Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ইউপি নির্বাচন নিয়ে আ’লীগে কোন্দল-সহিংসতা বেড়েছে

প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আ’লীগে কোন্দল, সহিংসতা অব্যাহত আছে। চট্টগ্রাম, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে আ’লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সহিংসতায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ৪০ জন। এ সময় দলীয় অফিস, মোটর সাইকেল ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়তে হয়েছে। গুলিবিদ্ধ ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া রাজবাড়ির বালিয়াকান্দিতে আ’লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে সাংবাদিক-পুলিশসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০ জন। এ সময় ১টি মোটর সাইকেল ও ইজি বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে।
চট্টগ্রামে মনোনয়ন বঞ্চিতদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো : নগরীর বক্সি বিটে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গতকাল (শুক্রবার) হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। তাদের প্রতিহত করতে অপর গ্রুপ এগিয়ে এলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন জানান, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থানা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে দলীয় কার্যালয়ের এসে হামলা চালায়। এসময় তারা অফিসের ভেতরে টেবিল চেয়ারসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর ঢিল ছুঁড়ে হামলাকারীরা। পরে ১২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তিনভাগে ভাগ হয়ে একদল লালদীঘির পাড়, একদল জেনারেল হাসপাতালের সামনে ও একদল জামালখান সড়কে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় এসব এলাকায় উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট ও সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জুমার নামাজের সময় তারা এলাকা ছেড়ে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে ওই ঘটনার পর থেকে দলীয় কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
হামলাকারীরা চট্টগ্রামের আনোয়ারা-কর্ণফুলী এলাকার এমপি ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সকালে দলীয় কার্যালয়ে বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরে তা বাতিল করা হয়। এছাড়া আনোয়ারা উপজেলা ও কর্ণফুলী থানার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নামের তালিকা ঘোষণার কথা ছিল। আকস্মিকভাবে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থানা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে হামলা ও ভাংচুর চালায়। হামলার সময় কার্যালয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোন নেতা উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান মফিজুর রহমান।
দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৫
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতাঃমাদারীপুরের ইউপি নির্বাচন পরবর্তী সংঘাতে আওয়ামীলীগের বিবদমান দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে মস্তফাপুর ইউনিয়নের পৃথক ৩ স্থানে একাধিক সশস্ত্র সংঘর্ষে ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৩০ জন গুরুতর আহত হয়েছে। এসময় কমপক্ষে ১৫টি বাড়ি ঘর ভাংচুরও হয়েছে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের আ’লীগ দলীয় প্রার্থী কুদ্দুস মল্লিক এবং বিদ্রোহী প্রার্থী সোহরাব হোসেন খানের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। নির্বাচনে সোহরাব খান ৩৫০ ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী কুদ্দুস মল্লিকের কাছে পরাজিত হন। কিন্তু তিনি কুদ্দুস মল্লিকের বিরুদ্ধে জাল ভোট দিয়ে বিজয়ী হওয়ার প্রতিবাদ করায় নির্বাচনের দিন বিকেল থেকেই বিবাদ সৃষ্টি হয়। সরকারী দলীয় বিজয়ী প্রার্থী কুদ্দ্স মল্লিক ও তার সমর্থকরা পাল্টা পরাজিত প্রার্থী ও সমর্থকদের হুমকি ধামকি দিতে থাকে বলে বিবাদ ক্রমেই বাড়তে থাকে। সেই বিরোধের জের ধরেই শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত মস্তফ্াপুর এলাকায় দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় ও গুলীবর্ষণ হয়। এতে ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে এবং ১৫ বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়েছে। মাদারীপুর মডেল থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদ বলেন, দুই পক্ষের বাদল মীর (৩০), শাহ আলম (২৮), আরিফ হাওলাদার (৩০), শওকত হাওলাদার (৩২) এবং সাইফুল ইসলাম (৩১) গুলিবিদ্ধ হলে তাদেরকে ফরিদপুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় পাঠানো হয়েছে।
কাশিয়ানীতে পুলিশের ২১ রাউন্ড গুলি বর্ষণ
গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে নৌকার প্রচার মাইক ও নির্বাচনী ক্যাম্প অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। এ সময় আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধরা পুলিশ ও স্থানীয়দের ২টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করেছে। এ সময় পুলিশ ২১ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে কাশিয়ানী উপজেলার কাশিয়ানী সদর ইউনিয়নের বেলতলায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত সোমবার বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আলী খোকনের সমর্থক তপু শেখ পিঙ্গুলিয়া মাদ্রাসা এলাকায় পোষ্টার লাগাতে গেলে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ মশিউর রহমানের সমর্থকরা তাকে মারপিট করে। এ ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাশিয়ানী সদরের ১নং ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা নৌকার প্রচার মাইক ভাংচুর করে। পরে নৌকার সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার চেষ্টা করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরাও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেলতলায় অবস্থান নিয়ে নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্প অফিস ভাংচুর করে। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয়দের দুটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ২১ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে দু’পক্ষের লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কাশিয়ানী থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলাম ২১ রাউন্ড গুলি বর্ষণের কথা স্বীকার করে বলেন, এখন এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বালিয়াকান্দিতে সাংবাদিক-পুলিশসহ আহত ২০
গোয়ালন্দ উপজেলা সংবাদদাতা ঃ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রামদিয়া বাজারে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ ২০জন আহত হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। এসময় ১টি মোটর সাইকেল ও ১টি নির্বাচনী প্রচারণার অটো বাইক আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্তত ৭-৮টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হোসেন খান বৃহস্পতিবার রামদিয়া রেলওয়ে মাঠে এক নির্বাচনী সভার আয়োজন করে। সেখানে আগে থেকেই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ফারজানা জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও সাংবাদিক অবস্থান করছিল। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ইসলামপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল হোসেন খান তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মোটর সাইকেল, মিনি ট্রাক, ম্যাজিক গাড়ী, নসিমন, করিমন নিয়ে রামদিয়া রেলওয়ে মাঠে ঢোকে। ঢোকার সময় রামদিয়া বাজার থেকে তার গাড়ী লক্ষ্য করে আওয়ামীলীগের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আহম্মদ আলী মাষ্টারের সমর্থকরা ইট-পাটকেল ছোড়ে। এসময় উত্তেজিত হয়ে আবুল হোসেন খানের লোকজন ধাওয়া করলে একপর্যায়ে দু,গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে রনক্ষেত্রে পরিনত হয়। দু’ঘণ্টা ধরে চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। খবর পেয়ে বালিয়াকান্দি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহিদুল ইসলাম, পিপিএমের নেতৃত্বে আরো একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৫রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। সংঘর্ষে থানার এস,আই দিপন কুমার মন্ডল, সাংবাদিক এস,এম রাহাত হোসেন ফারুক, হাসানুজ্জামান, আবুল হোসেন খানের সমর্থক সালাম বিশ্বাস, আবুল কাশেম মোল্যা, আলমগীর হোসেন, মোহাম্মদ আলী খানসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদেরকে বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এসময় ১টি মোটর সাইকেল, আবুল হোসেন খানের নির্বাচনী প্রচার মাইক ও অটোবাইক পুড়িয়ে দেয় আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীরা। আরো অন্তত ৭-৮টি মোটর সাইকেল, ম্যাজিক গাড়ী ভাংচুর করে। সাংবাদিকদের নিকট থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় ও ২টি মোটর সাইকেল, আইফোন ভাংচুর করে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউপি নির্বাচন নিয়ে আ’লীগে কোন্দল-সহিংসতা বেড়েছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ