পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টানাপোড়েন ও জটিলতা কাটিয়ে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে আশার আলো ফুটে উঠেছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ ভেদ করে দেশের প্রথম টানেল বা সুড়ঙ্গপথ তৈরির এই মেগাপ্রকল্প সরকারের অগ্রাধিকার বিবেচনায় ফার্স্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে। চীন কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন অধিকতর ইতিবাচক। চীন প্রকল্পটিতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। নানামুখী সমস্যা ও সংশয় পেছনে ফেলে অর্থছাড় অব্যাহত রেখেছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। এরফলে টানেলের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা তৈরির কাজ হচ্ছে গতিশীল।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক নির্মাণ (টানেল) প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রসঙ্গে গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মূল খননকাজের টার্গেট রেখেই এখন প্রস্তুতি চলছে। চীনে ইতোমধ্যে টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) নির্মিত হয়েছে। বৃহাদাকার এই খননযন্ত্র নিয়ে বিশেষায়িত একটি জাহাজ চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছাবে আশা করি। সমুদ্রপথে টাইফুন কিংবা বৈরী আবহাওয়া না থাকলে যথাসময়েই জাহাজ আসার কথা। এরপর তলদেশের দিকে খননকাজ আরম্ভ করার স্থানটিতে টিবিএম স্থাপন করা হবে। আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে টিবিএমের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুল প্রত্যাশিত মূল খনন কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, বর্তমানে প্রকল্পস্থলে টিবিএম স্থাপনের জন্য উপযোগী প্লাটফরম ও যাবতীয় কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। সেগমেন্ট তৈরি কাজ শেষ হয়েছে। ওয়ার্কশপ, প্ল্যান্টারের কাজ হচ্ছে। প্রকল্পে কর্ণফুলীর উভয় প্রান্তে টানেলের অবকাঠামো নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। টানেল মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে এ যাবত সার্বিক অগ্রগতি ১৮ শতাংশ বলে জানান তিনি।
এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে নিয়মিত তত্ত¡াবধান ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী, চায়না কোম্পানির পক্ষে প্রকল্প পরিচালক লি জেং এবং কনসালটেন্ট গ্যাভিন স্ট্রিডসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-প্রকৌশলীরা প্রকল্পস্থলে প্রতিদিন কাজ তদারকি ও পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ গত ৮ জুলাই কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পস্থলে সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চীনের ইতিবাচক মনোভাবের ফলে স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের সম্ভাবনা এখন জোরালো হয়েছে। চীন সরকারের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে চায়না এক্সিম ব্যাংক প্রতিশ্রæত ঋণ সহায়তার প্রায় ২০ শতাংশ ইতোমধ্যে ছাড় করেছে। যার পরিমাণ প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা। আগামীতে আরও আংশিক বরাদ্দ আসবে এমনটি আশা করছে কর্তৃপক্ষ। এরআগে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চায়না এক্সিম ব্যাংক টানেল প্রকল্প ও সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন বাহানায় একেক সময় একেক ধরনের ডকুমেন্ট চেয়ে বসে। তবে কোনো অনিয়ম পায়নি। এতে করে সময়ক্ষেপণ এবং কাজ শুরু না হতেই মেগাপ্রকল্প পড়ে জটিলতার মুখে। মাল্টি লেইন সড়ক বিশিষ্ট কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে চীন ২ শতাংশ হারে সুদে ২০ বছর মেয়াদি ঋণ প্রদানের কথা ৪ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। বাদবাকি অর্থ যোগানো হচ্ছে সরকারের প্রকল্প ব্যয় বাবদ।
কর্তৃপক্ষ সূত্র মতে, টানেলের জন্য অবকাঠামো তৈরির কাজ এবং মূল খননের লক্ষ্যে প্রস্তুতি-প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছে। চায়না এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে চীনের প্রতিশ্রæত অর্থ ছাড়করণ চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আরও বেগবান হবে। এ বিষয়ে আশ্বাসও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এক্সিম ব্যাংকের ছাড়কৃত অর্থ বাবদ টানেল প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) অবকাঠামো নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে পাহাড়ি খরস্রোতা কর্ণফুলী নদী এবং এর মোহনার বিশেষ ধরনের বৈশিষ্ট্যগুলোকে (মরফলজিক্যাল) মাথায় রেখে তলদেশ খননকাজের জন্য বড় আকারের একটি টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) তৈরি সম্পন্ন হয়েছে চীনে। এখন দেশে পৌঁছার অপেক্ষা। অক্টোবর মাসে টানেলের নির্মাণকাজ দৃশ্যমান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কর্ণফুলী টানেল মেগাপ্রকল্প ২০১৭ সালে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হওয়ার টার্গেট রাখা হয়েছে। চীনের সাংহাই মেগাসিটি ‘ওয়ান সিটি- টু টাউন’-এর আদলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে কর্ণফুলীর উভয়তীরে গড়ে তোলা, পরিকল্পিত উন্নয়ন ও নগরায়ন, দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দর সুবিধার স¤প্রসারণ, কর্ণফুলীর ওপারে দক্ষিণ চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ ও শিল্পায়ন, ব্যাপক কর্মসংস্থানের পথ সুগম করা, আধুনিক পর্যটন সুবিধা বিকশিত হবে এমনটি আশাবাদ কর্ণফুলী টানেলকে ঘিরে। সর্বোপরি যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা কানেকটিভিটির বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। অদূর ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং প্রদেশ পর্যন্ত সরাসরি আন্তঃদেশীয় মহাসড়ক যোগাযোগের লক্ষ্য নিয়েই টানেল মেগাপ্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। এর মধ্যদিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে। কর্ণফুলী টানেল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী অঙ্গীকার। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ভিত্তিফলক উদ্বোধন করেন।
বিশেষজ্ঞগণ সমীক্ষায় নিশ্চিত হন, কর্ণফুলী নদী মোহনার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এটি টানেল নির্মাণের যথেষ্ট উপযোগী। এ বিষয়ে কারিগরি সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা হয় ২০১৩ সালে। এই প্রেক্ষাপটে ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন বিশিষ্ট সড়ক টানেল নির্মাণ’ শীর্ষক মেগাপ্রকল্পটি সরকার অনুমোদন করে। ২০১৪ সালের ১০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেইজিংয়ে এ ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক সই হয়। ২০১৫ সালের ৩০ জুন নির্মাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি’র সাথে বাণিজ্যিক চুক্তি সই হয়। টানেলের সংযোগ, বিস্তার ও প্রবেশমুখ শুরু করা হতে যাচ্ছে বন্দরনগরীর প্রান্তে দক্ষিণ পতেঙ্গা-নেভাল একাডেমির মাঝ বরাবর এবং দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারা বহির্গমন পথ সিইউএফএল জেটিঘাট পয়েন্টে। মোট ৯ হাজার ২৬৫ দশমিক ৯৭১ মিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এই মেগাপ্রকল্পে টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৪ শ’ মিটার (প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এবং উভয়পাশে ৪৭৭ মিটার ওপেনকাট)। টানেলের অবস্থান ও পরিসর হবে কর্ণফুলীর তলদেশে ১২ থেকে ৩৬ মিটার পর্যন্ত গভীরে। চারলেনের এ টানেল হবে দুই টিউব বিশিষ্ট। টানেল নির্মিত হবে ‘শিল্ড ড্রাইভেন’ পদ্ধতিতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।