Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোরতাদ ও ভন্ড নবীদের কবল হতে দ্বীনকে মুক্ত করেন প্রথম খলিফা

প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কে এস সিদ্দিকী
(৮ এপ্রিল প্রকাশিতের পর)
মদীনার আশপাশে অবস্থানকারী বিভিন্ন গোত্রের যেসব লোক ইসলাম গ্রহণের পর প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর আমলে ইসলাম ত্যাগ করে মোরতাদ হয়ে যায়, ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং ইসলামের অন্যতম রোকন জাকাতকে কর আখ্যায়িত করে তা প্রদানে অস্বীকৃতি প্রদান করে তারা ইসলামের নব্যশত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং মদীনা আক্রমণ করে তা অধিকার করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ফলে মদনীর নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠে। অপরদিকে মোসায়লামাতুল কাজ্জাবসহ আরবের নানা স্থানে নব্যুওয়াতের মিথ্যা দাবিদারেরাও এ সুযোগে নতুন উৎপাত শুরু করে। খলিফার নিকট এসব খবর আসতে থাকে। খলিফা মদীনার নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে মোরতাদ জাকাত অস্বীকারদের দমন অভিযান শুরু করেন এবং অচিরেই তাদের দমন করেন।
অতঃপর ভ- নবীদের দমনের পালা। ওরা নানা স্থানে ছিটিয়ে ছড়িয়ে ছিল। স্বতন্ত্রভাবে ওদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা খুব সহজ ব্যাপার ছিল না। ভ- নবীদের অনুসারীদের মধ্যে প্রথমে ইসলাম গ্রহণকারীর লোক ছিল যারা প্রতারণার শিকার হয়ে ভ- নবীদের অনুসারী হয়ে যায়। প্রথমে ওদের প্রত্যেকের নামে একই মর্মে আলাদা আলাদা পত্র প্রেরণ করেন খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)। পত্রের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম লেখার পর হুজুরে (সা:)-এর রেসালত ও তাঁর ওফাতের কথা উল্লেখ করে লেখা হয়; আমি জেনেছি যে, তোমাদের মধ্যে যারা প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং ইসলামের আহকাম-নির্দেশাবলী মেনে চলছিল, এখন তারা সেই দ্বীনকে ত্যাগ করে চলেছে। যারা নিজেদের অজ্ঞতায় আল্লাহকে চিনতে পারেনি এবং শয়তানের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়েছে- আমি মোহাজেরীন, আনসার এবং তাবেঈনের লশকরের সাথে অমুককে তোমাদের নিকট প্রেরণ করেছি এবং তাকে নির্দেশ দিয়েছি যে, সে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের সাথে যুদ্ধ ও লড়াই হতে বিরত থাকবে, যতক্ষণ সে তোমাদেরকে আল্লাহর প্রতি আহ্বান করবে। যে এ কথা মানবে, ইসলাম গ্রহণ করবে, নিজের অবৈধ কর্মকা- হতে বিরত থাকবে এবং নেক কাজ করতে শুরু করবে তার বিরুদ্ধে সে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না বরং তার সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করবে। কিন্তু যারা ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাবে তাদের সম্পর্কে আমি আমার নির্দেশ এই যে, তাদের সাথে যুদ্ধ করা হবে, তাদের আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হবে, তাদের হত্যা করা হবে, তাদের বিবি-বাচ্চাদের কয়েদ করা হবে এবং তাদের কাছ থেকে ইসলাম ছাড়া আর কিছুই গ্রহণ করা হবে না। যে ব্যক্তি এসব বিষয় মেনে নেবে এবং ইসলাম কবুল করবে তা হবে তার জন্য কল্যাণকর কিন্তু যে ব্যক্তি এরূপ করবে না, সে আল্লাহকে কিছুতেই অক্ষম করতে পারবে না। আমি প্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছি যে আমার এই পত্র তোমাদের সমাবেশে পাঠ করে শুনাবে এবং এই চিহ্ন নির্ধারণ করে দিয়েছি, যে বস্তির লোকেরা আজান উচ্চারণ করবে তাদের প্রতি কোনো হস্তক্ষেপ করা হবে না। আর যদি তারা ইসলামকে স্বীকার করে নেয়, তাদের এ স্বীকারোক্তি গ্রহণ করা হবে।’
চিঠিখানা লিখে প্রত্যেক লশকরের নিকটি (একই চিঠির কপি) সমর্পন করা হয় এবং তাদের নির্দেশ প্রদান করা হয় যে, এ চিঠি আমজনতার সমাবেশে শুনিয়ে দিতে হবে এবং মোরতাদদের ইসলামে ফিরিয়ে আনার সম্ভাব্য সকল প্রকার চেষ্টা চালাবে। একই সময় হযরত সিদ্দীকে আকবর সেনাপ্রধানদের প্রতি একটি নির্দেশনামা একই মর্মে প্রদান করেন, তারা প্রত্যেকেই তার কপি নকল করে সঙ্গে নিয়ে যান। এ নির্দেশনামায় বলা হয় ঃ
এ অঙ্গীকারনামা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খলিফা আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর পক্ষ হতে এবং অমুক ব্যক্তি হতে নেয়া হচ্ছে যখন সে ইসলাম ত্যাগকারী লোকদের সাথে যুদ্ধ করতে যাবে অমুক ব্যক্তি হতে এ অঙ্গীকারনামা নেয়া হচ্ছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তার পক্ষে সম্ভব হবে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে চলবে। আল্লাহর পথে সর্ব প্রকারের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। সেসব লোকের সাথে যুদ্ধ করবে যারা ইসলাম ত্যাগ করে শয়তানের পথ অনুসরণ করেছে। তবে হুজ্জত বা দলিল কায়েম করার জন্য প্রথমে তাদের ইসলামের প্রতি আহ্বান জানাবে, তারা যদি ইসলামের গ-ির মধ্যে চলে আসে তাহলে তাদের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না। কিন্তু তারা যদি অস্বীকার করে তাহলে তাদের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না তারা ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণা করবে। যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে ঐ ব্যক্তি তাদেরকে ইসলামের সকল অধিকার ও সকল কর্তব্য (ফরজসমূহ) অবহিত করবে যেগুলো তাদের জন্য প্রযোজ্য এবং যেগুলো তাদের জন্য সরকারের পক্ষ হতে নির্ধারিত হয়েছে। অতঃপর যেসব দায়িত্ব তাদের প্রতি প্রযোজ্য সেগুলো প্রতিপালনের ব্যবস্থা করবে এবং যেসব অধিকার তারা লাভ করবে সেগুলো তারা পূরণ করবে। মোরতাদ অবস্থায় তাদের সাথে কোনো প্রকারের সাহায্য-সহানুভূতির প্রদর্শন করা যাবে না এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করতে বিমুখ হবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহতালার নির্দেশাবলী পালন করার কথা স্বীকার করবে তা হলে তার এ স্বীকারোক্তি গ্রহণ করা হবে এবং প্রত্যেক সৎ কাজে তাকে সাহায্য করা হবে।
কিন্তু যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর আবার আল্লাহতালাকে অস্বীকার করে (নাস্তিক হয়ে যায়) তাহলে তার সাথে যুদ্ধ করতে হবে, তবে সে যদি দ্বিতীয়বার ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করে তাহলে তার কাছে কোনো প্রকারের কৈফিয়াত চাওয়া যাবে না। অতঃপর সে যদি মনে মনে ভিন্ন কিছু পোষণ করে এবং তা গোপন রাখে তা আল্লাহতালাই দেখবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দেবে না তাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই হত্যা করা হবে এবং তার কাছ থেকে ইসলাম ছাড়া আর কিছুই গ্রহণ করা হবে না। যে ব্যক্তি ইসলামের দাওয়াতে ঈমান আনবে তার এ স্বীকারোক্তি গ্রহণ করা হবে কিন্তু যে অস্বীকার করবে তার সাথে যুদ্ধ করা হবে। যদি আল্লাহর পক্ষ হতে ঐ মোরতাদের ওপর বিজয় লাভ হয়, তাহলে ঐ মোরতাদকে তরবারি দ্বারা এবং আগুন দিয়ে হালাক করা হবে। গনিমতের যে মাল অর্জিত হবে তার খুমুস ব্যতীত (এক-পঞ্চমাংশ) সৈন্যদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে এবং খুমুস আমাদের কাছে আসতে হবে। সৈন্যদের সাথে প্রেরিত ব্যক্তিকে এই অঙ্গীকারও করতে হবে, সে নিজের সঙ্গীদের তাড়াহুড়া ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি হতে বিরত রাখবে। অপর কোনো ব্যক্তিকে তার বাহিনীতে প্রবেশ করতে দেবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার পরিচয় সঠিকভাবে জানবে। যাতে গুপ্তচরদের ফেতনা হতে রক্ষা পায়। উপস্থিতি ও সফরে মুসলমানদের সাথে কেমন আচরণ করবে এবং তাদের ভালো বাসবে, তাদের প্রয়োজন-চাহিদাগুলোর কথা মনে রাখবে এবং মুসলমানদের এসব বিষয়ের কথা স্মরণে রাখার তাগিদ করবে এবং উত্তম সংশ্রব অবলম্বনের উপদেশ দেবে, তারাও যেন নিজের সঙ্গীদের সদাচরণ করে।
খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীককে এ দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নির্দেশনামার বিবরণ উপরে তুলে ধরা হলো। মোরতাদদের প্রতি এবং মুসলমান সৈন্যদের প্রতি এসব নির্দেশনা খলিফার দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে।
ভ- নবীদের তা-ব দমন : হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর খেলাফত আমলে মুসলিম সৈন্যদের মোট সংখ্যা দশ হাজারের অধিক হবে না, এ সংখ্যা একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী। এ দশ হাজার সৈন্যকে তিনি বারো ভাগে ভাগ করেছিলেন। যাদের মোরতাদ দমনে নিয়োজিত রাখা হয়। এ বারোটি অংশ মোরতাদদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য আরবের নানা স্থানে যাত্রা করে। মুসলিম বাহিনী সব স্থানেই বিজয় লাভ করে এবং আরবে শান্তি স্থাপন করে, বিভেদ সৃষ্টিকারীদের নির্মূল করে। এভাবে আরব ভূমিতে ইসলাম পুনর্জ্জীবিত হয়।
যেসব গোত্রের মোরতাদ জাকাত অস্বীকারকারী ও ভুয়া নবীদের ইসলামের যুদ্ধ সংঘটিত হয় সেগুলোর সংখ্যা মোটেও কম নয়। এসব যুদ্ধের পূর্ণ বিবরণ দেয়া এখানে সম্ভব নয়। তবে সাধারণ অবগতির জন্য ভ- নবীদের নাম ও স্থানের নাম এবং তাদের পরিণতির কথা দিয়ে এ নিবন্ধ শেষ করতে চাই। খলিফার এসব অভিযানের তালিকা নি¤œরূপ :
১. তোলাইহা ইবনে খোওয়াইলেদ আল-আসাদী : মদীনার আশপাশে বসবাসকারী গোত্রগুলোর মধ্যে বনু আসাদ একটি। তোলাইহা গোত্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিল। রাসূলুল্লাহ (স.)-এর জীবদ্দশায় সে মিথ্যা নবুওয়াতের দাবি করেছিল। হুজুর (স.)-এর ওফাতের পর সে খুবই শক্তি অর্জন করে এবং কয়েকটি গোত্রকে তার সাথে নিয়ে প্রথমে নবুওয়াতের দাবি করে এবং কিছু লোক তার অনুসারী হয়ে পড়ে। তায় এবং গতফান গোত্রদ্বয় তার অনুসারী হয়। সিদ্দিকী খেলাফত আমলে হযরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) তার মোকাবিলার জন্য প্রেরিত হন। ‘বাজ্জাখা’ নামক স্থানে মোকাবিলা হয়। হযরত খালেদ (রা.) বিজয় লাভ করেন। তোলাইহা পালিয়ে যায়। তবে পরে ফিরে এসে ইসলাম গ্রহণ করে। হিজরী ২১/৬৪২ সালে মৃত্যুবরণ করে।
২. সাজাহ বিনতে হারেশ : রাসূলুল্লাহ (সা.) বনি তামীমের মধ্যে কয়েকজন আমীর নিয়োগ করেছিলেন। যথা জবরকান ইবনে বদর, কায়ম ইবনে আসেম, ওয়াকী ইবনে মালেক এবং মালেক ইবনে নোওয়াইবা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইসলামে স্থির থাকে, কেউ কেউ মোরতাদ হয়ে যায়। তাদের মধ্যে মালেক ইবনে নোওয়াইবাও ছিল। এ সময় বনি তামীম গোত্রের মহিলা সাজাহ বিনতে হারেস আবির্ভূত হয়। যে বনি তামীমকে ইসলামের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে এবং রাসূলুল্লাহ (স.)-এর ওফাতের পর নিজে নবুওয়াতের দাবি করে বসে। মোসায়লামাতুল কাজ্জাবের সাথে তার বিয়েও হয়েছিল। মোসায়লামা নিহত হওয়ার পর সাজাহ ইসলাম গ্রহণ করে এবং বসরায় হিযরত করে, সেখানেই সে হিজরী ৫৫/৬৭৫ সালে মৃত্যুবরণ করে।
৩. মালেক ইবনে নোওয়াইবা : জাহেলী যুগের একজন কবি। ইসলাম গ্রহণ করার পর মোরতাদ হয়ে যায়, সিদ্দিকী খেলাফত আমলে হযরত খালেদ (রা) তাকে হত্যা করে।
৪. আল-আসওয়াদ আল আনাসী : ইয়েমেনের আসওদ আনামী নামক এক ভবিষ্যদ্বক্তা ছিল আনাস কাহতান গোত্রের একটি শাখা। আসওয়াদ আনাসী মুখে মুখোশ পরিধান করে চলতো বলে তাকে জুল খিমার বলা হতো। রাসূলুল্লাহ (স.)-এর যুগেই সে নিজেকে নবী বলে দাবি করে। ইয়েমেনের বেদুইন গোত্রগুলো তার প্রতি সমর্থন জানায়। নাজরানও হানিফ গোত্রে সে প্রভাব বিস্তার করে। রাসূলুল্লাহ (স.) তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, আসওয়াদ আনাসী ইয়েমেনের সানা শহর অধিকার করার পর সানার শাসন কর্তা শহর ইবনে বাজানের স্ত্রী আজাদকে জোরজবরদস্তি তার গৃহে নিয়ে যায়। এ মহিলার চাচাতো ভাই ছিলেন ফিরুজ দায়লামী। তিনি তার চাচাতো বোন আজাদের সহযোগিতায় আসওয়াদ আনাসীকে হত্যা করে। এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ (স.)-এর ওফাতের পাঁচ দিন পূর্বের, তিনি অহীর মাধ্যমে এ ঘটনা জেনে সকলকে জানিয়েছিলেন ঐ রাতেই। মদীনায় এ খবর পৌঁছে হুজুর (স.)-এর ওফাতের পাঁচদিন পর। এ খবরে হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা.) অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। ইয়েমেনের এ কাজ্জাব ভ- নবী নিহত হওয়ার পর ইয়েমন আবার ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
৫. মোসায়লামাতুল কাজ্জাব : আসওয়াদ আনাসীর আরেকজন ইতিহাস খ্যাত ভ- নবী ছিল সোমায়লামা। বনু হানিফা গোত্রের এ ভ- রাসূলুল্লাহ (স.)-এর জীবদ্দশায় ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর নিকট প্রেরিত পত্রে তাকে নবুওয়াতের অংশীদার করার দাবি জানিয়েছিল। হুজুর (স.) তা প্রত্যাখ্যান করে তাকে কাজ্জাব মহামিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করেন। তার ওফাতের পর এ কাজ্জাব সিদ্দিক খেলাফত আমলে আবার শক্তি সঞ্চয় করে তার ভ-ামী শুরু করে এবং মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে থাকে। ইদিকাতুল মওত বা মৃত্যুর বাগান নামক স্থানে ভ- নবী মোসায়লামার চল্লিশ হাজার বিশাল বাহিনীর সাথে মুসলমানদের তুমুল যুদ্ধ হয়। হযরত খালেদ (রা.)-এর হাতে মোসায়লামা নিহত হয়, তার বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। একুশ হাজার মোরতাদ এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নিহত হয়। কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী মুসলমান শহীদদের সংখ্যা ছিল এক হাজার আশি জন।
আরো যেসব স্থানে মোরতাদদের উৎপাত-বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায় সেগুলোর মধ্যে কেন্দাবাসীদের, বাহরাইন বাসীদের, ওমানবাসীদের, মোহরাবাসীদের এবং কোজআ গোত্র ইত্যাদির লোকেরা মোরতাদ হওয়ার পথ অনুসরণ করছিল।
ইসলামের সবচেয়ে নাজুক ও শোচনীয় পরিস্থিতিতে প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর সময়োপযোগী বিচক্ষণতা ও দূরদর্শী হস্তক্ষেপের ফলে মাত্র এক বছরের মধ্যে ইসলামের আকাশের এ ঘোর কালো মেঘ কেটে যায় এবং আরব ভূমি ইসলামদ্রোহীচক্রগুলো তথা নাস্তিক, মোরতাদ, ভ- নবী হতে মুক্ত হয়ে যায় এবং ইসলামের আবার নবযাত্রার সূচনা হয়। তাই হযরত সিদ্দীকে আকবর (রা.)কে বলা হয় ইসলামের ত্রাণকর্তা। (সমাপ্ত)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মোরতাদ ও ভন্ড নবীদের কবল হতে দ্বীনকে মুক্ত করেন প্রথম খলিফা
আরও পড়ুন