Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভিবাসীদের প্রতি মানবতা প্রদর্শনে পোপের আহ্বান

প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : পোপ ফ্রান্সিস শনিবার গ্রিসে এক গুরুত্বপূর্ণ সফরে গিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের খ্রিষ্টানদের মধ্যে নজিরবিহীন ঐক্য গড়ে তোলার অর্থোডক্স চার্চ নেতাদের আহ্বান সমর্থন করেন এবং অভিবাসীদের প্রতি অভিন্ন মানবতা প্রদর্শনের আবেদন জানান।
গ্রিক দ্বীপ লেসবসে শীর্ষ খ্রিষ্টান ধর্মগুরুর এ সফরকে প্রধানত সচেতনতা বৃদ্ধি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে যার লক্ষ্য সম্পূর্ণরূপে মানবিক ও সার্বজনীন, রাজনৈতিক নয়। তবুও তা প্রথমবারের মতো রাজনীতি জড়িত ইউরোপের অভিবাসী বিতর্কে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ঐতিহ্য উভয় সমন্বিত বিশ্ব খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বরকে যুক্ত করেছে।
লন্ডনের হেথ্রপ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্রিষ্টান ধর্মতত্ত্ব ও ইতিহাসের রিডার অ্যান্থনি ওম্যাহনি বলেন, তিনি (পোপ) বিশ্ব নেতাদের চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি একটি বৈশ্বিক সংলাপে যোগ দিয়েছেন, তিনি একটি রাজনৈতিক অবস্থান চাইছেন অথবা খ্রিষ্টীয় চিন্তাকে প্রকাশ্য ক্ষেত্রে আনতে চাইছেন। ক্ষুদ্রতর অর্থে হলেও তিনি রাজনৈতিক।
অর্থোডক্স ধর্মাধিকারী ও আধ্যাত্মিক নেতা বার্থলোমিউ প্রথম, গ্রিস আর্চবিশপ আইরোনিমাস দ্বিতীয়-এর প্রধান ও পোপ ফ্রান্সিস সকলেই এক যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন যাতে খ্রিষ্টানসহ ব্যক্তি ও সম্প্রদায় তাদের মাতৃভূমিতে থাকতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে বসবাসের মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করার সকল ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইউরোপ যেভাবে উদ্বাস্তু পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছে তার প্রতি সবচেয়ে কঠোরতম নিন্দা হিসেবে তিনি ১২ জন মুসলিম উদ্বাস্তুকে তার সাথে ভ্যাটিকান সিটিতে নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তার লেসবস সফর সমাপ্ত করেছেন।
ভ্যাটিকান এক বিবৃতিতে বলেছে, এর মধ্য দিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের উদ্বাস্তুদের স্বাগত জানাতে চেয়েছিলেন।
এদিন সকালের দিকে মরিয়া উদ্বাস্তু শিবিরে, যা এখন একটি বন্দিশিবির, গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাসের সাথে তিন ধর্মীয় নেতা অভিবাসী ও উদ্বাস্তুদের সাথে সাক্ষাৎ করেন ও কথা বলেন।
অনেকেই পোপের সাথে সাক্ষাৎকালে কেঁদে ফেলেন, কেউ কেউ ‘পোপ আমাদের আশা’, ‘ইয়াজিদি জনগণকে রক্ষা করুন’, ‘আমরাও মানুষ’ ও ‘স্বাগত পোপ ফ্রান্সিস’ লেখা ব্যানার প্রদর্শন করে।
দ্বীপের বন্দর রাজধানী মাইটিলিনে এক প্রার্থনা অনুষ্ঠানে পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের সবচেয়ে বেপরোয়া লোকদের প্রতি সংহতি ও মানবতা প্রদর্শনের জন্য গ্রিসের জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
বিতর্কিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন-তুরস্ক চুক্তির বাস্তবায়ন শুরুর পর পোপের এ সফর অনুষ্ঠিত হলো। এ চুক্তিতে ৪ এপ্রিলের পর গ্রিসে এসে পৌঁছানো কোনো অভিবাসী যদি সাফল্যজনকভাবে গ্রিসে আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন না করে তবে তাকে আটক ও তুরস্কে ফেরত পাঠানো হবে বলা হয়েছে। অর্থাৎ তাদের স্থান হবে ইউরোপ থেকে তুরস্কে।
পোপের এ সফর ‘অসার বিবেক’ ও ‘পার্থক্যহীন বিশ্বায়ন’ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ইউরোপের সমালোচনা করে ইতঃপূর্বে করা তার এ ধরনের মন্তব্যের ইতি ঘটিয়েছে যেগুলো কি না অভিবাসীদের একজন বলিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে তাকে চিহ্নিত করেছিল।
তিনি অভিবাসীর পরিবর্তে উদ্বাস্তু কথাটি ব্যবহার পছন্দ করেন। এটা হচ্ছে যারা সংঘাত থেকে পালিয়ে এসেছে ও যারা ইউরোপে উন্নত অর্থনৈতিক পরিবেশে থাকতে চায় তাদের মধ্যে ইইউ’র টানা ব্যবধান রেখার সরাসরি লংঘন।
পোপ ফ্রান্সিস বলেন, তিনি ইউরোপে প্রবেশকারী বিপুল সংখ্যক অভিবাসীর ব্যাপারে ইউরোপীয় উদ্বেগের কথা বুঝতে পারছেন। কিন্তু তাদের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
পোপের মনোভাবের প্রতিধ্বনি করে শনিবার বার্থোলোমিউ বলেন, আমি বলেছি যে, অর্থনৈতিক ও অঅর্থনৈতিক অভিবাসীদের মধ্যে পার্থক্য করা স্রষ্টার কাছে অপরাধ। যাহোক, তাদের বক্তব্য গ্রিক সীমান্তের উত্তরে ইউরোপের খ্রিষ্টান দেশগুলোর লোকজনের বক্তব্যের বিপরীত। মেসিডোনিয়া, হাঙ্গেরি ও অস্ট্রিয়া ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থীদের অবাধ প্রবেশ বন্ধ ও সে জন্য সীমান্তে প্রতিবন্ধকতা স্থাপন করেছে।
শনিবারের ঘটনা এককভাবে ধর্মীয় পর্যায়েও অত্যন্ত প্রতীকী। এটা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের চার্চের মধ্যে শত বছর ধরে চলে আসা বিরোধের অবসানেরও প্রতিনিধিত্ব করছে। ইউরোপে আগত অভিবাসীদের দুর্দশা সম্পর্কে অভিন্ন উদ্বেগ উভয়কে নৈকট্যে এনেছে।
ও’ম্যাহনি স্বীকার করেন যে, শনিবারে ক্যাথলিক ও অর্থোডক্স ঐতিহ্যের মধ্যকার ধর্মীয় ফারাক কমিয়ে আনা হচ্ছে সময়ের চিহ্ন যেখানে বৈশ্বিক বিষয়গুলো বৈশ্বিক কণ্ঠস্বরের জন্য অপরিহার্য। তিনি সিরিয়া সংঘাতে আরো ঐক্যবদ্ধ খ্রিষ্টান বার্তার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন যেখানে খ্রিষ্টানরা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে খ্রিষ্টান ধর্মের ভবিষ্যৎ উদ্বেগজনক। সিরিয়ায় এখনো সবচেয়ে বেশি অর্থোডক্স বিশ্বাসীদের বাস। তাদের ৪০ শতাংশই সংঘাতে পালিয়ে গেছে।
অন্যদিকে গ্রিসের লেসবস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কটের সম্মুখ সারির স্থান হয়ে আছে।
যখন সিরিয়ার সংঘাত অব্যাহত রয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সে সময় উদ্বাস্তুদের সংখ্যা শিগগিরই হ্রাস পাবে বলে মনে হয় না। সূত্র : ফ্রান্স ২৪।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিবাসীদের প্রতি মানবতা প্রদর্শনে পোপের আহ্বান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ