Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নদীতে নেই ইলিশ

আমন আবাদেও শঙ্কা

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

এবার আষাঢ়-শ্রাবনের ভড়া বর্ষা মওশুমেও স্বাভাবিক বর্ষনের অভাবে দেশের নদ-নদীতে ইলিশের স্বাভাবিক বিচরন, আহরন ও আমন আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বাজারে ইলিশ সরবরাহের ব্যাপক ঘাটতির সাথে সব মাছের দাম চড়া। অপরদিকে বৃষ্টির অভাবে আমন রোপন কিছুটা ব্যাহত ও বিলম্বিত হবার আশংকাও বাড়ছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞগনও ভড়া বর্ষা মওশুমে বৃষ্টিপাতের অভাবকেই এখন পর্যন্ত নদ-নদীতে ইলিশের বিচরন বাধাগ্রস্থ হবার কারন বলেছেন। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে গত অর্থবছরে দেশে ইলিশ উৎপাদন ছিল ৫ লাখ টনের কিছু বেশী। চলতি অর্থ বছরে তা সোয়া ৫ লাখ টনে পৌছবে বলে আশা করা হচ্ছে। গতবছর জুন মাসে স্বাভাবিক ৪৮৩ মিলিমিটারের স্থলে বরিশাল অঞ্চলে ৫১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। অপরদিকে গত বছর মার্চ ও এপ্রিলে বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১৫২% ও ১৬০%-এর মত বেশী বৃষ্টিপাত হলেও এবছর তা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তবে এবার কিছু আগাম বর্ষনের কারনে আউশ ধান ও পাটের আবাদ বিলম্বিত হবার পরে বৃষ্টির পানির অভাবে ডোবা-নালায় এ সময়ের স্বাভাবিক পানি না থাকায় পাট পচানো নিয়েও সংকটে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকার পাট চাষী। দক্ষিনাঞ্চলে চলতি মওশুমে প্রায় ৭ লাখ ১২ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ রয়েছে। ইতোমধ্যে বীজতলা তৈরীর কাজ শেষ হলেও কাঙ্খিত বৃষ্টির অভাবে রোপন ব্যাহত হচ্ছে।
তবে ডিএই’র মতে, বৃষ্টিপাতের পরিমান এখনো কিছুটা কম থাকলেও বড় কোন সংকট সৃষ্টি হবেনা আমন আবাদে। তাদের মতে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যভাগের চাষিরা এখন সারা বছরই সেচ ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকেন। তবে আসন্ন পূর্ণিমার ভড়া কোটালে দক্ষিনাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান বাড়বে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে ভড়া বর্ষা মওশুমে কাঙ্খিত বৃষ্টির অভাবে দেশের অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে ইলিশের বিচরন যথেষ্ঠ কম। ফলে আহরন হ্রাস পাওয়ায় বাজারে ইলিশের ব্যাপক ঘাটতির সাথে দামও সাধারনের ধরাছোয়ার বাইরে । ইলিশ সারা বছরই ডিম ছাড়লেও আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার সময়ই ৮০ভাগ ইলিশ গভীর সমুদ্র থেকে ছুটে এসে উপক’লের প্রায় ৭হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ডিম ছেড়ে আবার সাগরে ফিরে যায়। এ কারনের আশ্বিনের ঐ বড় পূর্ণিমার দিন সহ আগে পড়ের ২২দিন উপক’লের প্রজননস্থলে সব ধরনের মাছধরা নিষিদ্ধ। পাশাপাশি নদ-নদীতেও ঐসময়ে ইলিশ অহরন নিষিদ্ধ থাকে।
কিন্তু গত ১জুলাই থেকে জাটকা আহরনে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও দক্ষিনাঞ্চল সহ উপক’লীয় নদ-নদীতে ইলিশের দেখা নেই। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস অনুষদের ডীন প্রফেসর মোঃ আলী জানিয়েছেন, মূলত বৃষ্টির অভাবই অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে ইলিশের বিচরন বাঁধাগ্রস্থ করছে। ফলে আহরনও হ্রাস পেয়েছে। তার মতে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শিতলক্ষা, ধলেশ্বরী সহ মধ্যভাগের প্রায় সব নদ-নদীই শিল্প বর্জ্যে মারাত্মকভাবে দুষিত। ঐসব নদ-নদীর পানি মেঘনা, তেতুলিয়া, বলেশ্বর ও এর শাখা নদ-নদী হয়ে সাগরে পতিত হয়। আর ঐসব শিল্প বর্জ্য সাগর থেকে অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে ইলিশের আগমনকেও বাধাগ্রস্থ করছে। প্রফেসর মোঃ আলীর মতে, এবার এসময়ের ‘ইলশে গুড়ি বৃষ্টি’ সহ মাঝারী থেকে ভাড়ী বর্ষনের অভাব ইলিশকে এখনো অভ্যন্তরীণ নদ-নদী বিমুখ রেখেছে। মৎস্য বিভাগের বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালকও বর্তমানের ইলিশ সংকটের জন্য আষাঢ়-শ্রাবনের স্বাভাবিক বর্ষনের অভাবকে দায়ী করছেন। তার মতে সাগর উপক’লে প্রচুর ইলিশের আনাগোনা রয়েছে। কিন্তু সাগর কম বেশী উত্তাল থাকায় সেখানে মাছ ধরা অত্যন্ত দুরুহ ও ঝুকিপূর্ণ। তার মতে আষাঢ়-শ্রাবনের এ মওশুমে দেশের অভ্যন্তরীন নদ-নদীতেই ইলিশ অধিক মাত্রায় বিচরন করার কথা। কিন্তু সে বিষয়টি প্রকৃতির ওপরই নির্ভরশীল। বৃষ্টির অভাবই এসময়ে ইলিশ সংকটের কারন বলে জানিয়েছেন উপ-পরিচালক।
ইলিশ সংকটে জেলেরা নদী থেকে ফিরছে খালি ট্রলার নিয়ে। যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে তাদের খাবারের টাকা পর্যন্ত হচ্ছে না। ইলিশের মোকামগুলোতেও অনেকটাই কর্মহীন-স্থবিরতা। মহাজনা জেলেদের বিপুল অংকের আগাম অর্থ-দাদন দিলেও সে টাকা কবে ঘরে আসবে তা নিয়ে শংকা ক্রমশ বাড়ছে। অথচ এসময়ে দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ মোকামগুলো থাকে দিন রাত কর্মব্যস্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী ইলিশ

২৪ জুলাই, ২০১৮
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ