Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকায় বৃহত্তম ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র উদ্বোধন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

যমুনা ফিউচার পার্কে চালু হল বিশ্বের বৃহত্তম ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র। গতকাল শনিবার সকালে শপিংমলের গ্রাউন্ড মাইনাস-১ (বেজমেন্ট বি-১) দক্ষিণ কোর্টে এ ভিসা কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।
অন্যদিকে গতকাল বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদা, রাজশাহীতে স্থাপিত “বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ভবন” এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। উদ্বোধন শেষে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের উপস্থিতিতে মোহাম্মদ নাজিবুর রহমান প্রিন্সিপাল (এ্যাডিশনাল আইজিপি), বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদা ও ডি. রানী ডলি বর্মন, ডিরেক্টর, সরদার বল্লবভাই প্যাটেল ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমি, হায়দ্রাবাদ কর্তৃক একটি দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের অর্থায়নে এ বিল্ডিং-টি নির্মান করা হয়।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী জেলার এমপি’গণ, স্বরাষ্ট্র সচিব, ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ও ভারতীয় হাই কমিশন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া গতকাল সকালে যমুনা ফিউচার পার্কে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র উদ্বোধনের পর কয়েকজন বাংলাদেশির হাতে প্রতীকী ভিসা তুলে দেন রাজনাথ সিং। পরে সাংবাদিকদের ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা বলেন, যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত এ ভিসা কেন্দ্রটি বিশ্বের বৃহত্তম ভিসা কেন্দ্র। সাড়ে ১৮ হাজার বর্গফুট আয়তনের এ কেন্দ্রটিতে ৭০০ জনের মতো বসার ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভিসা ইস্যু করা হয় বাংলাদেশ থেকে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ১৪ লাখ ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। আর উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ ভিসা ইস্যু করা হয়েছে।
ভারতীয় হাইকমিশনার আরও বলেন, ভিসার জন্য এখন আর রোদ-বৃষ্টিতে দীর্ঘ লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মনোরোম পরিবেশে সবাইকে সেবা দেয়া হবে। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, নতুন এ ভিসা আবেদন কেন্দ্রটি হবে ‘মডেল ভিসা কেন্দ্র’। সব ধরনের ভিসার আবেদন করা যাবে। ৪৮টি কাউন্টারে ভিসা প্রত্যাশীদের সেবা দেয়া হবে। প্রতিদিন অন্তত ৬ হাজার ব্যক্তি পাসপোর্ট জমা দিতে পারবেন। এ ছাড়া কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত টোকেন ভেন্ডিং মেশিন (প্রতীক্ষা সময় নির্দেশিত), আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা, কফি, কোমল পানীয় ও খাবার সুবিধা রয়েছে। জ্যেষ্ঠ নাগরিক, নারী, মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসা ভিসা আবেদনের জন্য আলাদা কাউন্টার থাকছে। একটি বিশেষ সহায়তা ডেস্ক এবং প্রিন্টিং, ফটোকপি ইত্যাদি সেবার জন্যও থাকছে বিশেষ কাউন্টার। সূত্রমতে, মতিঝিল ও উত্তরায় অবস্থিত ভিসা আবেদন কেন্দ্র আজ রোববার থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক কেন্দ্রে প্রতিস্থাপিত হবে। গুলশান ও মিরপুর রোড ভিসা আবেদন কেন্দ্র ৩১ আগস্টের মধ্যে স্থানান্তরিত হবে এখানে। এর পর থেকে ঢাকায় এটিই হবে একমাত্র ভিসা আবেদন কেন্দ্র। পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎকার সূচি (ই-টোকেন) ছাড়াই এখানে ভিসার আবেদন করতে পারবেন ভিসা প্রত্যাশীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা, যমুনা গ্রæপের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, যমুনা গ্রæুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম ও পরিচালক মনিকা ইসলাম। এছাড়া ভারতীয় হাইকমিশন ও ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিন দিনের সফরে গত ১৩ জুলাই শুক্রবার ঢাকায় আসেন। গতকাল শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে রাজশাহী যান। আজ রোববার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন রাজনাথ সিং। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতির পর ঢাকা ছাড়বেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ অভিন্ন ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি, পরিবার ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। এটি অবশ্যই একটি বিশেষ সম্পর্ক বহন করে। উভয় দেশ একটি সমন্বিত বাহিনী হিসেবে স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াই করেছে। আমাদের সৈনিকরা স্বাধীনতার জন্য একসঙ্গে রক্ত বিসর্জন দিয়েছে। যা ইতিহাসে পারস্পরিক আস্থার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
দুই দেশের পুলিশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক সই হয়ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ভারত-বাংলাদেশ অস্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাসী শক্তির মোকাবিলায় সব সময়ই হাতে হাত মিলিয়ে চলছে। আমাদের অংশীদারিত্ব জনগণের সমৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের মৌলবাদ এবং চরমপন্থার হাত থেকে রক্ষা করার জন্যও কাজ করছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার এবং তার সরকারের শূন্য সহনশীলতা নীতির প্রশংসা করে ভারত। ঘৃণা, সহিংসতা ও সন্ত্রাসের মতাদর্শ থেকে জনগণ ও সমাজকে রক্ষার অভিন্ন অঙ্গীকার থেকে আমাদের এই সহযোগিতার উৎপত্তি। আমরা এই যুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে আছি।
তিনি বলেন, আমি খুশি যে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে আমাদের সহযোগিতা কর্মসূচি ভালোভাবে এগোচ্ছে। গত কয়েক বছরে আমার বাংলাদেশে ৬৮১ পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ২০১৮-২০১৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য গান্ধীনগরের গুজরাট ফরেনসিক সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি, গাজিয়বাদের সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন এবং মেঘালয়ের নর্থ ইস্টার্ন পুলিশ একাডেমিতে নানা বিশেষায়িত পাঠ্যক্রমের ৩শ’ স্তটের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ যদি চায়, আমরা এখানেও তা করতে পারলে খুশি হবো।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি
উচ্চতায় পৌঁছেছে : রাজনাথ সিং
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন সন্ত্রাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও ভারত হাতে হাত রেখে কাজ করবে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে দুই দেশের সেনারা যেভাবে কাঁধে কাঁধ রেখে যুদ্ধ করেছে, তেমনি সন্ত্রাস ও চরমপন্থি মোকাবিলায় দুই দেশ হাতে হাত রেখে কাজ করবে। আজ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি উচ্চতায় পৌঁছেছে। আর এ সম্পকে বর্তমান অবস্থাকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোনালী অধ্যায় বলে আখ্যায়িত করেছেন। গতকাল বিকালে রাজশাহীর সারদায় অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে সদ্য নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ভবনের উদ্বোধনকালে তিনি এসব বলেন।
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে (সারদা) ভারত সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এ সময় ভবনের অত্যাধুনিক আইটি সেন্টারেরও উদ্বোধন করা হয়। এসব উদ্বোধনের সময় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও উপস্থিত ছিলেন। দুই দেশের স্বরাষ্টমন্ত্রী এগুলো উদ্বোধন করেন। রাজনাথ সিং বলেন, আমি খুশি যে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীসমূহকে প্রশিক্ষণ দিতে আমাদের সহযোগিতামূলক কর্মসূচি ভালভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে আমরা বাংলাদেশের ৬৮১ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। বাংলাদেশ যদি চায়, আমরা আরো এব্যাপারে সাহায্য করতে পারলে খুশি হবো। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাভেদ পাটোয়ারী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি রাজশাহীতে নিযুক্ত সহকারী ভারতীয় হাই কমিশনার অভিজিৎ চট্টোপ্যাধ্যায় প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
মৈত্রী ভবন উদ্বোধনের পর দুই দেশের পুলিশের মধ্যে দ্বি-পক্ষীয় সহযোগিতা বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে নিজ নিজ পক্ষে সই করেন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ নাজিবুর রহমান ও ভারতের হায়দরাবাদ প্যাটেল ন্যাশনাল পুলিশ অ্যাকাডেমির পরিচালক ডি রানি ডলি বর্মণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতীয় ভিসা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ