Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সক্রিয় সিন্ডিকেটে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

৩টি উৎপাদন মৌসুমে ধানের পরিবর্তে সংগ্রহ হয়েছে চাল

মিজানুর রহমান তোতা : | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

চলছে বাজার বিশৃঙ্খলা। ঢিলেঢালা প্রতিরোধ ব্যবস্থা। নেই কোন তদারকি। এতে উৎপাদিত ফসলের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না কৃষক। হচ্ছেন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে গত ৩টি উৎপাদন মৌসুমে কার্যত ধান সংগ্রহ করেনি। তবে মিলার ও সিন্ডিকেটের স্বার্থে সংগ্রহ করা হয়েছে চাল। সরকারীভাবে ধান সংগ্রহ হলে বাজারে ফড়িয়া, আড়তদার, পাইকারী ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট এককভাবে মূল্য নির্ধারণ করে কৃষক ঠকানোর সুযোগ পায় কম। আপদকালীন মজুদ ও কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণে সাধারণত উৎপাদন মৌসুমে ধান সংগ্রহ হয়ে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। গত বছরের বোরো ও রোপা আমন এবং চলতি বছরের বোরো উৎপাদন হয় আশানুরূপ। এই ৩টি মৌসুমে বাজারে গড়ে ধানের মূল্য কম অথচ চালের মূল্য বেশী হয়েছে। এর কারণ কি, গলদ কোথায়, তা নির্দ্দিষ্ট করে বলতে পারেনি কৃষি ও খাদ্যসহ সংশ্লিষ্ট কোন বিভাগই।
কৃষকদের অভিযোগ, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোন ধরনের ভুমিকা রাখে না। যশোরের শার্শার ডিহি ইউনিয়নের মোঃ আলমসহ বেশ কয়েকজন কৃষক দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ‘ধানের ন্যায্যমূল্য পায়নি কৃষকরা। তাছাড়া ধানের বাজারে বিশৃঙ্খলা সিন্ডিকেটের দাপট কমছে না। এতে ধান আবাদ ও উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি’। মাঠপর্যায়ের কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা জানান, কৃষকের অভিযোগ শতভাগ সত্য। গ্রামে গ্রামে সাধারণ কৃষকরা ধান উৎপাদন করে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
খাদ্য অধিদপ্তরের একটি সুত্র জানায়, অধিদপ্তর ধান ক্রয়ের ঘোষণা দেওয়ার পর পিছিয়ে আসে। সিদ্ধান্ত হয় শুধু চাল ক্রয়ের। অভিযোগ সিন্ডিকেটের স্বার্থ সংরক্ষণে এটি করা হয়েছে। এবার ধান ক্রয়ের কথা ছিল মাত্র দেড় লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু বরিশাল ও সিলেটসহ কয়েকটি এলাকা থেকে বিভাগ থেকে মাত্র ১৫/১৬ হাজার মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র অবশ্য দাবি করেছে, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ কম। কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের কথা, জমিচাষ, বীজ, চারা লাগানো, পরিচর্যা, সার, কীটনাশক, সেচ, ধান কাটা ও মাড়াইসহ বাজারে তোলা পর্যন্ত প্রতি বিঘায় মোটা ধান উৎপাদনে গড়ে খরচ পড়ে ন্যুনতম ৭শ’ টাকা। সেই ধান বাজারে বিক্রি হয়েছে ভরা মৌসুমে ৭শ’২০ টাকা। বর্তমান বাজার মূল্য ৮শ’টাকা। মৌসুম জুড়ে খরচ ও পরিশ্রম করে লাভের বদলে হচ্ছে লোকসান।
সূত্রমতে, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় তার জের টানতে হচ্ছে কৃষকদের। আবার ভোক্তাদেরও বাড়তি মূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে চাল। খাদ্য অধিদপ্তর এবার ৩৮টাকা কেজি দরে ৮লাখ মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের টার্গেট করে। ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৭লাখ মেট্রিক টন চাল ক্রয় হয়েছে। এতে মিলারদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে। কৃষকদের নয়। উপরন্তু মিলাররা কৃষকদের কাছ থেকে কম মূল্যে ধান ক্রয় করে বেশী মূল্যে বাজারে চাল বিক্রি করেছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, উৎপাদক চাষির স্বার্থ সংরক্ষণ সবচেয়ে জরুরি। তারা অব্যাহত মার খেলে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে’। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তর জানায়, আমরা প্রোডাকশন দেখি। এবার চাল উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯৭লাখ মেট্রিক টন’। ধান উৎপাদন মৌসুমে যশোরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে জাতীয় কৃষক সমিতির নেতৃবৃন্দ সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি জানায়, কৃষকের স্বার্থে ধান ক্রয় করা হোক। চাল ক্রয়ে চাতালের মালিক ও আড়তদার তথা পুঁজিপতিদের সেবা হচ্ছে। তারপরও শুধু চাল সংগ্রহ হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ