Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পলিথিন ছেড়ে ‘সোনালী ব্যাগ’ ব্যবহারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৮, ৩:৩৬ পিএম | আপডেট : ৫:১৬ পিএম, ১৮ জুলাই, ২০১৮

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি ‘সোনালী ব্যাগ’ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০১৮’- এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

একইসঙ্গে তিনি জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৮ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের স্মরণে সারাদেশে একযোগে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

এ সময় সোনালী ব্যাগের গুণাগুণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা শুনে খুশি হবেন যে, এখন পাটের পলিমার থেকে যেটা পচনশীল সেই ধরনের ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। আমরা এটার নাম দিয়েছি ‘সোনালী ব্যাগ’। এই সোনালী ব্যাগ পরিবেশ দূষণ করবে না।

তিনি বলেন, পাটকে তার সোনালী দিনে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ যেমন নিয়েছি, সেই সঙ্গে এই আবিস্কারটাও করা হয়েছে এবং পাটের ওপর গবেষণা চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আমি মনে করি এই সোনালী ব্যাগটা পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। তাছাড়া পাটের ছোট ছোট থলে, ব্যাগ এগুলোও ব্যবহার করা যায়। এমনকি ফ্যাশনের জন্যও ব্যবহার করা যায়। আমি যে ব্যাগটা (হ্যান্ডব্যাগ) ব্যবহার করছি সেটা কিন্তু পাটের তৈরি ব্যাগ।

পাট থেকে নানা ধরনের পণ্য তৈরির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা আমাদের জন্য বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী যখন পরিবেশের কথা আসছে, আমরা পাট উৎপাদনকারী একটি দেশ। এই পাট পণ্য উৎপাদন করে এর বহুমুখী ব্যবহার আমরা নিশ্চিত করতে পারি, বিদেশে রফতানিও করতে পারি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা চাই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারাও উদ্যোগটা নেবেন। ধীরে ধীরে প্লাস্টিকটাকে আস্তে আস্তে সরিয়ে দিয়ে… হয় এটাকে (প্লাস্টিক) পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে না হয় আস্তে আস্তে এটাকে সরিয়ে দিতে হবে।



স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গাছ লাগিয়ে দেশে প্রথম সারাদেশে বৃক্ষরোপন অভিযান শুরু করার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালিয়ে আসার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

দেশে এই প্রথমবারের মত মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে দেশের ৮১ হাজার ৪৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে বৃক্ষরোপনের উদ্বোধন করা হয়, যার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা দেশের সব মানুষকে বৃক্ষরোপন অভিযানে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য বৃক্ষরোপন একান্তভাবে প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কাজেই এজন্য আমি সবাইকে আহ্বান জানাই যে, প্রত্যেকে একটা বনজ, একটা ফলজ ও একটা ঔষধি গাছ লাগান।

শেখ হাসিনা জানান, তার নেতৃতত্বাধীন সরকার পরিবেশ সংরক্ষণকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবেশ বিষয়ক নতুন একটি ধারা সংযোজনের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে সাংবিধানিক দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি।

নদীর তীর, কবরস্থান, পতিত জমি এবং বাড়ির ছাদ ও ব্যালকনিসহ সর্বত্র গাছ লাগিয়ে সবুজ বেষ্টনি তৈরির ওপর গুরুত্তারোপ করেন তিনি। জায়গা-জমি পতিত না রেখে গাছ লাগানোর আহ্বান জানান তিনি।

তার সরকারের পদক্ষেপে দেশে সামাজিক বনায়নসহ সার্বিক বনায়ন বৃদ্ধির কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেখি সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির নামে টাকাগুলো কিছু এনজিওর ভেতর ভাগ করে দেওয়া হতো। তারা যে টাকাগুলো কী করতো হিসাব-নিকাশ ছিল না। তখন আমরা উদ্যোগ নিই সামাজিক বনায়নটা আরও ভালোভাবে করার।

আগের চেয়ে লভ্যাংশ বাড়িয়ে এবং বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে মানুষকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করে বনায়ন বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আমরা আসার সময় ৭ থেকে ৯ ভাগ বনায়ন ছিল। কিন্তু তারপর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে বর্তমানে ২২ ভাগে দাঁড়িয়েছে।

নতুন চর ও উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজবেষ্টনি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এবারে বৃক্ষরোপন অভিযান ও জাতীয় বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘সবুজে বাঁচি, সবুজ বাঁচাই, নগর-প্রাণ-প্রকৃতি সাঁজাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, যত বেশি সবুজে ভরে ফেলতে পারবো এই দেশ, তাতে মানুষ বাঁচবে।

বিশ্ব উঞ্চায়নের ফলে বাংলাদেশের বহু মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে সে প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরির কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর সময় কক্সবাজার উপকূলে সবুজবেষ্টনি গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে প্রতিটি উপকূলেই সবুজবেষ্টনি গড়ে তোলা হচ্ছে। একই সঙ্গে সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষায় নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন ২০১৮, বৃক্ষরোপনে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার ২০১৮ এবং জাতীয় পরিবেশ পদক ২০১৮’ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একটি ছাতিম গাছের চারা রোপন করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাছান মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ