পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেলের সঙ্কট প্রকট হয়ে উঠেছে। নগরীর বিভিন্ন পাম্পে তেল না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বৈশাখের প্রচ- তাপদাহে সাধারণ যাত্রীরা ঘন্টার পর ঘন্টা বসেছিলেন বাসে, প্রাইভেট কারে। সরকার এই জনদুর্ভোগের জন্য তেলের কৃত্রিম সঙ্কট ও পেট্রোল পাম্প মালিকদের দায়ী করলেও গতকাল রোববার পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অথচ গত ১৩ এপ্রিল জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ পেট্রোল পাম্প মালিকদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, তেলের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির সাথে যারা জড়িত থাকবে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। কিন্তু বাস্তবতার সাথে তার ওই বক্তব্যর কোন মিল নেই। উল্টো উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির পক্ষ থেকে গতকালও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর অতিকথনকেই দায়ী করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন পাম্পে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেলের সঙ্কট দেখা গেছে। নগরীর যেসব পেট্রোল পাম্পে তেল বিক্রি হতে দেখা গেছে সেখানে বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেটকারসহ জ্বালানি তেল চালিত বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের ছিল লম্বা লাইন। অনেকেই তেলের জন্য এক পাম্প থেকে আরেক পাম্পে ছুটে গেছেন। তেল ছিল না অনেক পাম্পে। এতে করে জ্বালানি তেলের জন্য সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। এর শেষ কোথায় তার নিশ্চয়তা দিতে পারেননি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। ঢাকায় তেলের জন্য যে হাহাকার চলছে; এই পরিস্থিতি আরও চরমে পৌঁছেছে জেল শহরগুলোতে। লোকসানের আতঙ্কে অধিকাংশ পেট্রোল পাম্প মালিক তেল নেয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। ঢাকার বাইরের অধিকাংশ পেট্রোল পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে এমন একটি পাম্পের মালিক জানান, তেলের মূল্য কমার আগাম ঘোষণা আসার পর থেকে প্রতিদিনই আমরা অপেক্ষায় থাকি এই বুঝি দাম কমানোর নির্দেশনা জারি হলো। এই পেট্রোল পাম্প মালিকের মতে, কেউ কি জেনে শুনে লোকসানের বোঝা বহন করতে চায়। পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতিও তেল সঙ্কটে সৃষ্ট দুর্ভোগের দায়ভার নিতে নারাজ। তারা বলছেন, এই উদ্ভূত পরিস্থিতি আমরা সৃষ্টি করিনি। এটা তৈরি হয়েছে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। কাজেই এর সমাধানও তাকেই টানতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী আগামী ১০ দিনের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমতে পারে এমন ঘোষণা দেন। এরপরই বিপিসির তেল বিক্রিতে ভাটা পড়ে। দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় জ্বালানি তেলের কৃত্রিম সঙ্কট। এরপর গত ১৩ এপ্রিল জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন- অকটেন ও পেট্রোল প্রতি লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা এবং কেরোসিন ও ডিজেল লিটার প্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা কমতে পারে। তিনি জানান, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সময় অকটেন ও পেট্রোলের দাম তুলনামূলক বেশি বাড়ানো হয়েছিল। সে হিসাবে লিটার প্রতি অকটেন ও পেট্রোলে কমবে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম তুলনামূলক কম বাড়ানো হয়েছিল। এজন্য কেরোসিন ও ডিজেলে লিটার প্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা কমানো হবে।
নসরুল হামিদ আরও বলেছেন, কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে যেসব পেট্রোল পাম্প তেলের দাম বাড়িয়েছে এবং তেল বিক্রি বন্ধ রেখেছে তাদের চিহ্নিত করে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৩শ’ পেট্রোল পাম্প এ ধরনের কাজে সম্পৃক্ত আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এমন হুঁশিয়ারি দিলেও গতকাল পর্যন্ত কোন পেট্রোল পাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর এমন হুঙ্কারের জবাবে পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা নাজমুল হক ইনকিলাবকে বলেন, লোকসান করে তো তেল বিক্রি করা সম্ভব না। যেকোনো সময় তেলের দাম কমতে পারে। এখন যদি আমি তেল কিনে রাখি আর দাম কমে যায় তাহলে বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে হবে। জেনেশুনে কে লস করতে চায়। তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে দাম কমানো-বাড়ানোর বিষয়ে আগাম বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ তার দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি। আর আগাম তেলের দাম কত কমবে, কবে কমতে পারে-এমন বক্তব্য রেখে সঙ্কট সৃষ্টি করেছেন।
নাজমুল হক বলেন, আগে তেলের দাম কমানোর ঘোষণা আসতো মধ্যরাতে। কেউ জানতো না। এতে করে লাভ-লোকসান যাই হোক, মালিকরা তা মেনে নিতেন। কিন্তু এভাবে আগাম ঘোষণা দিয়ে লোকসানের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার কোন মানে হয়না। তিনি বলেন, প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের পরও তেলের দাম না কমায় মানুষ তেতো হয়ে গেছে। এই দুর্ভোগের জন্য মানুষ এখন আমাদের নয়, খোদ প্রতিমন্ত্রীকেই দায়ী করছেন। তিনি বলেন, দেশের সব পাম্পেই তেলের সঙ্কট চলছে-এটা ঠিক নয়। তবে কিছু কিছু পাম্পে সঙ্কট রয়েছে।
পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা দেশে ৫ হাজার পেট্রোল পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গে সবচেয়ে বেশি পেট্রোল পাম্প। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছে ১২শ’ এবং ঢাকা শহরে রয়েছে ১৫০টি পেট্রোল পাম্প।
এব্যাপারে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, গত কয়েক দিনে তাদের তেল বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। এমনটি কেন হচ্ছে জানতে চাইলে বিপিসি’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, লোকসানের আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত তেল কিনে রাখছেন না। শুধু দৈনিক হিসেবে তেল কিনে বিক্রি করছেন। এতে পরিবহন ব্যবহারকারীরা বিপাকে পড়ছেন। বিশেষ করে বিকেলের পর অনেক পাম্পেই জ্বালানি তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।