পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোগান সিরিয়া ও ইয়েমেন সংঘাতসহ বিভিন্ন সংকটকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যেকার সকল ধরনের তিক্ত গোষ্ঠিগত বিভেদ-বিভাজন কমিয়ে আনতে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে দুদিনব্যাপী ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে গতকাল সমাপনী অধিবেশনে তিনি এই আহ্বান জানান।
সুন্নি শক্তি সউদী আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ এবং শিয়া শক্তি ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিসহ মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দ ইস্তাম্বুলে দুদিনব্যাপী ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। সিরিয়া ও ইয়েমেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে তিক্ত বিরোধ রয়েছে।
তবে তুরস্ক এই শীর্ষ সম্মেলনকে মুসলিম বিশ্বের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান বিশ্বের ১ শো ৭০ কোটি মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ করতে এই শীর্ষ সম্মেলনকে মিশন হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
এরদোগান বসফরাসের তীরে দোলমাবাহেক প্রাসাদে বৃহস্পতিবার দিন শেষে আনুষ্ঠানিক ভোজসভায় মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের জন্য তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। বসফরাসের প্রাসাদ থেকেই ওসমানীয় সুলতানরা মুসলিম সা¤্রাজ্য শাসন করেছেন। এক সময় ইউরোপের বলকান থেকে সউদী আরব পর্যন্ত বিশাল ভূখ- ওসমানিয়া সা¤্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এরদোগান বলেন, সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা মুসলিম দেশগুলোর এই সম্মেলনে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা হচ্ছে দুনিয়ার সকল মুসলমানকে একত্র করা এবং তাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা। এই বার্তাই সম্মেলনে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে বিশ্ব মুসলিম পরিবারকে আশাবাদী করে তোলা। আল্লাহর ইচ্ছায় এই সম্মেলন আমাদের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করবে। তিনি বলেন, আমাদের সামনে যে সমস্যগুলো রয়েছে তা অবশ্যই বড় সমস্যা। আমরা এখন এক কঠিন সময় অতিক্রম করছি। তবে আমাদের কখনোই আশা হারানো উচিত নয়।
এই শীর্ষ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে এরদোগান আগামী দুই বছরের জন্যে ওআইসির চেয়ারম্যানশিপের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।
এই শীর্ষ সম্মেলনকে তুরস্ক ও সউদী আরবের মধ্যে একটি শক্তিশালী জোটের উন্মেষ হিসেব দেখা হচ্ছে। দুটি দেশটি সুন্নি অনুসারী এবং মুসলিম বিশ্বের শক্তিশালী দেশ। উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা কাউন্সিল গঠনে বৃহস্পতিবার একটি মেমোরেন্ডামও স্বাক্ষর করেন। এই দুই দেশ এবং ক্ষুদ্র অথচ গ্যাস সমৃদ্ধ কাতার সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহীদের সমর্থন করে।
আংকারা-রিয়াদের এই উদ্যোগ ইরান এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের ঐক্যবদ্ধ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাশিয়ার একটি জঙ্গী বিমান ভ’পাতিত করার পর দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তুরস্কও কঠিন সংকটে রয়েছে। এছাড়া তুরস্কের বৈরী সিরিয়ার আসাদ সরকারের সমর্থনকারী বড় শক্তি হচ্ছে রাশিয়া।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে সউদী আরবের সঙ্গে তার মৈত্রী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তুরস্ককে সাবধানে পা ফেলতে হবে যাতে এই জোটকে শিয়া ইরানকে লক্ষ্য করে একটি সুন্নি ইউনিয়ন হিসেবে দেখা না হয়।
একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখার আংকারার আকাক্সক্ষার ইঙ্গিত হচ্ছে শীর্ষ সম্মেলনের পরপরই তুরস্কে ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানির দ্বিপক্ষীয় সফরের কথা রয়েছে।
এর আগে এরদোগান বলেন, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দ একমত হয়েছেন। ওআইসি সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। এরদোগান বলেন, বিশ্বের মুসলিম নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতপার্থক্য ঘুচিয়ে ঐক্যের সেতু গড়ে তোলার জন্য এ সম্মেলন একটি বিরাট উদ্যোগ।
ইস্তাম্বুল সম্মেলনে ৩০টিরও বেশি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান যোগ দেন।
এদিকে তুরস্ক ভিত্তিক খবরে বলা হয়, একটি সন্ত্রাস বিরোধী সংস্থা গঠনে মুসলিম দেশগুলোএকমত হয়েছে। তুর্কী প্রেসিডেন্ট সন্ত্রাসবাদকে মুসলিম দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াইয়ে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ভেদাভেদকে দূরীকরণের আহ্বান জানান।
তবে কেউ কেউ ধারণা করেছিল যে সিরিয়া এবং ইয়েমেন ইস্যু নিয়ে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে দেশগুলো। নিরাপত্তার অজুহাতে অবশ্য অনেকেই সম্মেলনে অংশ নেয়নি। অনুপস্থিতদের মধ্যে জর্দানের বাদশা আবদুল্লাহ এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আলসিসিও রয়েছেন। ২০১৩ সালে মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির কাছ থেকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে তুরস্কের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক আর স্থাপিত হয়নি মিসরের। এছাড়া সিরিয়া ইস্যুতে মতভেদের কারণে আসেন নি জর্দানের বাদশাহ।
অপরদিকে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এমন এক সময়ে সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়, যখন ইসলামি বিশ্ব নিজেদের মধ্যেই নানা বিবাদে লিপ্ত। তিনি আরো বলেন, নিজেদের ভাইদের মধ্যে বিবাদ সবচেয়ে বড় কষ্টের কারণ। গোষ্ঠীতন্ত্র পুরো উম্মাহকে বিভক্ত করে রেখেছে। আশা করি, এসব সমস্যা নিরসনে সম্মেলনটি ভূমিকা রাখবে। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, মুসলিম উম্মাহ আজ আঞ্চলিকতায় বিভক্ত। এই শীর্ষ সম্মেলনই হতে পারে মতপার্থক্য ঘোচানোর অন্যতম ক্ষেত্র, তিনি এমনটা উল্লেখ করে বলেন, আশা করছি, এই সম্মেলন আমাদের মধ্যকার সংঘাতে সৃষ্ট ক্ষতের উপশমে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ওআইসি শীর্ষ সম্মেলন শুরুর প্রাক্কালে সউদী বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ তুরস্কে দুদিনের সরকারী সফর করেন। মিসরের মুসরিকে কেন্দ্র করে তুরস্কের সঙ্গে সউদী আরবের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। এসব মতপার্থক্য দূর করে নতুন সম্পর্কের সূচনায় বাদশাহ সালমানের তুরস্ক সফর খুবই ফলপ্রসু হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।