পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আবারো হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে তাদের ওপর এ হামলা চালায় ছাত্রলীগ। হামলায় অন্তত ৬ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। হামলাকারীরা কেন্দ্রীয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখা ছাত্রলীগের পদধারী। এর আগে বিকেল ৩টা থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলা, আটকদের মুক্তি, শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে আটক আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের বাবা নবাই বিশ্বাস ও মা সালেহা বেগমসহ বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এসময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছেলেকে ভিক্ষা চেয়েছেন রাশেদের মা সালেহা বেগম। অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও আকটদের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আগামী ২৫ জুলাই বুধবার দেশের সকল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিকেল ৩টায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হলে ছাত্রলীগের বিপুল পরিমাণ কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতাকর্মী সমাবেশের আশপাশে অবস্থান নেয়। এসময় তারা মুঠোফোনে সমাবেশে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের স্থিরচিত্র ধারণ করে। এক পর্যায়ে সমাবেশ শেষে ফেরার পথে ছাত্রলীগ কয়েক গ্রুপে ভাগ হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে হামলা চালায় আন্দোলনকারীদের ওপর। প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ফেরার প্রস্তুতি নেয়ার সময় রাজু ভাস্কর্যের সামনে হামলা চালায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মুহাম্মদ নিজামুল হক সহ বেশ কিছু নেতাকর্মী। এরপর আন্দোলনকারীদের কয়েকজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পালিয়ে গেলে সেখানেও হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এসময় দু থেকে তিনজন আহত হয় বলে জানা গেছে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে ধাওয়া দিলে পালিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর আগে টিএসসি রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে সিএনজি যোগে বাসায় ফেরার পথে বাইক নিয়ে আন্দোলনকারীদের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার পিছু ধরে ছাত্রলীগ। বাটা সিগন্যাল মোড়ে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতারা সিএনজির গতিরোধ করে। এরপর সিএনজির ভেতরে থাকা আন্দোলনকারীদের নেতাদের বের করে নিয়ে এসে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে সাধারণ মানুষ ও ট্রাফিক পুলিশ মারধরের কারণ জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতারা আন্দোলনকারীদের ছিনতাইকারী ট্যাগ দিয়ে মারধর অব্যাহত রাখে। এসময় জনতার সহযোগিতায় আন্দোলনকারীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মারধরের শিকার শিক্ষার্থীরা হলেন- আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাতুল সরকার, সৌরভ ও মিয়াজি। আর মারধরকারীদের মধ্যে ছিলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মসূচী ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-সম্পাদক মুরাদ হায়দার টিপু, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান উজ্জ্বল, জহুরুল হক শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক আমির হামজসহ ছয় নেতাকর্মী। ছাত্রলীগের হাত থেকে পালিয়ে এসে আন্দোলনকারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক এক গ্রুপে লাইভে এসে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাতুল সরকার বলেন, কিছুক্ষণ আগে আমাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচি শেষে আমি, কেন্দ্রীয় কমিটির বিন ইয়ামিন মোল্লা, সৌরভ ও মিয়াজি শাহবাগ পার হয়ে ধানমন্ডি যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের ৮ থেকে ১০ জন সন্ত্রাসী আমাদের ওপর হামলা করেছে। সৌরভ ও মিয়াজিকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। আমি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করে পালিয়ে এসেছি। প্রতিবাদ সমাবেশে আন্দোলনকারীদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, কোটা আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাবিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছে। এসবের বাস্তব কোন ভিত্তি নেই। এ আন্দোলন যৌক্তিক। কিন্তু এখানে হামলা চালিয়ে ব্যাক্তিগত বিরোধ তৈরি করা হচ্ছে। যেটি কোনভাবে কাম্য নয়। তিনি বলেন, আটককৃতদের মুক্তি, নিরাপদ ক্যাম্পাস ও হামলাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচী চলমান থাকবে। আগামী ২৫ জুলাই বেলা ১১ টায় সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচী পালন করার আহ্বান জানাচ্ছি। সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ বলেন, অধিকাংশরাই বলে কোটা সংস্কার আন্দোলন যৌক্তিন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। উল্টো নিপীড়তদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আটকদের যতদিন মুক্তি দেয়া হবে না ততদিন আমরা প্রতিবাদ জানাব। সমাবেশে রাশেদের মা সালেহা বেগম বলেন, আমার বাবা সাধারণ ছাত্র। সে কোন রাজনীতি করে নাই। সে একটা চাকরির জন্য আন্দোলনে গিয়েছিল। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সে আপনার পক্ষের লোক। সে অনেক কষ্টে আছে। আমি আপনার কাছে আমার বাবাকে ভিক্ষা চাচ্ছি। আমি আমার বাবাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি আমার বাবার মুক্তি চাই।
আলোচনায় বসার আহ্বান সচেতন শিক্ষকদের
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘিত করার অপপ্রয়াশের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সচেতন শিক্ষকদের ব্যানারে শিক্ষকদের একটি অংশ। এসময় তারা উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি সমাধানে ছাত্র-শিক্ষকদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশান সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, শিক্ষক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক তাজিন আজিজ চৌধুরী, অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর, অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান, অধ্যাপক জিনাত হুদা, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির প্রমুখ। এ সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উস্কিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। তিনি বলেন, কোটার নামে নিপীড়নের নামে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা বা কটাক্ষ করা কোনভাবেই বরদাশ্ত করা হবে না। এসব কাজে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ছাত্র যদি অন্যায়ভাবে কারাগারে থাকে তাকেও আমরা ছাড়িয়ে নিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রশাসনের কাছে। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক সমাজ ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ করা কোনভাবেই মেনে নিবে না। কিন্তু নায্য দাবির সাথে আমরা একমত পোষণ করব। রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ড. জিনাত হুদা বলেন, কোটা আন্দোলন গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আন্দোলনের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অরাজকতা তৈরি করা হচ্ছে তখন আমাদের এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়।
গভীর রাতে নুরের কক্ষ দখলে নেয়ার চেষ্টা ছাত্রলীগের
এদিকে গত শনিবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরের কক্ষ দখলে নিতে যায় ছাত্রলীগ। পরে হল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে তারা কক্ষটি দখলে নিতে পারেনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার রাত দিবাগত সাড়ে ১২টার দিকে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানীর অনুসারী শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফ হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক আরাফাত হোসেন জৌতিসহ অন্তত ২০ জন ছাত্রলীগ কর্মী নুরুর ১১৯ নম্বর কক্ষে যায়। তাঁরা নুরের রুমমেট নাজিমকে কক্ষ থেকে বের হয়ে ১১১ নম্বর কক্ষে যেতে বলেন। এসময় ছাত্রলীগ নেতারা নুরের বইপত্র বের করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। উপস্থিত ছাত্রলীগের কর্মীরা নুরের বইপত্র নিয়ে হলের সিড়ির কাছে রাখেন। পরে রাত আড়াইটার দিকে মুহসীন হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম এসে বইপত্রগুলো কক্ষের ভেতরে নিয়ে আসেন। এ বিষয়ে নুরের রুমমেট নাজীম বলেন, আমাকে এসে তারা হলের ১১১ নম্বর কক্ষে যেতে বলেন। বইপত্রগুলো বের করেন। এর বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি। অভিযুক্তদের ব্যাপারে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী বলেন, এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা ছাত্রলীগের অতি উৎসাহী পোলাপান। তাদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে নুরুল হক নুর বলেন, ওরা চেয়েছিল আমার বইপত্র-সার্টিফিকেট পুড়িয়ে দিয়ে একটি আতঙ্ক সৃষ্টি করতে, যাতে আর কেউ কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে সাহস না পায়। আমি ঘটনাটি প্রক্টর স্যারকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক এ এফ এম গোলাম রব্বানী বলেন, হল প্রশাসনকে সমন্বয় করে প্রক্টরিয়াল টিম পাঠিয়ে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।