Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজনীতিতে নতুনের জোয়ার

প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫১ পিএম, ১৫ এপ্রিল, ২০১৬

বারবার বাধার মুখে পড়েও দলের জাতীয় কাউন্সিল শেষ করেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। গত ১৯ মার্চ দলটি ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করে। এরপর পর্যায়ক্রমে দলটি কমিটি ঘোষণা করছে। এখন পর্যন্ত ঘোষিত কমিটিতে নতুন নেতৃত্বের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। দলটির সাধারণ নেতাকর্মীরা তারুণ্যনির্ভর এ নতুন নেতৃত্বকে সাধুবাদ জানিয়েছে। তাদের বিশ্বাস অপেক্ষাকৃত তরুণ এ নতুন নেতৃত্ব আগামীর রাজপথের আন্দোলনে গতি এবং একই সঙ্গে সফলতাও আনতে পারবে। বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের পর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও কাউন্সিল আয়োজনে তৎপরতা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তাদের জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী জুলাই মাসের ১০ ও ১১ তারিখে এ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় কাউন্সিলকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রত্যাশা জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও ত্যাগী নেতারা মূল্যায়িত হবে। এরমধ্যে গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তর ও দক্ষিণ এ দুটি কমিটি দীর্ঘদিন পরে হলেও ঘোষণা করা হয়েছে। এ কমিটিতে পুরানোদের বাদ দিয়ে একেবারেই নতুন অপেক্ষাকৃত তরুণদেরই নেতৃত্ব দেয়া হয়েছে। জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে বিরোধীদলের আগামীর আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলায় আওয়ামী লীগও নতুনদের প্রাধান্য দেবে এমনটাই তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা।

কাউন্সিলে তরুণ নেতৃত্ব প্রাধান্য দেবে আ’লীগ
তারেক সালমান : কয়েক দফা পিছিয়ে আগামী জুলাই মাসে দলের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ওই মাসের ১০ ও ১১ তারিখে কাউন্সিলের দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়েছে দলটির। আগামীতে বিরোধীদলের আন্দোলন-সংগ্রামের কথা মাথায় রেখে এবারের জাতীয় কাউন্সিলে তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেবে দল আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবিলায় বিগত দিনে যেসব ত্যাগী নেতারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তাদের মূল্যায়ন করবে দলটি। জাতীয় কাউন্সিলের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর দলটির ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডি (৩ নম্বর) কার্যালয় নেতাকর্মীদের বিচরণে এখন সরগরম হয়ে উঠেছে।
গঠনতন্ত্র সংশোধন-সংযোজনসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঢেলে সাজানোর মধ্যদিয়ে আগামী সম্মেলনে দলে তারুণ্যের চমক দেখাতে চান দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। আগামী দিনের নেতৃত্বে এগিয়ে আনা হবে মেধাবী, সৎ, ত্যাগী ও তরুণদের। ১০ ও ১১ জুলাইয়ের জাতীয় সম্মেলনে এমনটাই দৃশ্যমান হবে বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রমতে, বিশ্ব রাজনীতির প্রতি নজর রেখেই আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজাতে চান শেখ হাসিনা। উন্নত বাংলাদেশ গঠন ও বিশ্ব পরিম-লে নিজেদের জানান দিতে বাংলাদেশী তরুণ রাজনীতিবিদদের প্রতি আস্থা রাখতে চান তিনি। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসার পর দলের প্রবীণ সদস্যদের পাশাপাশি সরকার পরিচালনায় মন্ত্রীসভাসহ বিভিন্ন দফতরে অপেক্ষাকৃত তরুণদের জায়গা করে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দায়িত্বপ্রাপ্ত তরুণ সদস্যরা যোগ্যতা প্রমাণে প্রবীণদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্যও দেখিয়েছেন। মন্ত্রী সভার মতোই আগামী দিনের দলে প্রবীণদের পাশাপাশি দক্ষ, যোগ্য, ত্যাগী, মেধাবী, পরিশ্রমী তরুণ নেতাদের এগিয়ে নিতে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ২০তম জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত নেতৃত্বে নতুনের জোয়ার তৈরি হবে। দেখা দেবে তরুণ নেতৃত্বের প্রাধান্য। এর আলোকেই আগামী জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিক সজীব ওয়াজেদ জয়। জাতীয় সম্মেলনে তিনি উপস্থিত থাকবেন বলেও দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন। জয়ের পাশাপাশি নেতৃত্বে আসতে পারেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহেনার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি। তিনি সপরিবারে অনেক দিন ধরেই দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস ও দলীয় বিভিন্ন ধরনের কর্মকা-ে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন। এ দু’জন তরুণ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির পরীক্ষিত, ত্যাগী, প্রবীণ ও মরহুম নেতাদের উত্তরসূরি এবং বিগত সময়ে সারাদেশে জনপ্রিয় রাজপথ দাবড়ানো একঝাঁক প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই দেয়া হবে। এর মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের মরহুম নেতা আবদুর রাজ্জাকপুত্র নাহিম রাজ্জাক এমপি, মরহুম আবদুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজামউদ্দীন জলিল জন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে প্রকৌশলী তানভির শাকিল জয়, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈমসহ আরও অনেকে। তবে দলটির অনেকেই আবার বলছেন, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা রাজনীতিতে আপাতত সক্রিয় নাও হতে পারে। এছাড়া, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন বর্তমান সহ-সম্পাদকের দায়িত্বরত মাহবুবুল হক শাকিল, মঞ্জুরুল হক লাভলু, বাহাদুর বেপারী, লিয়াকত শিকদার, ইসহাক আলী খান পান্না, সাইফুজ্জামান শিখর, ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ, মিহির কান্তি ঘোষাল, ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, গোলাম সারোয়ার কবির। এরা প্রায় সবাই সরকারসহ দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন, বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এবং দলের জন্য কাজ করে আসছেন। অনেকেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা, প্রকল্প, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তরুণ নেতৃত্ব বিকশিত করেছেন।
এদিকে, আগামী ১০ ও ১১ জুলাইয়ের সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীদের আরও একধাপ সামনে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য নিশ্চিত করেছেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মূল কমিটিতে নতুন করে যোগ হতে পারে হাফডজন নারী। আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে শেখ হাসিনাসহ ১০ জন নেত্রী ছিলেন। এর মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিনের মৃত্যুর পর এখন আছেন ৯ জন। এদের মধ্যে বাদ পড়তে পারেন অন্তত ৪ নারী নেত্রী এবং নতুন করে নেয়া হতে পারে আরও ৬ জনের মতো নারী সদস্য। নতুনদের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মারুফা আক্তার পপি, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী, মেহেজাবিন খালেদ এমপিসহ একাধিক নেত্রী।
কাউন্সিল প্রসঙ্গে একাধিক নেতা জানান, দলের অনেক নেতাই এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। আগের মতো দলে সময় দিতে পারছেন না তারা। ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে দলকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিতে স্বনির্ভর তরুণ নেতৃত্ব প্রয়োজন বলে মনে করেন দলের হাইকমান্ড। এক কথায় দলের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্বের জোয়ার তৈরি হবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। একই সঙ্গে নতুন কমিটিকে ঢেলে সাজাতে বিতর্কিত, দুর্নীতি ও পদবাণিজ্যে জড়িত, অযোগ্য ও সুবিধাবাদী কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে বাদ দেয়া হবে বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিটি সম্মেলনেই সংযোজন-বিয়োজন হবে এটাই নিয়ম। আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক দলই নয়, একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানও। কাজেই এখানে যোগ্য ও পরীক্ষিতরাই স্থান পাবেন। কোনো বিতর্কিত কিংবা উড়ে এসে জুড়ে বসা ব্যক্তিরা স্থান পাবেন না।
গতকাল শুক্রবার ফেনীর মহিপালে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে ওবায়দুল কাদের কাউন্সিলের মাধ্যমে দলে নতুন নেতৃত্ব আসবে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দলীয় নেতৃত্বে নতুন মুখ আসছে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দলীয় নেতৃত্বে নতুন মুখ আসলে দলে রক্ত সঞ্চার হবে। তারা দেশের উন্নয়নে কাজ করবে। এ সময় তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একটা ঐতিহ্যবাহী দল। সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রযুক্তির সমন্বয় করে আসন্ন সম্মেলনে দলের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এর মাধ্যমে দলটির নেতৃত্বে নতুন রক্ত সঞ্চালন হবে।
সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় তারুণ্যকে এগিয়ে রাখে। বর্তমানে জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ এবং দলে তরুণ নেতৃত্ব বিদ্যমান। আগামীতে যোগ্যতা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটিতে মেধাবী তরুণ নেতাদের ঠাঁই দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। তিন বছর মেয়াদি বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত ডিসেম্বরেই। ৯ জানুয়ারি মেয়াদ ছয় মাস বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফা বৈঠকে ১০ ও ১১ জুলাই নির্ধারণ করা হয় দলের নতুন কাউন্সিলের দিনক্ষণ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজনীতিতে নতুনের জোয়ার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ