Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাজানো মামলায় গ্রেফতার সরকারের চরম স্বেচ্ছাচারিতারই বহিঃপ্রকাশ : খালেদা জিয়া

প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৩ পিএম, ১৬ এপ্রিল, ২০১৬

সাংবাদিক শফিক রেহমানের মুক্তি দাবি : বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল, বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা
স্টাফ রিপোর্টার : সিনিয়র সাংবাদিক কলমযোদ্ধা শফিক রেহমানের গ্রেফতারকে সরকারের চরম স্বেচ্ছাচারিতার বহিঃপ্রকাশ আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তুলে নিয়ে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
গতকাল এক বিবৃতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক শফিক রেহমান সত্য উচ্চারণের অবিচল এক সাহসী কলমযোদ্ধা। তাকে কব্জা করতে না পেরে সাজানো মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা সরকারের চরম স্বেচ্ছাচারিতারই বহিঃপ্রকাশ।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের উদ্দেশে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাইÑমামলা, হামলা, খুন, জখম, গুম, অপহরণসহ নানাবিধ বীভৎস অনাচার ঢাকতেই শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করেছেন। এর প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে জনদৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা।
সরকার প্রধানের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, বাক, ব্যক্তি, লেখনী, ভাষণ, মুদ্রণের স্বাধীনতাসহ জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন করবেন না। আপনি কখনোই শফিক রেহমানের মতো ঋজু ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান কলমযোদ্ধাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে পর্যুদস্ত করতে পারবেন না। কারণ আপনার সরকার আজ গণবিচ্ছিন্ন ও জনগণের শত্রুপক্ষ। অবিলম্বে দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া আরো বলেন, অবৈধ সরকার জনগণের বিরুদ্ধে এখন যুদ্ধ শুরু করেছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সাজানো মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক ও সম্পাদকদেরও গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশের স্পষ্টভাষী ও সত্য উচ্চারণে অকুণ্ঠ বিদ্বৎজনদেরও পছন্দের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে নির্মূলের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। খালেদা জিয়া বলেন, তাদের সেই দুরভিসন্ধি ও নির্মম আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটল অশীতিপর, দুর্জয় সাহসী সাংবাদিক ও কলামিস্ট শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর অনাচার, ব্যর্থতা ও কূপম-ূকতার বিরুদ্ধে অবিচল নির্ভয়ে লেখা এবং বর্তমান সরকার প্রধানের গণবিরোধী, অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারী নীতি শফিক রেহমান তার শাণিত লেখনীর দ্বারা ফুটিয়ে তোলেন। তিনি সত্য উচ্চারণে অবিচল ও সাহসী এক কলমযোদ্ধা।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, দেশে আজ সম্মানী ব্যক্তি ও সুধীজনদের মানহানি, গ্রেফতার করে কণ্ঠরোধ এবং নির্যাতনের মাধ্যমে তাদের নির্বাক করার হীন অপচেষ্টার কোনো অন্ত নেই। এটাই বর্তমান সরকারের সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
সাংবাদিক শফিক রেহমানের মুক্তি দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। আমাদের ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, শনিবার সকালে ঠাকুরগাঁও পৌর গোয়ালপাড়া এলাকায় অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এতে প্রমাণিত হয়, দেশে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং লেখার স্বাধীনতা নেই।
এদিকে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারে তাৎক্ষণিকভাবে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি শফিক রেহমানের বাড়ি গিয়ে তার স্ত্রী তালেয়া রেহমানের সঙ্গে কথাও বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, শফিক রেহমান সরকারের অনাচার-ব্যর্থতা, কূপম-ূকতার বিরুদ্ধে অবিচল নির্ভয়ে লিখে যান তার শাণিত লেখনীতে। শেখ হাসিনা এই ঘৃণ্য অপকর্মটি করলেন এই জন্য যে, তার হুকুমদার ও বাধ্য করার নীতি শফিক রেহমানের ওপর প্রয়োগ করা যায় না।
অবিলম্বে দলের পক্ষ থেকে শফিক রেহমানের মুক্তি দাবি করেন রিজভী। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুক্তি দেওয়া না হলে কঠোর কর্মসূচির দিকে আমরা এগিয়ে যাব। এটা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। শফিক রেহমানকে আটক করতে গিয়ে ডিবি পুলিশের টেলিভিশন সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ কারা চালাচ্ছে? কোন শকুনিরা এদেশটাকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে টুকরো টুকরো করছে।
বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল
সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্ত্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নাইটিংয়েল মোড় ঘুরে আবার নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়। মিছিলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা, সাইফুল ইসলাম পটু, কাজী রহমান মানিক, আশরাফুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, আখতারুজ্জামান বাচ্চু, আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল, ইকবাল আহমেদ, দুলালউদ্দিন প্রমুখ।
বিভিন্ন দল সংগঠনের নিন্দা ও উদ্বেগ
শনিবার এক বিবৃতিতে ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের ঘটনা ও রিমান্ডের নামে নির্যাতনের তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়েছে। ড্যাবের মহাসচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এক বিবৃতিতে শফিক রেহমানকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার ও রিমান্ডের নামে নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এছাড়া বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, অ্যাব, জাসাস, যুবদল, মহিলা দল এবং ২০ দলীয় জোটের শরীক জামায়াতে ইসলামীও এক বিবৃতিতে শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বিবৃতিতে বলেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান সরকারের জুলুমের শিকার হয়েছেন। শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুব আইনজীবী সমিতি। গতকাল শনিবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদ ফারুক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লা আল বাকী এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান। বিবৃতিতে আইনজীবী নেতারা বলেন, বর্তমান সরকার শফিক রহমানের মতো একজন বিশিষ্ট সাংবাদিককে গ্রেফতার করে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। শফিক রহমান গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতার পক্ষের লোক হওয়ায় সরকার তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে হাস্যকর একটি মামলা দিয়েছে। অনতিবিলম্বে শফিক রহমানের মুক্তি দাবি করেছে আইনজীবীদের এ সংগঠনটি।
মেয়র মান্নানের মুক্তি দাবি
এদিকে শনিবার পৃথক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অনির্বাচিত হওয়ায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তাদের পছন্দ নয়। তাই সম্পূর্ণ রাজনেতিক প্রতিহিংসায় তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করছে। একদলীয় শাসনকে দীর্ঘায়িত করতেই দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকা মেয়র মান্নানকে সাজানো মিথ্যা মামলায় আবারো গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপার্সন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান এর বিরুদ্ধে দায়ের করা সাজানো মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। মেয়র মান্নানের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও।
এদিন নয়াপল্টনে দলের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাজানো মামলায় গ্রেফতার সরকারের চরম স্বেচ্ছাচারিতারই বহিঃপ্রকাশ : খালেদা জিয়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ