Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঘানিশিল্প বিলুপ্তির পথে

শনিবারের সন্দেশ

মো. গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে নিত্যনতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারে মানুষের জীবন-মান সহজ হচ্ছে। বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে স্বল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে অধিক উৎপাদনের কারণে গ্রামবাংলার আবহমান ঐতিহ্য ঘানিশিল্প বিলুপ্তির পথে।
দুপচাঁচিয়া উপজেলায় দুটি পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে একসময় ভেজালমুক্ত সরিষার খাঁটি তেল তৈরিতে ঘানির ব্যবহার ছিল ব্যাপক। অনেক গ্রামেই পরিবারের লোকজন বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে এই ঘানির মাধ্যমে সরিষার খাঁটি তেল তৈরি করে বাজারজাত করতেন।
নিজ বাড়িতে অল্প পরিসরে স্থানীয় কাঠমিস্ত্রির হাতে কাঠের তৈরি ঘানি বানিয়ে এক বা দুইটি গরুর সাহায্যে ঘানি টানিয়ে খাঁটি সরিষার তেল তৈরি করতেন। ঘানিতে ভাঙা তেলের কদরও ছিল অনেক। সরিষার খাঁটি তেল তরিতরকারিসহ সব ধরনের রান্নার কাজে ব্যবহার হতো। এককথায় ঘানির সরিষার তেল ছাড়া সে সময় রান্নাতে যেন গৃহিণীরা আর অন্যকিছু চিন্তাই করতেন না।
তেল বের করার পর পেষাই করা সরিষার অবশিষ্টাংশকে বলে খইল। এই ঘানির খলই পশুখাদ্য ও জৈবসার হিসেবে ব্যবহার হতো। ঘানি ব্যবহারকারীরা এতে যেমন লাভবান হতেন, তেমনি সে সময় মানুষ সরিষার খাঁটি তেলের পূর্ণ স্বাদ পেতেন। কৃষকরা খইল জমিতে ব্যবহার করে জমির উর্বরা শক্তি বাড়াতেন।
অল্প পুঁজিতে ঘানিশিল্প গড়ে তোলা যেত বলে অনেকেই এই পেশায় জড়িয়ে যান। বাড়ির গৃহকর্তার সাথে মহিলারাও এই ঘানির মাধ্যমেই সরিষার খাঁটি তেল তৈরির কাজে সহায়তা করতেন। বেশ আন্তরিকতার মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা বাজার থেকে সরিষা কিনে রোদে শুকিয়ে ঘানিতে মাড়াই করে খাঁটি তেল তৈরি করতেন।
ঘানিতে প্রতিবার পাঁচ কেজি সরিষা ভাঙা যায়। পাঁচ কেজি সরিষা থেকে দুই কেজি তেল তৈরি হয়। প্রতি পাঁচ কেজি সরিষা ভাঙতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। এভাবে একদিনে পর্যায়ক্রমে একটি ঘানিতে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি সরিষা ভাঙা যায়। বাজারে এ তেলের চাহিদা ছিল অনেক বেশি। প্রতি কেজি তেল সে সময় বিক্রি হতো অন্য তেলের দেড়গুণ দামে।
কোনো একসময় অনেক গ্রামেই সরিষার খাঁটি তেল তৈরির জন্য ঘানিশিল্প পরিচিতি লাভ করে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় যান্ত্রিকতার যুগে টিকতে না পেরে অনেকেই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়েছেন। এর মাঝে অনেকে তাদের ঐতিহ্য বাপ-দাদার পেশাকে এখনো কোনোরকম ধরে রেখেছেন। এদের মধ্যে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের পশ্চিম আলোহালীর বোরাই, সরদারপাড়া চামরুলের বেরুঞ্জ গ্রামের কিছু বাড়িতে এই ঘানিশিল্প নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে এখনো সচল থাকলেও গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি থেকেই ঘানিশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘানিশিল্প
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ