বাড়িতেই ফাইনাল দেখবেন আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট কাতারে
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচ দেখতে কাতারে যাচ্ছেন না আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। তিনি জানান, আজ
ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রান্স। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ২১তম আসরের ফাইনালে প্রথমবারের মত শিরোপা লড়াইয়ে ওঠা দলটিকে ৪-২ গোলে উড়িয়ে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তোলে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্স।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলার ১৮তম মিনিটের মাথায় গ্রিজমানের ফ্রি কিক হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালেই পাঠিয়ে দেন মানজুকিচ। তার ১০ মিনিট বাদেই দারুণ এক গোল করে সমতায় ফেরান পেরিসিচ।
তবে সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ২৪তম মিনিটে কর্নার থেকে উড়ে আসা বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে সেই মানজুকিচের হাতে লাগলে ভিএআরের সহায়তায় পেনাল্টির নির্দেশ দেন রেফারী। সেখান থেকে দলকে ফের এগিয়ে দেন গ্রিজমান।
বিরতি থেকে ফিরে আত্রমণের ধার বাড়ায় ফ্রান্স। যার ফলও পায় দিদিয়ের দেশমের দল। ম্যাচের ৫৯তম মিনিটে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পেয়ে যান এমবাপে। ক্রোয়াট ডি বক্সের সামনে জটলা ভেঙে চেষ্টা করেন গোলের। সেখান থেকে ফিরতি বল পেয়ে যান পল পগবা। সেই বল জালে জড়াতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তারকার।
তার ৬ মিনিট বাদেই ব্যবধান ৪-১ করেন কিলিয়ান এমবাপে। ৬৮ মিনিটে ফরাসি গোলরক্ষকে হুগো লরিসের ভুলে ব্যবধান কমান মানজুকিচ।
পরে আর কোন গোল না হলে ৪-২ ববধানেই শিরোপা নিশ্চিত হয় দিদিয়ের দেশমের দলটির।
২০ বছর আগে ফ্রান্সের কাছেই ভেস্তে গিয়েছিল ক্রোয়েশিয়ার সোনালী স্বপ্ন। স্বাধীনতার পর প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে এসেই সেবার বাজিমাত করে ফেলেছিল ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্সে চলে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। সেখানে ডেভর সুকারের গোলে এগিয়েও গিয়েছিল তারা। কিন্তু এরপর লিলিয়ান থুরামের দুই গোল তাদের হতাশায় ডুবিয়ে দেয়। সেমিফাইনালে গিয়েই থেমে যেতে হয় ক্রোয়েটদের, সুকার-বোবানদের সোনালী প্রজন্ম থেকে যায় ট্রফিবঞ্চিত।
ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে আছে ফ্রান্স, নিজেদের শেষ পাঁচ ম্যাচেই তারা অপরাজিত। আর বড় টুর্নামেন্টে আগের পাঁচ ফাইনালে তিন বার জয় পেয়েছে ফ্রান্স। ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে অবশ্য হেরেছিল। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়ার জন্য কোনো বড় টুর্নামেন্টে ফাইনাল এবারই প্রথম। নির্ভার হয়ে খেলতে পারলে আজ ফ্রান্সকে তারা চমকে দিতেই পারে। সেমি ফাইনালে খেলা দল দুটিই নামে ফাইনালে।
দুই দলই সেমি-ফাইনালের শুরুর একাদশ ফাইনালে রেখেছে। ক্রোয়েশিয়ার সামনে প্রথমবার ফাইনালে উঠে শিরোপা জয়ের হাতছানি। আর তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠা ফ্রান্সের লক্ষ্য দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়।
অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা ফ্রান্সের গ্রুপ পর্বের পারফরম্যান্স আশানুরূপ ছিল না। দ্বিতীয় ম্যাচে পেরুকে ১-০ গোলে হারানোর পর শেষ ম্যাচে ডেনমার্কের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে ফরাসিরা। তিন ম্যাচে দুই জয় ও এক ড্রয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের সেরা হয় তারা।
শেষ ষোলোয় আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে এবং কোয়ার্টার-ফাইনালে উরুগুয়েকে ২-০ গোলে হারায় ফরাসিরা। আর ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে সামুয়েল উমতিতির একমাত্র গোলে বেলজিয়ামকে হারায় ১৯৯৮ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
অন্যদিকে, ক্রোয়াটদের গ্রুপ পর্বের পথচলাটা ছিলা দারুণ। নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে শুরুর পর আর্জেন্টিনাকে ৩-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয় ক্রোয়েশিয়া। আর শেষ ম্যাচে আইসল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে তিন ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ‘ডি’ গ্রুপের সেরা হয় জ্লাতকো দালিচের দল।
ফ্রান্সের তুলনায় ক্রোয়েশিয়ার নকআউট পর্বের যাত্রাটা ছিল তুলনামূলক কঠিন। নির্ধারিত সময়ে কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি তারা। শেষ ষোলোয় ডেনমার্ক ও কোয়ার্টার-ফাইনালে রাশিয়াকে টাইব্রেকারে হারায় মদ্রিচ-রাকিতিচরা। আর সেমি-ফাইনালে মারিও মানজুকিচের অতিরিক্ত সময়ের গোলে ইংল্যান্ডকে হারায় ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপে অভিষেক আসরেই সেমি-ফাইনাল খেলা ক্রোয়েশিয়া।
ফ্রান্সের শুরুর একাদশ : হুগো লোরিস (গোলরক্ষক এবং অধিনায়ক), বেঞ্জামিন পাভার্ড, রাফায়েল ভারানে, স্যামুয়েল উমতিতি, পল পগবা, অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যান, অলিভার জিরুদ, কাইলিয়ান এমবাপে, এনগোলো কান্তে, ব্লেইসেস মাতুইদি, লুকাস হার্নান্দেজ। কোচ: দিদিয়ের দেশম।
ক্রোয়েশিয়ার শুরুর একাদশ : ড্যানিয়েল সুবাসিচ (গোলরক্ষক), সিমে ভ্রাসালকো, ইভান স্ট্রিনিচ, ইভান পেরেসিচ, ডেজান লভরেন, ইভান রেকিটিচ, লুকা মদ্রিচ (অধিনায়ক), মারসেলো ব্রজোভিচ, মারিও মানজুকিচ, আনতে রেবিচ, ডোমাগজ ভিদা। কোচ: জ্লাতকো দালিচ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।