পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : বাজারে চালের খুদ-কুড়ার দাম পঁচিশ টাকা কেজি আর গমের ভুষি ত্রিশ। পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহারের জন্য এসব বিক্রি হয়। এর চেয়ে কম মূল্যে গরিব মানুষকে চাল ও আটা দেবার জন্য ফেব্রুয়ারী মাস থেকে খোলা বাজারে চাল ও আটা বিক্রির উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু আড়াই মাসেও সাড়া মেলেনি বিক্রি কার্যক্রমে। বাজার মূল্যের অর্ধেক দামেও খাদ্য হিসাবে কিনছে খুব কম মানুষ। বাজারে যেখানে চাল বিক্রি হচ্ছে ত্রিশ-চল্লিশ টাকা আর আটা বাইশ থেকে ত্রিশ টাকার মধ্যে। খোলা বাজারে সরকারী চাল আটা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি চাল পনের টাকা আর আটা সতের টাকায়। সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পনের টাকা দরে খোলা বাজারে চাল বিক্রির লাল সালুর ব্যানার নিয়ে চাল ও আটা নিয়ে ট্রাকগুলো অবস্থান করে বিকেল পর্যন্ত। কিন্তু ক্রেতাদের আগ্রহ নেই এসব চাল আটায়। গত কদিন ধরে খোলা বাজারে চাল বিক্রির ট্রাকগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় মালামাল নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। ক্রেতার খবর নিয়ে। দু’চারজন আসছে খোঁজ খবর নিচ্ছে ভাল চাল আটা আছে কিনা। আবার কেউ কেউ কিনছে। তবে নিজেদের খাবার জন্য নয়। পোষা গরু ছাগল হাস মুরগীকে খাওয়ানোর জন্য। কেননা বাজারে পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত চালের খুদকুড়া আর গমের ভুষির দাম বেশী বলে। কারো কারো ক্ষুব্ধ মন্তব্য ছিল ওএমএসের চাল গরু ছাগলেও ক্ষেতে চায় না। খুদ আর ভুষির সাথে মেশাল দিতে হয়। কারণ এসব চাল আটা বেশ দুর্গন্ধযুক্ত আর তেতো স্বাদের। এসব চাল আটা খেতে যেখানে গরু ছাগলের অরুচি। সেখানে মানুষ খাবে কিভাবে। তবে মাঝে মধ্যে কোন কোন ট্রাকে দু-চার বস্তা ভাল চাল আসে। সেসব চালের জন্য খোঁজ খবর নেয় হতদরিদ্র মানুষ। চাল আটার ব্যবসায়ীরা বলেন খোলা ট্রাকে যে চাল বিক্রি হচ্ছে সেটা মানের দিক থেকে খুব নিচু এবং হাইব্রীড জাতের। ভাল চালের খোঁজ নিতে আসা বেশ ক’জন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন এর আগে তারা চাল কিনে নিয়ে ভাত রান্না করে খেতে পারেননি। ভাতের স্বাদও নেই আবার কেমন যেন ভ্যাপসা গন্ধ। শীতের সময় এ ভাত রান্না করে রাখা যায়নি। আর এখনতো খরা চলছে। নদীর ধারের বস্তীবাসী শরমনি বেগম বলেন, বাবা আমরা গরিব মানুষ। সকালে একবেলা রান্না করে দু’বেলা খায়। দুপুর রাতের জন্য একবারই রান্না করা। বার বার রান্না করার মত জ্বালানী পাবো কোথায়। কিন্তু ট্রাকের এসব চাল-আটা নিয়ে রান্নার পর সাথে সাথে না খেলে সব নষ্ট হয়ে যায়। ভার গুন্ধিয়ে যায় গন্ধ বের হয়। রুটি শুকিয়ে হয় খটখটে। রুটিতে স্বাদ নেই। তার চেয়ে একটু বেশী দাম দিয়ে বাজার থেকে কিনবো। কম কম খাবো সেই ভালো। মাঝে মধ্যে ভাল চাল আটা আসে বলে খোজ নিতে এসেছি। শুধু হতদরিদ্র মানুষ নয় মধ্যবিত্তরা খোঁজ নেন ভাল চাল আটার জন্য। বেশ কজন ক্ষুব্ধ ক্রেতা বলেন এসব চাল দেয়া হতদরিদ্র মানুষের সাথে উপহাস করা ছাড়া আর কিছু নয়।
ট্রাকে থাকা বেশ কজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন আমরা প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই করে চাল নিয়ে আসি। কিন্তু বিক্রি হয় খুব সামান্য। ডিলারশীপ ঠিক রাখতে বরাদ্দের মাল রোজ রোজ নিতে হয়। অনেকে বলেন মানুষ নিজেদের জন্য না হলেও পশুখাদ্য হিসাবে কিছু কিছু কিনে নিয়ে যায়। আবার অনেকে কিনে অগ্যতায়। গোডাউন থেকে ডিলারদের কাছে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হয় সাড়ে তের টাকা দরে। আর তারা বিক্রি করছেন পনের টাকা কেজি। অভিযোগ রয়েছে খোলা ট্রাকের এসব চাল একশ্রেণীর ব্যবসায়ী কিনে নিয়ে মধ্যম মানের চাল ও আটার সাথে মিশিয়ে বেশী দামে বিক্রি করছে। বিশেষ করে এসব বেশী বিক্রি হয় মহল্লার মুদি দোকান ও শহরের বাইরে। সরকারী খাদ্য গুদাম হতে এত নি¤œমানের চাল এলো কিভাবে। এনিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। সরকারাীভাবে চাল কেনার সময় স্বজন প্রীতি, নি¤œমান আর দলীয়ক্যাডারদের ব্যাপক অনিয়মের খবর তখনি বিভিন্ন পত্র প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। অভিযোগ ছিল প্রকৃত মিলাররা চাল সরবরাহ করতে না পারলেও সরবরাহ করেছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। বিভিন্ন মিলারের নামে ভুয়া বরাদ্দপত্র নিয়ে। সে সময় বাজারে ভারত থেকে ব্যাপক ভাবে আসা নি¤œমানের চাল বাজার সয়লাব ছিল। সে সব চাল ঢুকেছে খাদ্য গুদামে। তখন খাদ্য বিভাগ পত্রপ্রত্রিকার রিপোর্টকে প্রত্যাখান করা হলেও এখন থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ছ্।ে আঠাশ টাকা কেজিতে কেনা সরকারী চাল অর্ধেক দামেও কেউ নিচ্ছে না।
রাজশাহী অঞ্চলিক খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় বিভাগের বিভিন্ন খাদ্য গুদামে প্রায় লাখ তিনেক টন মোটা চাল মজুদ ছিল। সামনে বোরো মওসুমকে সামনে রেখে খোলা বাজারে চাল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গুদাম খালি করে বোরো সংগ্রহ করতে হবে। খাদ্য বিভাগের এক কর্তা ব্যাক্তি বলেন প্রায় এক বছর আগে এসব চাল কেনা হয়েছিল। চাল মোটা ও পুরানো হওয়ায় অর্ধেক দামেও ক্রেতা মিলছে না। অবশ্য তিনি দাবী করেন মানুষের রুচিতে পরিবর্তন আসায় মোটা চালের বিক্রি কমেছে। দু’জন ব্যবসায়ী বলেন প্রতিদিন খাদ্য গুদাম হতে টন টন চাল বের হচ্ছে। খোলা বাজারের জন্য। ক্রেতা নেই। তারপর এসব চাল যাবে কোথায় তার খোঁজ খবর রাখা দরকার। খোলা বাজারের নামে ফের এসব চাল মজুদ হয়ে যাচ্ছেনাতো। সামনে বোরো মওসুমে এগুলো আবার দ্বিগুন দামে গুদামে যাবে। খাদ্য গুদামের সাথে জড়িত একজন ব্যবসায়ী জানান এখানে বরাদ্দপত্র বেচাকেনা ভালই চলে। খাতা কলমে কম দামে চাল ডেলিভারী দেখানো হলেও বাস্তবে গুদামে মজুদ থাকে। পরে মওসুমে কেনার সময় ঐ পুরানো চালগুলো আবার নতুন করে সরবরাহ দেখানো হয়। গাই বাছুরে পিরিত থাকলে সবি হয়। এখানে ক্ষমতার দাপটের কাছে সব নিয়মনীতি অচল। ব্রাজিলের পচা গম নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হলেও শেষ পর্যন্ত গিলতে হলো বাংলার হতদরিদ্র মানুষকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।