পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুÐ থেকে ঃ বাপ-দাদাদের কাছ থেকেই তরমুজ চাষে হাতি খড়ি আমার। প্রথমদিকে তাদের সাথেই জমিতে আসা-যাওয়া করে চাষ করতাম। ১৯৯০ সালের পর আমি নিজেই চাষ করতে শুরু করি। লাভও হতো প্রচুর। সেই থেকে ২০০৫-০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে শুধু তরমুজ চাষ করেই আমি অন্তত ৩০ লাখ টাকা আয় করেছিলাম। যার অর্থ এক মৌসুমে তরমুজ চাষে আয় হতো অন্তত ২ লাখ টাকা। কিন্তু এরপর কোথা থেকে যেন দলা রোগ, পাতা মরা রোগ, হরিঙ্গা রোগসহ নানান রোগের উপদ্রব শুরু হলো ক্ষেতে। বহু ওষুধ ব্যবহার করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। একদিকে রোগ আর অন্যদিকে বৃষ্টিতে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে প্রতিবছর দারুণ লোকসানের শিকার হয়ে এখন তরমুজ চাষ একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছি। কথাগুলো বলছিলেন, সীতাকুÐের ঐতিহ্যবাহী তরমুজ চাষ অধ্যুষিত এলাকা মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী গ্রামের চাষী মো. সাহাব উদ্দিন। তিনি ঐ গ্রামের খোরশেদ মেম্বার বাড়ির মো. জাগির হোসেনের পুত্র। চাষী সাহাব উদ্দিন আরো বলেন, তরমুজ চাষে এত বেশি লাভ হতো যে, এই এলাকার সহ¯্রাধিক চাষীর কাছে এটিই ছিল প্রধান ফসল। আমি নিজেও ২ কানি (৩২০ শতক) জমিতে তরমুজ চাষ করতাম। কিন্তু রোগের উপদ্রবে প্রতিবছর লোকসান হতে থাকায় এখন এক শতক জমিতেও আর তরমুজ চাষ করছি না। শুধু আমি নই, হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া সবাই তরমুজ চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। তার মতে, আর চাষ করেই বা কি হবে? এখন তরমুজ চাষ মানেই নিশ্চিত রোগের উপদ্রব, নিশ্চিত লোকসান। সাহাব উদ্দিন যে মিথ্যা বলেন নি তা একবাক্যে স্বীকার করেন অন্য চাষীরা।
একই এলাকার চাষী নুর নবী মানিক জানান, একসময় তিনিও ২/৩ কানি পর্যন্ত জমিতে তরমুজ চাষ করতেন। কিন্তু দলা রোগ, পাতা মরা রোগের কারণে গত ৫/৬ বছরেও লাভের মুখ দেখেননি তিনি। এ কারণে প্রতিবছর আবাদের পরিমাণ কমিয়ে আনছেন। এবার মাত্র ২০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলেন। এতে বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিক মজুরিসহ বিভিন্ন খাতে খরচ হয়েছে অন্তত ১০ হাজার টাকা। কিন্তু ক্ষেতে ভয়াবহ সেই রোগের উপদ্রব ঘটেছে এবারো। এ চাষী বলেন, এ যেন এক অদ্ভুদ রোগ। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার যেন কোনো উপায়ই নেই! বহুরকম ঔষুধ ব্যবহার করেও সুফল মিলছে না। ১০ হাজার টাকা খরচ করে এক টাকাও উঠছে না। এ অবস্থায় আগামী দিনে আর তরমুজ চাষের চিন্তা করতে পারছেন না তিনি। সরেজমিনে গুলিয়াখালী গ্রামে ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ গ্রামে তরমুজ চাষের ইতিহাস কয়েক’শ বছর আগের। সুদীর্ঘকাল ধরে এ গ্রামের কৃষকরা বংশানুক্রমে তরমুজ চাষ করে আসছেন। এ এলাকার সাগর উপকূলীয় উর্বর মাটিতে তরমুজের ফলনও হতো খুব ভালো। ফলে কৃষকরা ব্যাপক লাভবান হতেন। মাত্র ৩/৪ বছর আগেও সীতাকুÐের গুলিয়াখালী গ্রামের তরমুজ সারাদেশে রপ্তানি হতো। কৃষকরা প্রতি শত তরমুজ আকৃতি অনুসারে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। এলাকার বহু মানুষ তরমুজ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয় করে ভাগ্যে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ সবকিছু বদলে গেছে। এখন আর সেদিন নেই। রোগের কারণে ক্রমাগত লোকসানের স্বীকার হয়ে এখন তরমুজ চাষ ছাড়তে পারলেই যেন বাঁচেন চাষীরা! গুলিয়াখালীর চাষী রুবেল সাহাব উদ্দিন, শাহাজাহানসহ কৃষকরা বলেন, কৃষি কর্মকর্তারা যা বলেছেন সব ওষুধই ব্যবহার করেছি। কোনো কিছুতেই দলা রোগ, পাতা মরা রোগ থেকে মুক্তি না মেলায় হতাশ আমরা। গুলিয়াখালীতে তরমুজ চাষ বন্ধের পথে একথা স্বীকার করে সীতাকুÐের উপ-সহকারী কৃষি ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ বলেন, গুলিয়াখালী তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত এলাকা হলেও এখন সেখানে মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে কিছু রোগ দেখা দিয়েছে। এসব রোগে গাছ কিছুটা ক্ষতিগস্ত হয়ে দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়া কালবৈশাখীর শিলা বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক কারণেও মাঝে মধ্যে ফসলহানি হয়। এ কারণে কৃষকরা ঝুঁকি না নিয়ে এখন অন্য ফসসের পাশাপাশি বাঙ্গি চাষ এখনো করছেন। তবে এ এলাকায় চাষ কমলেও বাড়বকুÐের মধ্যম মাহমুদাবাদ, হাসনাবাদসহ কিছু কিছু এলাকায় নতুন করে তরমুজ চাষ হচ্ছে। এবার প্রায় ৫০ হেক্টরের মত জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।