Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্থ লুটপাটের কারখানা ভবদহ

সুইস গেট ৮ লক্ষাধিক মানুষের মরণ ফাঁদ, শেষ হয় না ২৭ বিলের পানি নিষ্কাশন প্রকল্প

মিজানুর রহমান তোতা : | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ভবদহ যশোর-খুলনার বিরাট এলাকার অভিশাপ। ১৯৬০ সালে সবুজ বিপ্লবের নামে যশোরের সদর, মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর, খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্যবর্তী ভবদহ নামক স্থানে শ্রীনদীর ওপর নির্মাণ করা হয় একটি বড় সুইস গেট। এক পর্যায়ে যশোর ও খুলনার প্রায় ২০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৮ লক্ষাধিক মানুষের মরণ ফাঁদে পরিণত হয় ওই সুইস গেটটি।
সবুজ বিপ্লবের জন্য তৈরি করা গেট সংলগ্ন শ্রীনদী, টেকা ও মুক্তেশ্বরী এই ৩টি নদী রয়েছে। সুইস গেট দিয়ে বিল কেদারিয়া, বিল বকর ও বিল আড়পাড়াসহ যশোর ও খুলনা এলাকার মোট ২৭টি বিলের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বিল তীরবর্তী আশেপাশের শতশত গ্রামে পানি বদ্ধতার সৃষ্টি ভয়াবহতায় রূপ নেয়।
ভবদহের কারণে বছরের পর বছর ধরে বহু কৃষক মৎসজীবি হয়েছেন। অসংখ্য গাছপালা মরে গেছে। অগণিত বাড়ি-ঘর, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, হাট-বাজার ও আবাদি জমির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমেছে। ঘটেছে জীব-বৈচিত্রের পরিবর্তন। তারপরও স্থায়ী সমাধানের পথে না হেঁটে চলতি বর্ষা মৌসুমেও অর্থ লোপাটের ক্ষেত্র তৈরী করা হচ্ছে।
প্রতি বছরের মতো এবারও একই কায়দায় লুটপাটের ক্ষেত্র তৈরী করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত বছর জাতীয় কর্মশালায় গৃহীত প্রকল্পটি ফাইলবন্দি রেখে অস্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করে থোক বরাদ্দে পাইলট চ্যানেল কেটে অর্থ লোপাট করা হচ্ছে। চ্যানেল কাটতে যে থোক বরাদ্দ আনা হয়েছে তার কাজ করছেন প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধির পুত্র। আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেছে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতা ইকবাল কবীর জাহিদ গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ভবদহ সমস্যা জিইয়ে রেখে একটি মহল ও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পের পর প্রকল্প গ্রহণ করে অর্থ লোপাটের কারখানায় পরিণত করেছে। বরাবরই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা এই জনপদের মানুষের সঙ্গে ‘সাপ-লুডু’ খেলছে।
তিনি বলেন, সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসংখ্যবার বলেছেন নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। এই নীতির পরিপন্থি কাজ হচ্ছে ভবদহের নদীগুলোতে। তার মতে, ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝখান দিয়ে নদী সংযোগ, বিল কপালিয়াসহ পর্যায়ক্রমে সব বিলে টিআরএম চালু ও উজানে নদী সংযোগ বিশেষ করে ভৈরবের সাথে মুক্তেশ্বরীর সংযোগ স্থাপন করলে ভবদহের স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে।
অভিযোগ রয়েছে, যুগ যুগ ধরে প্রকল্পের পর প্রকল্প গ্রহণ করে অর্থ লোপাটের কারখানা বানানো হয়। ভেড়ি বাঁধ নির্মাণ, নদী খনন, ড্রেজিংসহ নানামুখী পরিকল্পনা নেওয়া হয় মূলত অর্থ লোপাটের জন্য। যার কারণে করা হয় না স্থায়ী সমাধানের কোন মাস্টার প্লান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ১৯৯০ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ছোট-বড় ১৯টি প্রকল্পে ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার জানান, সর্বশেষ ৪৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প ফাইলটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এরমধ্যে থোক বরাদ্দ নিয়ে পাইলট চ্যানেল কাটা চলছে।
সূত্র জানায়, শুধুমাত্র ২০০৭ সালে নদী খনন, টিআরএম ও ডেজিংয়ে প্রকল্পে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বিরাট সফলতা আসে। কিন্তু পরবর্তীতে আর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। ওই একটিবার প্রকল্পের বাকি টাকা ফেরত যায়। বাকি প্রকল্পের টাকা ফেরতের নজির নেই। উল্টো অনেক প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায়।
ভবদহের সমস্যার শুরু থেকে বছরের পর বছর ধরে প্রকৃত অর্থে কত টাকা ব্যয় কিংবা কিভাবে কত ব্যয় দেখানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়রা এমন প্রশ্ন করলেও কখনোই জবাব তাদের কাছে আসে না। এবার তারা উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে থলের বেড়াল খুঁজে বের করে জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থ লুটপাট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ