পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছিম উল আলম : বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটে বেসরকারী নৌযান বন্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় বারবার হেরে যাত্রী পরিবহনের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ১৫ দিনের মাথায়ই ইজারাদার রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানÑ বিআইডব্লিউটিসি’র সি-ট্রাক সার্ভিসটি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বরিশাল থেকে লক্ষ্মীপুর হয়ে চট্টগ্রাম রুটের যাত্রীরা বেসরকারী নৌযানের ওপর পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। নানা কারিগরি জটিলতা সৃষ্টি করে টানা ৫মাস বন্ধ রেখে গত ১৬ মার্চ বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটে সি-ট্রাক ‘খিজির-৮’ চালু করেছিল বিআইডব্লিউটিসি’র ইজারাদার। কিন্তু বেসরকারী বিলাসবহুল নৌযানের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে শুরু থেকেই নানা অজুহাতে তা বন্ধের পথ খুঁজতে থাকে ইজারাদার।
এমনকি এ লক্ষ্যে সংস্থার ইজারাদার একই রুটের বেসরকারী নৌযানের সময়সূচী পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ পপরিবহন মন্ত্রণালয়েও নানা তদবির শুরু করে। কিন্তু আইনগতভাবে বেসরকারী নৌযানের সময়সূচী পরিবর্তনের কোন সুযোগ না পেয়ে অবশেষে যাত্রী না পাবার কথা বলে গত ৩১ মার্চ ইজারাদার সি-ট্রাকটি বন্ধ করে দেয়।
ফলে রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানটি সরকারী ভাষায় ‘গন দায়বদ্ধ সেবাখাত’ হিসেবে চিিহ্নত উপকূলীয় নৌপথ, বরিশাল-লক্ষ্মীপুর/মজুচৌধুরীর হাট রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ গত ৩১ মার্চ থেকে। ২০০২ সালে চীনা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় সংগ্রহ করা ৪টি সি-ট্রাকের মধ্যে ‘খিজির-৮’ দিয়ে ঐ বছরই জুন মাসে বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করে বিআইডব্লিউটিসি। প্রথমে সংস্থাটির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সার্ভিসটি পরিচালিত হলেও পরবর্তিতে অতিরিক্ত লাভের কথা বলে কতিপয় কর্মকর্তা পকেট ভারি করার লক্ষে ইজারাদার নিয়োগ করে তা পরিচালনা করতে গিয়ে সংস্থাটির লোকসানের বোঝাই ভারী হয়েছে। পাশাপাশি যাত্রীদের দূর্ভোগও বেড়েছে।
নানা প্রভাবশালী ব্যক্তি সি-ট্রাকটি ইজারা নিয়ে প্রতি বছরই মধ্য মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সার্ভিসটি পরিচালনা করে থাকে। আর মধ্য অক্টোবরে এসে নৌযানটিতে নানা কারিগড়ি ত্রুটি দাড় করিয়ে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। সংস্থাটির বানিজ্য ও কারিগরি পরিদফÍরের কতিপয় ব্যক্তির সহায়তায় গত ৭-৮ বছর ধরেই একই পরিস্থিতি চলে আসলেও দায়িত্বশীল মহল পুরো বিষয়টি বুঝেও না বোঝার ভান করে আসছেন।
ইতোমধ্যে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের অনুমোদিত নকশায় বেসরকারী সেক্টরে উপকূলীয় নৌপথের জন্য নিরাপদ ও বিলাসবহুল নৌযান ‘এমভি পারিজাত’ তৈরী হয়। এরপরেই বিআইডব্লিউটিসি’র ইজারাদার নামে-বেনামে বেসরকারী নৌযানটি বন্ধে উচ্চ আদালতে একাধীক রীট পিটিশন দায়ের করলেও তার প্রতিটিই খারিজ হয়ে গেছে। এমনকি একই বিষয় নিয়ে তথ্য গোপন করে বার বার হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে একের পর এক রীট পিটিশন দায়ের করার বিষয়ে একটি বেঞ্চ থেকে জরিমানাও করা হয়েছে আবেদনকারীকে। তিরস্কার করা হয়েছে আইনজীবীকে।
আইনের দরজা বন্ধ হবার পরে ইজারাদার বিআইডব্লিউটিসি’র মাধ্যমে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের শরণাপন্ন হয়। গত বছর ৭ ডিসেম্বর বিআইডব্লিউটিসি’র সচিব বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে লেখা এক চিঠিতে বরিশাল থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট রুটটি ‘ডেঞ্জার জোন’-এর আওতায় বলে অভিহিত করে ঐ নৌপথে বিভিন্ন সময়ে নৌ দুর্ঘটনায় অনেক মানুষের প্রানহানী ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি তার চিঠিতে ‘ঐ রুটে সংস্থাটির ৩টি সি-ট্রাক চার্টারের মাধ্যমে চলাচল করছে’ বলে দাবী করে সম্প্রতি ঐ রুটে বিআইডব্লিউটিএ দুটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নৌযান চলাচলের অনুমিত দেয়ার কথা বলে এর ফলে সংস্থার রাজস্ব ক্ষতির’ কথাও জানান। সংস্থার সচিব ঐ রুটে তাদের বাৎসরিক রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ১৩ লাখ ৪ হাজার টাকা বলেও দাবি করেন।
অথচ বিআইডব্লিউটিসি বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট ও ইলিশা-মজুচৌধুরীরহাট রুটে এ পর্যন্ত কখনোই ২টির বেশী সি-ট্রাক পরিচালনা করেনি। আর এসব সি-ট্রাক কখনোই মধ্য মার্চ থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত বছরে ৭ মাসের বেশি চলাচলও করেনি। আর বরিশাল-মজু চৌধুরীর হাট রুটে সারা বছর সার্ভিসটি পরিচালিত হলেও আয় সর্বমোট ৪০লাখ টাকার মধ্যে। আর ইলিশা থেকে যে সি-ট্রাক সার্ভিসটি পরিচালিত হচ্ছে সেখান থেকে আয় বছরে ২০লাখ টাকার বেশী নয়।
সংস্থার তরফ থেকে চিঠি পেয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৫ ডিসেম্বর বিআইডব্লিউটিএ’কে এক চিঠিতে যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়তের সুবিধার্থে ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত অশান্ত মওশুমে ‘বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট ও ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট রুটে ব্যক্তি মালিকানাধীন নৌযান চলাচলে রুট পারমিট প্রদান স্থগিত বা বাতিল’ করতে বলা হয়। অথচ গত বছর ১৯ নভেম্বর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব-প্রশাসন’-এর সভাপতিত্বে এক ত্রিপক্ষীয় সভায় মজুচৌধুরীরহাট নৌপথে শুধুমাত্র অশান্ত মৌসুমে বে-ক্রসিং সনদধারী নৌযান ব্যতীত অন্যকোন নৌযান পরিচালনার অনুমতি না প্রদনের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ‘যেসব নৌপথে বিআইডব্লিউটিসি’র সি-ট্রাকসমূহ চলাচল করে সেসব রুটে নতুন লঞ্চ চলাচলে অনুমতি প্রদানের আগে বিআইডব্লিউটিএ এবং টিসির সাথে সমন্বয় করে তা পরিচালনার অনুমতি দেবে বলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ-র রুট পারমিট বা সময়সূচি নিয়ে বিআইডব্লিউটিসি’কেও তাদের নৌযানসমূহ পরিচালনার সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয় ঐ সভায়। এরই প্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএ থেকে গত ১২ জানুয়ারী নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবরে এক চিঠিতে ‘এমভি পারিজাত’ ও ‘এলসিটি কুতুবদিয়া’ নামের দুটি নৌযানকে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর থেকে যথাক্রমে ব্রে-ক্রসিং সনদ ও ‘মৌসুমি অশান্তকালীন সময়ে আংশিক উপকূলীয় অঞ্চল তথা ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট নৌপথ অতিক্রম করার অনুমতি’ প্রদান করার কথা জানান। এরই প্রেক্ষিতে বিঅইডব্লিউটিএ থেকে জনস্বার্থে সরকারী বিধি বিধান অনুযায়ী ঐসব নৌযান চলাচলের অনুমতি প্রদান’-এর কথা জানায়।
এমনকি গত ১৮ জানুয়ারী নৌ পরিবহন মন্ত্রী মোঃ শাজাহান খানের সভাপতিত্বে এক সভায়ও বিআইডব্লিউটিএ থেকে রুট-পারমিট নিয়ে আইডব্লিউটিসি’কে নৌযানসমূহ পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এসব সিদ্ধান্তের আলোকে গত ১৫মার্চ ও ২৭মার্চ বিআইডব্লিউটিএ’র সচিব দুটি চিঠিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিসি’র ইতিপূর্বের চিঠিপত্রের সূত্র উল্লেখ করে সংস্থাটির চেয়ারম্যানকে তাদের চলমান সি-ট্রাকসহ সব ধরনের নৌযান চলাচলে রুট পারমিট সহ সময়সূচী গ্রহনের অনুরোধ জানানা। এমনকি গত ২৭ মার্চ সর্বশেষ চিঠিতে বিআইডব্লিউটিএ’র সচিব সংস্থাটির বরিশাল-মজুচৌধুরীর হাট রুটে চলাচলকারী সি-ট্রাকসমূহের জন্য প্রস্তাবিত নতুন সময়সূচী গ্রহনযোগ্য নয় বলে পূর্বের সময়সূচী মোতাবেক রুট পারিমট ও সময়সূচী গ্রহণের জন্য পুনরায় প্রসাতবনা পাঠাতে অনুরোধ করে চিঠি প্রেরন করেছেন। সংস্থাটির পক্ষ থেকে পূর্বের সময়সূচী পরিবর্তন করে বেসরকারী নৌযানের চলাচলকে ব্যাহত করতে নতুন সময়সূচীর আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে বিষয়টি নিয়ে গতকাল পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি বলে জানা গেছে। এসব ব্যাপরে বিআইডব্লিউটিসি’র জিএম-বাণিজ্য-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি ‘বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটে সি-ট্রাক সার্ভিসটি গত ১৭ দিন ধরে বন্ধ থাকার বিষয়টি অবহিত নন’ বলে জানান। তবে খোজ খবর নিয়ে এব্যপারে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহনের কথাও জানান তিনি। পাশাপাশি সি-ট্রাক সহ সংস্থার সব ধরনের নৌযান চলাচলে রুট পারমিট ও সময়সূচী গ্রহণে আইনগত বাধ্যবাধকতার বিষয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে বিআইডব্লিউটিএ’র বার বার তাগিাদের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সংস্থা কিছুটা বিব্রত হলেও এ লক্ষ্যে একটি সমাধান সূত্র খোঁজা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে কবে নাগাদ বরিশাল-লক্ষ্মীপুর রুটে সি-ট্রাক সার্ভিসটি যাত্রী পরিবহনে ফিরবে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক তিনি কিছু বলতে না পারলেও যত দ্রুত সম্ভব একটি সমাধান সূত্র বের করার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলেও জানান সংস্থাটির জেনারেল ম্যানেজার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।