Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিজয় ও ক্ষমতার গন্ধ পাচ্ছেন ইমরান খান

রয়টার্স | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

পাকিস্তানের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ আগামী সপ্তাহের নির্বাচনে দেশজুড়ে নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে সেনা মোতায়েন ও সেনাবাহিনীকে ব্যাপক বিচারিক ক্ষমতা প্রদান অনুমোদন করেছে। পাকিস্তানের নির্বাচনে এ এক বিরল পদক্ষেপ। এ সেনা মোতায়েন তাদের বিচারিক ক্ষদানা নিয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলও মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলোর মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তবে ইমরান খানের দল এ নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে।
২৫ শে জুলাই পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনে দু’টি প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী দল হল সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই)।
নির্বাচনে প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। তাদেরকে শুধু মোতায়েন করাই হচ্ছে না, একই সঙ্গে দেয়া হচ্ছে ব্যাপক বিচারিক ক্ষমতা। এদিকে নওয়াজ শরীফ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ইমরান খানকে নেপথ্যে থেকে সমর্থন দিচ্ছে সেনাবাহিনী। তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বার বার বলেছে, নির্বাচনে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। উল্লেখ্য, এর আগে পাকিস্তানে নির্বাচন হয় ২০১৩ সালে। সে সময় যে পরিমাণ সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল এবার তার প্রায় তিনগুনে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে।
গত মাসে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশটির নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়। এর ফলে কেউ নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করলে ঘটনাস্থলেই তাকে শাস্তি দিতে পারবে সেনারা। কেউ ভোটের সময় ওই ধরনের অপরাধ করলে তাকে ৬ মাস পর্যন্ত জেল দেয়ার কথা বলা হয়।
নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র আলতাফ খান বলেছেন, পোলিং স্টেশনের চার্জে যেসব কর্মকর্তা থাকবেন তাদেরকে এমন কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে। এমন কর্তৃত্বের কি অপব্যবহার হতে পারে? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না। মোটেই না। তারা তো আমাদেরই অংশ।
এদিকে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে তাদেরকে এত বড় কর্তৃত্ব দেয়ার বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল। তারা বলছে, নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সীমিত। তারা শুধু নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এটাই তাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত।
পিপিপির এমপি ফরহাতুল্লাহ বাবর বলেছেন, সেনাবাহিনীকে এভাবে এই প্রথমবার ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকার, সমাজ ও রাজনীতিতে এরই মধ্যে ভয়াবহভাবে সামরিকীকরণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিভিন্ন সমালোচনার জবাবে এ মাসে সংবাদ সম্মেলন করেন সেনা মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গাফুর। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ থাকবে। নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে যতটুকু সহায়তা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে আমরা ততটুকুই করবো। নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ততটুকুই হবে।
এর আগে কমপক্ষে একবার সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালে কয়েক দফা বিশেষ নির্বাচনের সময় এমনটা ঘটেছিল। কিন্তু একটি জাতীয় নির্বাচনের সময় যখন সেনাবাহিনীকে এত বড় ক্ষমতা দেয়া হয় তখন তাতে যথেষ্ট উদ্বেগ থাকে বলে মনে করছে নিরপেক্ষ মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কমিশন অব পাকিস্তান। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, এমন পদক্ষেপ অপ্রত্যাশিত। যেখানে বেসামরিক লোকজনের ম্যান্ডেটের বিষয় সেখানে তাদের এতটা কঠোরতা, তাদের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে এত বড় ব্যবস্থাপনায় নামানো বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।
ক্ষমতার গন্ধ পাচ্ছেন ইমরান খান
বিবিসি বলেছে, পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যাওয়ার গন্ধ পাচ্ছেন ইমরান খান। তিনি নিজের জয় দেখতে পাচ্ছেন আর অন্যদের পরাজয়ের কারণ হিসেবে তাদের কৃতকর্মকে দায়ী করেছেন।
দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর শোচনীয় অবস্থার কারণে বর্তমানে প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ। নির্বাচনে জিতে সরকার গঠনের অনেকটা পরিকল্পনাও করে রেখেছেন ইমরান। বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।
আসন্ন নির্বাচনে ইমরানকে ক্ষমতায় বসাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছক এঁকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে প্রধান রাজনৈতিকদলগুলো। এছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে তাদের।
তবে ইমরান খান সাক্ষাৎকারে ভোট সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘অন্য দলগুলো বেশ হঠাৎই বলতে শুরু করেছে যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। এর কারণ হলো জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ এগিয়ে রয়েছে। তারা আসলে ইতিমধ্যেই, ভাগ্যের লিখন দেখতে পাচ্ছে।’
নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ দলটির সমর্থক ও দেশটির মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করছেন যে ইমরান খানের দলকে জেতাতে দেশটির সেনাবাহিনী নির্বাচনের ফল ‘সাজাচ্ছে’। পাকিস্তানে এবারের নির্বাচনকে মূলত এই দুটি দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা বলে মনে করা হচ্ছে।
ইমরান বলেন, পাকিস্তানের উত্থান মাথায় রেখেই নির্বাচনের প্রচারণা চালিয়েছে তার দল। নির্বাচনী প্রচারে দেশটির দুর্নীতি দমনকে প্রধান নীতি হিসেবে ব্যবহার করছেন বলেও জানান ইমরান।
ইমরান খান বেশ কিছুদিন ধরে যে অভিযোগে তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা নওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করছিলেন, সেই অভিযোগেই তার সাজা হল। ইমরান বলেন, ‘দুর্নীতির কারণে একটি দেশের ব্যয়ভার বহন করার অর্থ থাকে না, মানব উন্নয়নের জন্য অর্থ থাকে না। এ সম্পর্কে এই মামলাটি জনসচেতনতা তৈরি করেছে।’
তবে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নওয়াজ শরীফের কারাদন্ডের পেছনের কারণ আসলে তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সাথে বিবাদে জড়িয়েছিলেন। পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্মের অর্ধেকটা সময়ই দেশটির সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেছে সেখানকার সেনাবাহিনী।
নওয়াজ শরীফ দাবি করেছেন, তার দল যাতে জয়ী না হয় তাই দেশটির সেনাবাহিনী ভোটের আগেই ‘ফল কারচুপির’ কার্যকলাপে নেমেছে। তার দলের বেশ কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগ তুলেছেন যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের দল ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছে।
সাংবাদিকরা দাবি করেছেন, নওয়াজ শরীফ সম্পর্কে কোন ধরনের সহানুভ‚তি দেখানো প্রতিবেদন না করতে তাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পাকিস্তানে রাজনীতির একটি সংস্কৃতি হল দলের নেতারা বংশগতভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ইমরান খানের সেই ইতিহাস নেই। তার দলের ক্ষমতায় থাকারও কোন অভিজ্ঞতা নেই।
নিয়মিত দল পরিবর্তন করে এমন কিছু ধনী রাজনীতিবিদের স¤প্রতি দলে জায়গা দিয়ে বেশ সমালোচনার শিকার হয়েছেন ইমরান খান। কিন্তু এই নেতাদের একটা বিষয় হল যে দলের হয়েই তারা লড়–ক না কেন তারা বিপুল পরিমাণে ভোটার আকর্ষণ করতে পারেন।
ইমরান খান তার এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, এরা হলেন এমন নেতা যারা জানেন কিভাবে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে হয়। তারা দলের মতাদর্শকে কলুষিত করবেন না।
নির্বাচনে একক জয় পাওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা রয়েছে ইমরানের। এমনটি হলে জোট সরকারের গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তবে জোট সরকার গঠন করতে হলেও জারদারি পরিবার পরিচালিত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি অথবা নওয়াজ শরীফের দলের সাথে জোট গঠন করবেন না তিনি। এর কারণ হিসেবে ইমরান জানান, ‘ তাদের সাথে জোট তৈরি করলে, যে উদ্দেশ্য নিয়ে আপনি ক্ষমতায় যাচ্ছেন তা পরাজিত হবে।



 

Show all comments
  • Moin Uddin ২২ জুলাই, ২০১৮, ৮:১৯ এএম says : 0
    ইমরান খান এর জন্য ইলেকশন জিতাটা অনেক কঠিন হবে
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ হযরত আলী ২২ জুলাই, ২০১৮, ৮:১৯ এএম says : 0
    পাকিস্তানের নতুন সরকার গঠন করা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Mostafa Kamal ২২ জুলাই, ২০১৮, ৮:১৯ এএম says : 0
    ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন থেকে দেশের ক্যাপ্টেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Raju Khan ২২ জুলাই, ২০১৮, ৮:২০ এএম says : 0
    দুটো দেশ পাঠান আর খান দের ছাড়া অচল এক পাকিস্তান আর আফগানিস্তান
    Total Reply(0) Reply
  • Helal ২২ জুলাই, ২০১৮, ৮:২০ এএম says : 0
    ইমরান খান জয় হবে. সেনাবাহিনীর তাকে সাপোর্ট করে. করতেছে
    Total Reply(0) Reply
  • শাহরিয়ার শাকিল ২২ জুলাই, ২০১৮, ৮:২০ এএম says : 0
    দেখা যাক
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ