Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স

বিশেষ সংবাদদাতা, রাশিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

রোমাঞ্চকর ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের মুকুট মাথায় পরেছে ফ্রান্স। পাগলাটে ম্যাচে ক্রোয়াটদের ৪-২ গোলে হরিয়ে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করল ফরাসিরা। ঐতিহাসিক ম্যাচে জয়ের নায়ক অঁতোয়ন গ্রিজম্যান হলেও পল পগবা ও কিলিয়ান এমবাপের গোল দুটি ইতিহাসে স্বরনীয় হয়ে থাকবে।
ইতিহাসের ছোট্ট পাতায় লেখা হয়েছে কোচ দিদিয়ের দেশমের নামও। ব্রাজিলের মারিও জাগালো ও জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পর ইতিহাসের তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে খেলোয়াড় ও কোচ উভূমিকায় বিশ্বকাপ জিতলেন দেশম। দেশমের অধিনায়কত্বেই ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স।
ম্যাচ শেষে মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে ঝুম বৃষ্টি। সেদিকে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজলেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো, রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পাশে দাঁড়ানো ক্রোয়েশিয়া ও ফ্রান্স প্রেসিডেন্টকেও ভিজিয়ে দিয়েছে রশিক বৃষ্টি। পরে ছাতার আগমন ঘটলেও এমন রোমান্টিক দৃশ্যের অবতরণ সচারচার দেখা যায় না। বৃষ্টির মাঝেই ফিফা প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে গর্বের ট্রফি বুঝে নেন লেজ ব্লজ অধিনায়ক হুগো লরিস। হাতে নিয়েই সোনালী ট্রফিতে এঁকে দেন গর্বের চুমু। এর আগে সেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হিসেবে কিলিয়ান এমবাপে ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে লুকা মড্রিচের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্বীকৃতির ট্রফি। ঝুম বৃষ্টির পরও স্টেডিয়াম ছেড়ে যায়নি একটা দর্শকও। স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক ক্রোয়েশিয়াকে সমর্থন দিয়ে আসলেও চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে স্বাগত জানানে ভোলেনি তারা। মাঠে থেকেই পগবা-এমবাপে-গ্রিজম্যান-উমতিতি-কোন্তেদের উল্লাসের সাক্ষি হয়েছে লুজনিকির প্রায় আশি হাজার দর্শক।
এমন বিশ্বকাপ ফাইনাল কতদিন দেখেনি বিশ্ব। আধুনিক ফুটবল যুগে তো নয়-ই। বার বার পিছিয়ে পড়েও ভেঙে পড়েনি ক্রোয়েশিয়া। একচ্ছত্র বলের দখল রেখে আক্রমণের বাণ বইয়ে দিয়েছেন মড্রিচ-রাকিটিচরা। কিন্তু ফ্রান্সের জমাট রক্ষণের সামনে গিয়ে বার বার ফিরে আসতে হয়েছে তাদের। পক্ষান্তরে মাত্র ৩৪ শতাংশ বলের দখল রেখে শেষ হাসি হেসেছে ফ্রান্স। আসরজুড়ে স্বভাবসুলভ পাল্টা আক্রমণের মন্ত্রে এগুতে থাকা এমবাপে-গ্রিজম্যানরা এদিনও ক্রোয়াট রক্ষণকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন মুহূর্তের ঝটকায়। তবে এদিনও নিজের ছায়ায় ছিলেন কেবল অলিভার জিরুদ। আসরজুড়ে ৫৪৬ মিনিট মাঠে থেকেও গোল তো দুরের কথা পোস্টে একটা শটও রাখতে পারেননি ফরাসি নাম্বার নাইন।
বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রথমবারের মত আত্মঘাতি গোল করেন মারিও মানজুকিচ। তার গোলেই ম্যাচের ১৮তম মিনিটে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। দশ মিনিট পর লুজনিকি স্টেডিয়ামকে কাঁপিয়ে সমতায় ফেরে ক্রোয়েশিয়া। দারুণ আক্রমণকে সফলতায় রূপ দেন ইভান পেরিসিস, দুর থেকে জোরালো শটে বল জালে পাঠিয়ে। প্রথমার্ধেই ভাগ্যের ফেরে আবার পিছিয়ে পড়ে জাতকো দালিচের দল। ডি বক্সে হ্যান্ডবলের শাস্তিস্বরুপ ভিডিওর সহায়তায় ফ্রান্সের পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তা থকে আসরের চতুর্থ গোলে দলকে এগিয়ে নেন গ্রিজম্যান। এ ছাড়া প্রথমার্ধে বলার মত কোন সুযোগই তৈরী করতে পারেনি ফ্রান্স।
দ্বিতীয়ার্ধে ফরাসিরা খেলেছে ৫৯ থেকে ৬৫ মিনিট পর্যন্ত। স্বভাবসুলভ পাল্টা আক্রমণ থেকে প্রথমে জোরালো শটে ব্যবধান ৩-১ করেন পল পগবা। ছয় সিনিট পর প্রায় একই অবস্থান থেকে এমবাপের সফল শট (৪-১)। ১৯ বছর বয়সীর আসরের চতুর্থ গোল এটি। পেলের পর দ্বিতীয় টিনএজ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোলের কীর্তি গড়েন এমবাপে। একই সঙ্গে ১৯৭০ সালে পেলের ব্রাজিলের পর বিশ্বকাপের ফাইনালে চার গোল করার কৃতিত্ব দেয়ায় ফ্রান্স। চার মিনিট পর ফরাসি গোলকিপার হুগো লরিসের ভুলে ব্যবধান কমান মানজুকিচ। বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে একই ম্যাচে আত্মঘাতি গোলের পর দেশের পক্ষেও গোল করলেন জুভেন্টাস স্ট্রাইকার। ম্যাচের বাকি সময়ে প্রাণপোন চেস্টা করেও ফ্রান্সের জমাট রক্ষণ ভাঙতে পারেননি রাকিটিচ-মড্রিচরা। এক কথায় বললে- খেলেছে ক্রোয়েশিয়া, জিতেছে ফ্রান্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ