী হালিম চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন এবং মন্জু খান।
এদিকে মোহাম্মদ আলীর অন্য পুত্র মাহমুদ আলীর নিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাজাহান আলী তালুকদার বলেছেন, ‘যেসব কারণে কমিশন বসিয়ে রাজধানী ঢাকায় গোপনে প্যালেস বিক্রির কাজটা সম্পাদন করা হয়েছে তা আইনত গ্রহণযোগ্য নয়। হয়তো ভবিষ্যতে এই বিক্রি অবৈধ ঘোষিত হলেও অবাক হব না।’ তিনি বলেন, প্যালেসটি বিক্রির ব্যাপারে বগুড়ায় চলমান আন্দোলনে সংহতি জানাতে কানাডা থেকেসম্প্রতি বগুড়ায় আসেন মোহাম্মদ আলীর ছোট ছেলে মাহমুদ আলী চৌধুরী। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঐতিহ্যবাহী নওয়াব প্যালেস ও মিউজিয়াম রক্ষায় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনার কথা উল্লেখ করে বলেন, মাহমুদ আলী ও তার বোন মাহমুদার অজান্তে কিভাবে নবাব প্যালেস বিক্রির দলীল সম্পাদন হয় তা আমার বোধগম্য নয়।
গতকাল বিকেলে ‘জাতীয় জাগরণ আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন বগুড়া জেলা প্রশাসককে এ ব্যাপারে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়, যেন এই প্যালেসের বিক্রেতা ক্রেতা ও দলিল সম্পাদনকারীদের একত্রিত করে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হোক কিভাবে এবং কেন চরম গোপনীয়তার মাধ্যমে এই বিক্রির দলীল সম্পাদন করা হল। বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফ উদ্দিন অবশ্য বলেন, ‘যদি সরকারি নির্দেশনা পাওয়া যায় তাহলে বিক্রি হলেও নওয়াব প্যালেসটিকে সরকারিভাবে অধিগ্রহণ সংরক্ষণ করা এখনও সম্ভব।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গোপনে কমিশনবসিয়ে বিক্রি হলো বগুড়ার নবাব প্যালেস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ