পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : অবশেষে অনুমোদনের জন্য শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে যাচ্ছে ‘তেজগাঁও মহাপরিকল্পনা’। তার অনুমতি পেলে শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে এবং তেজগাঁও হয়ে উঠবে অত্যাধুনিক বাণিজ্যিক কাম আবাসিক এলাকা।
গতকাল রোববার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এসব কথা জানান। এর আগে তিনি পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও ভূমি মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন।
মন্ত্রী বলেন, তেজগাঁও এলাকাটি হবে ‘বাণিজ্যিক কাম আবাসিক’ এলাকা। দীর্ঘদিন ধরে এটিকে পুরোপুরি বাণিজ্যিক এলাকা করার দাবি ছিল। এরপর আমরা একটি কমিটি করি, ৬টি সভা করি। এ মহাপরিকল্পনা শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবো। তিনি যদি ডেকে পাঠান, ব্যাখ্যা চান বা কোনো নির্দেশনা দেন, তাহলে সে অনুযায়ী কাজ করবো।
মন্ত্রী বলেন, বৈঠক করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানায় যে জায়গা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে নতুন করে সরকারি অত্যাধুনিক ভবন হবে। সরকারি পরিত্যক্ত জায়গাগুলোতে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন হবে। আর ব্যক্তি মালিকানায় যেসব জমি রয়েছে, সেখানে তারা বাণিজ্যিক ভবন করবেন। তবে পার্কিং, গার্বেজ, এটিপি ও ইউটিপি সুবিধাসহ যাবতীয় নিয়ম মেনে করতে হবে এসব ভবন।
তিনি বলেন, বিজি প্রেসের ১৬ থেকে ২০ বিঘা জায়গায় পাকিস্তান আমল থেকে এখনো পর্যন্ত কয়েকটি একতলা ভবন রয়েছে। সে জায়গাগুলোতে বড় ভবন তৈরি করে জায়গার উপযোগিতা বাড়ানো যেতে পারে। তারা চাইলে সরকার কাজগুলো করতে পারে। রাজধানীর কেন্দ্রে এতোটা জমি জুড়ে কেবল একতলা ভবন থাকার কোনো মানে হয় না।
মন্ত্রী বলেন, পুরো এলাকাজুড়ে ট্রাফিক সিস্টেম, পার্কিং- এর জন্য আলাদা ভবন থাকবে। সব ভবনের নিচে অবশ্যই পার্কিং-এর ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সব বিষয়ে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এমনিতে ওই এলাকায় ভারি কোনো শিল্পকেন্দ্র নেই। শ্রমঘন কোনো শিল্প সেখানে থাকবে না। কেমিক্যাল কারখানাগুলোকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। সব শিল্প-কারখানায় বাধ্যতামূলকভাবে ইটিপি করতে হবে, প্রতিদিন সকালেই তাদের স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট করতে হবে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকার কেন্দ্রস্থলে শিল্প এলাকা করার বিষয়টি আরও আগেই মন্ত্রিপরিষদে পাস হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে শিল্প মালিক যারা আছেন, তারা অফিস, কনভেনশন সেন্টারসহ বিভিন্ন কিছু এখানে নিয়ে আসবেন। তাদের সহযোগিতায় আমরা এলাকাটিকে একটি নান্দনিক এলাকায় পরিণত করবো। মন্ত্রী বলেন, এফডিসি বেশ খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এটিকে চলচ্চিত্রশিল্প হিসেবে ভালো অবস্থায় নেওয়া হবে।
এর আগে বৈঠকে একটি তথ্যচিত্রে দেখানো হয়, ১৯৪৮ সাল থেকে তেজগাঁওয়ের সরকারি ৩০০ একর এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ২০০ একর জায়গা বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু প্রচুর জমি সেভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না, কিছু খালি পড়ে আছে। ট্রাকস্ট্যান্ডসহ অন্যান্য কাজে আটকে আছে আরও কিছু জমি। এগুলোকে ঠিকভাবে কাজে লাগালে এ এলাকাটি কার্যকর হয়ে উঠবে।
যদি রেলওয়ে স্টেশনকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, এলাকাটি আরও শিল্পবান্ধব হবে। এখন যেভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে- তাতে থাকবে বহুতল ভবন, বাণিজ্যিক সেন্টার, সোলার অ্যানার্জি সিস্টেম। বাড়িগুলোর দূরত্ব থাকবে প্রয়োজনমতো, ভবনগুলো হবে বিল্ডিং কোড মেনে, গার্বেজ সিস্টেম থাকবে অত্যাধুনিক। সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব এলাকা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তারা জানান, ধানম-ি, গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক স্থাপনা যেগুলো সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো এখানে স্থানান্তরিত হতে পারে।
ট্রাফিক বিভাগের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোসলেহ উদ্দিন বলেন, তিব্বতসহ কয়েকটি ক্রসিং-এ খুব চাপ পড়বে। আমাদের যানজটের সবচেয়ে বড় কারণ, ইন্টারসেকশন ম্যানেজমেন্টের দুর্বলতা। তাই এখানে অন্তত এক বিঘা জায়গা জুড়ে একটি ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম করা গেলে পুরো ঢাকার যানজট ব্যবস্থাপনা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, একটি বহুতল ভবন করে গেস্ট পার্কিং-এর ব্যবস্থা করলেও যানজট কমবে। শিগগিরই আমরা রিমোর্ট কন্ট্রোল মনিটরিং থেকে সেন্ট্রাল কন্ট্রোল সিস্টেমে যাচ্ছি। একটি প্লট বরাদ্দ পেলে পুরো ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করা যাে ব।
বৈঠকে আলোচকরা বলেন, স্টেকহোল্ডারদের মতামতও এখানে জরুরি। এছাড়া আলাদা নীতিমালাটি সামনে রেখে কাজ করা হলে গন্তব্য সম্পর্কে ধারণা পাবেন সবাই।
কিছুদিন আগে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। তেজগাঁও এলাকা বাণিজ্যিক ও আবাসিকে রূপান্তর ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কিনা? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘তেজগাঁয়ের এ বিষয়টি ব্যতিক্রম। তেজগাঁও আগে শিল্প এলাকা ছিল, কিন্তু এটি এখন ঢাকার কেন্দ্রস্থলে চলে এসেছে। ঢাকার কেন্দ্রে কোনো শিল্প এলাকা থাকতে পারে না। সে জন্য এটাকে বাণিজ্যিক কাম আবাসিক করা হচ্ছে, এটা মন্ত্রিসভারই সিদ্ধান্ত।’
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৪৮ সালে ৫০০ একর জমি নিয়ে তেজগাঁও শিল্প এলাকা প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর ঢাকার শহর সম্প্রসারিত হওয়ায় তেজগাঁও শহরের মাঝখানে চলে এসেছে। তেজগাঁওয়ে মোট প্লটের সংখ্যা ৪০৫টি। এর মধ্যে সরকারি প্লট ১৬৬ ও বেসরকারি প্লট ২৩৯টি।
১৯৯৮ সালে তেজগাঁও-গুলশান সংযোগ সড়কের পার্শ্ববর্তী প্লট বাণিজ্যিক প্লটে রূপান্তর করা হয়। পরে পুরো তেজগাঁও বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় রূপান্তরের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করে। এ সময় স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতিকে প্রধান করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও একটি কমিটি গঠন করে। গৃহায়ণমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সব কমিটির প্রতিবেদন, সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে প্রস্তাব প্রস্তুত করে ২০১৪ সালে মন্ত্রিসভা বৈঠকে পাঠায়। প্রত্যেক কমিটিই রূপান্তর ফি বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে সমন্বয়ের সুপারিশ করেছে বলে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
সভায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউক চেয়ারম্যান জি এম জয়নাল আবেদীন ভূইয়া, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. রইছউল আলম মন্ডল, তেজগাঁও শিল্প মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মোহা. নূর আলী ও গোলাম মোস্তফা, ভূমি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদফতর, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, স্থাপত্য অধিদফতর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর, ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।