Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাবার স্বপ্ন খুন করেছে হানিফ পরিবহন

চট্টগ্রামে মানববন্ধন কর্মসূচি, হানিফ পরিবহন বয়কটের আহ্বান, নেপথ্যের কারণ খতিয়ে দেখছে পুলিশ

ইনকিলাব রিপোর্ট : | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ-এর পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েল পড়াশুনায় ছিলেন খুবই মেধাবী। এসএসসি ও এইচএসসি’তে পেয়েছিলেন জিপিএ-৫। অন্য দুই ছেলেমেয়ের চেয়ে তাকে নিয়েই বেশি স্বপ্ন দেখতেন তার কাতার প্রবাসী বাবা। গোলাম মাওলা ভাবতেন, বিবিএ শেষ করার পর উচ্চশিক্ষার্থে পায়েলকে দেশের বাইরে পাঠাবেন। গোলাম মাওলার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। তার ভাষায়, তারা আমার স্বপ্ন পূরণ হতে দিলো না। আমার স্বপ্নকে হত্যা করেছে তারা। অন্যদিকে হত্যাকান্ডের নেপথ্যে আরো কোন কারন রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে কাজ করছে পুলিশের একাধিক টিম। এছাড়া পায়েল হত্যাকান্ডে জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন সাধারন মানুষ ও স্বজনেরা। গতকাল (শুক্রবার) নগরীর জামাল খানে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে পায়েলের স্বজনরা ছাড়াও তার নিজ উপজেলা স›দ্বীপ ও হালিশহরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।
মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম জানান, আমরা প্রাথমিক অবস্থায় জড়িতদের গ্রেফতার ও হত্যাকান্ডের ব্যাপারে সব ধরনের তথ্য পেয়েছি। এর পরেও এ হত্যাকান্ডের নেপথ্যে অন্য কোন কারন জড়িত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পায়েলের বাবা গোলাম মাওলা বলেন, তারা আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি আমার ছেলের খুনিদের ফাঁসি চাই। বড় ছেলে আমার সঙ্গে কাতারে থাকে, সে বিয়ে করেছে। একমাত্র মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছি। পায়েলকে ঘিরেই ছিল আমার সব চিন্তা। পায়েল মেধাবী ছিল, সে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাকে উচ্চশিক্ষিত করে মানুষের মতো মানুষ করবো, এটাই ছিল আমার স্বপ্ন। পায়েলের লাশ উদ্ধারের পর গত ২৪ জুলাই কাতার থেকে দেশে ফিরেন গোলাম মাওলা ও তার বড় ছেলে গোলাম মোস্তফা পলাশ। কিন্তু পায়েলের মুখটা থেঁতলে যাওয়ায় তাদের তা দেখতে দেয়া হয়নি। পরে বুধবার ২৫ জুলাই সকাল ৮টার দিকে জানাজা শেষে পায়েলকে দাফন করা হয়।
গোলাম মাওলা বলেন, খুনিরা আমার ছেলেকে এমনভাবে মেরেছে, আমি আমরা ছেলের মুখটা পর্যন্ত দেখতে পারিনি। আমি আমার ছেলের খুনিদের চেহারা দেখতে চাই, তাদের ফাঁসি চাই। তারা (বাসচালক, সুপারভাইজার ও চালকের সহকারী) বলেছে, তড়িঘড়ি করে বাসে উঠতে গিয়ে এর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আমার ছেলে পড়ে যায়। পড়ে যেতেই পারে। তাদের উচিত ছিল, আমার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া বা আমাদের ফোনে জানানো। তারা তা করেনি। তারা আমার ছেলেকে ব্রিজ থেকে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। এখনও পর্যন্ত হানিফ পরিবহনের পক্ষ আমাদের সামান্য সহানুভূতিটুকুও জানানো হয়নি, অথচ তাদের স্টাফদের কারণে আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আমরা হানিফ পরিবহনের মালিকসহ খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পায়েলকে যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে এটা কোনো সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না। মানুষ নামের দানবেরাই তাকে হত্যা করেছে। হানিফ পরিবহনের যে চালক, সহযোগী মিলে পায়েলকে হত্যা করেছে তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। পায়েলকে ফিরে পাওয়া না গেলেও তার মতো আর কাউকে যাতে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। হানিফ পরিবহন বয়কটের আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, হানিফ পরিবহনের মালিকের অপরাধের তালিকা খতিয়ে দেখে বিচারের আওতায় আনতে হবে। পরিবহন সেক্টরে তারা যে নৈরাজ্য করছে তার লাগাম টেনে ধরতে হবে। স›দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম বেলায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে পায়েলের বড় মামা কামরুজ্জামান চৌধুরী টিটু, মেজো মামা গোলাম সোহরাওয়ার্দী বিপ্লব, ছোট মামা বাহার চৌধুরী শিপন, চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক সারওয়ার হাসান জামিল, মানবাধিকারকর্মী আমিনুল হক বাবু, স›দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউছুপ রিপন, উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুমানা নাসরিন বক্তব্য রাখেন। উল্লেখ্য গত ২১ জুলাই রাত ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে দুই বন্ধু মো. মহিউদ্দিন শান্ত (২২) ও হাকিমুর রহমান আদরের (২২) সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো-ব-৯৬৮৭) টাকার উদ্দেশে রওনা দেন পায়েল। এরপর গত ২৩ জুলাই সকালে দিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর খাল থেকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থানার সরিষপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কাতার প্রবাসী গোলাম মাওলার ছেলে সাইদুর রহমান পায়েলের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পরদিন ২৪ জুলাই হানিফ পরিবহনের ওই বাসের চালক জামাল হোসেন (৩৫) ও বাসের হেলপার ফয়সাল হোসেন (৩০) ও সুপারভাইজার জনিকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়। বুধবার সুপারভাইজার জনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এর আগে মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) পায়েলের মামা গোলাম সরওয়ার্দী বিপ্লব বাদী হয়ে গজারিয়া থানায় বাসচালক জামাল, সুপারভাইজার জনি ও হেলপার ফয়সালকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।



 

Show all comments
  • Gma Azim ২৮ জুলাই, ২০১৮, ২:৩৭ এএম says : 0
    পরিবহন সার্ভিস যারা পরিচালনা করে তারা অনেকেই গডফাদার এই গডফাদারদের বলে বলিয়ান হয়ে তাদের কর্মচারীরা এ সমস্ত অনৈতিক কার্যকলাপ করার সাহস পায় ।
    Total Reply(0) Reply
  • Shaheen Popy ২৮ জুলাই, ২০১৮, ২:৪৩ এএম says : 0
    কঠিন শাশ্তি দাবী করছি
    Total Reply(0) Reply
  • Rabiul Hossain Rubel ২৮ জুলাই, ২০১৮, ২:৪৩ এএম says : 0
    কিছুই হবেনা, এরা অচিরেই ছাড়া পেয়ে যাবে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Arif ২৮ জুলাই, ২০১৮, ২:৪৩ এএম says : 1
    ফাঁসি চাই,,
    Total Reply(0) Reply
  • Kashem Aziz Bhuiyan ২৮ জুলাই, ২০১৮, ২:৪৪ এএম says : 0
    মানুষ নি:সংশ হয়ে গেছে। এই রকম নিষ্ঠুর কেন হল?
    Total Reply(0) Reply
  • Lavlu ২৮ জুলাই, ২০১৮, ৩:২৬ পিএম says : 0
    আসল কথা হইল দেশে ইসলামের সঠিক চর্চা নেই বলেই সমাজে নানারকম অবক্ষয় চলছে।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Mizan Khan ২৮ জুলাই, ২০১৮, ৩:২৬ পিএম says : 0
    এখনে হানিফ পরিবহণের কোন দোষ নেই। ড্রাইভার ও হেলপারদের কঠোর শাস্তি হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • maruf ২৮ জুলাই, ২০১৮, ৩:২৭ পিএম says : 0
    হানিফ পরিবহন বয়কট করুণ সবাই,
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ আক্তার কামাল টিংকু ২৮ জুলাই, ২০১৮, ৩:২৮ পিএম says : 0
    সহমত
    Total Reply(0) Reply
  • ৩০ জুলাই, ২০১৮, ৭:১২ এএম says : 0
    এরা হলো মানব রুপি কু কুর
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ