Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিষিদ্ধ তবুও চলছে

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৮, ১:৫৮ এএম | আপডেট : ১২:১৯ এএম, ১১ জুলাই, ২০১৮

সারাদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখেরও বেশি ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। নিষিদ্ধ সত্তে¡ও সড়ক-মহাসড়ক ধরে এগুলো ছুটে চলছে। কখনও সোজা, কখনও উল্টো পথে। বাড়ছে ঝুঁকি, বাড়ছে দুর্ঘটনা। গত ঈদযাত্রায় ২৭৭ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ও ১২৬৫ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির হিসাবে এসব দুর্ঘটনার প্রায় ২৬ শতাংশ ঘটেছে নছিমন, ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার কারনে। এই ঝুঁকি ও দুর্ঘটনা কমানোর জন্যই ২০১৫ সালের ১ আগস্ট দেশের ২২টি মহাসড়কে সব ধরণের থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। এখন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার অবৈধ এ যানকে বৈধতা দেয়ার পাঁয়তারা করছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো এর বিরোধীতা করে আসছে।
সারাদেশে ১০ লাখ ইজিবাইক ও রিকশায় ৪০ লাখ ব্যটারি রয়েছে। এসব ব্যাটারি চার্জ করতে বিপুল পরিমান বিদ্যুত খরচ হচ্ছে-যার সিংহভাগই অবৈধ সংযোগের। বাড়তি এই বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। আবার ৪০ লাখ ব্যাটারি এক বছরের মাথায় ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ার পর সেগুলো ধ্বংস করতে গিয়ে পরিবেশের দূষণ বাড়ছে। নিষিদ্ধ ইজিবাইক সড়কে সচল করার নেপথ্যে সারাদেশে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সাথে স্থানীয় রাজনীতিক থেকে শুরু করে এমপি পর্যন্ত জড়িত।
যোগাযোগ ব্যবস্থা গতিশীল করতে দেশের সড়ক মহাসড়ক উন্নয়নে গত পাঁচ বছরে ২৭ হাজার ২১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। চলতি বছরে এর সাথে যোগ হয়েছে আরও দেড় হাজার কোটি টাকা। এই টাকায় সড়কের দৈর্ঘ্য এক ইঞ্চিও বাড়েনি। বাড়ানো যায় নি যানবাহনের গতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশার বৈধতা দিলে সড়কে দুর্ঘটনার হার অনেক বেড়ে যাবে। কমবে যানবাহনের গতি, বাড়বে যানজট, ভোগান্তি। এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শহীদুল হাসান বলেন, ব্যাটারিচালিত এ যানবাহনগুলো স্পীড ও ব্যালেন্সিং সঠিক নয়। এগুলোকে বৈধতা দিয়ে মহাসড়কে উঠতে দিলে তা হবে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত।
ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফ খোকন বলেন, ইজিবাইকের ব্যাটারিগুলো পরিবেশবান্ধব নয়। এগুলো বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত গিলে খাচ্ছে, যার সিংহভাগই অবৈধ সংযোগ থেকে চার্জ করা। এতে করে একদিকে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে জনগণ লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় এর খেসারত দিচ্ছে। তিনি বলেন, ধীর গতির এই যানগুলোর ব্রেকের সিস্টেম ভালো না। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। তাছাড়া সড়কের বিশাল একটি অংশ দখল করে এই পরিবহনগুলো রাখা হয়। এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হলে সড়ক-মহাসড়কে যানজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। দুর্ঘটনার হারও বেড়ে যাবে।
দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ১৯২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে সরকারের খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর অংশ ৮ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। যার মধ্যে এক লেন করে ইতোমধ্যে বেদখল হয়ে গেছে। ব্যয়বহুল এ মহাসড়কের সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ মহাসড়কে চলাচলকারি যানবাহনগুলো। যার মধ্যে অন্যতম একটি কারন মহাসড়কে ইজিবাইক চলাচল। জানা গেছে, ২০১৫ সালে দেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করে সরকার। তিন-চার মাস যেতে না যেতে আবার সেগুলো চালু হয়। পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের জন্য আলটিমেটাম দেয়া হয়। হাইকোর্টও এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং আগে মহাসড়কে শুধুমাত্র সিএনজি অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ ব্যটারিচালিত থ্রি হুইলার চলাচল করতো। এখন তার সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা। এগুলোর আবার চলার কোনো গতিপথ নেই। কখনও সোজা পথে চলে কখনও চলে উল্টো। এতে করে ঝুঁকি এবং দুর্ঘটনা দুটোই বাড়ছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে গত ঈদুল ফিতরে দেশের সড়ক মহাসড়কে ২৭৭ টি সড়ক দূর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ১২৬৫ জন আহত হয়েছে। সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঈদযাত্রায় সংগঠিত দুর্ঘটনার যানবাহন পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ বাস, ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ১২ দশমিক ২২ শতাংশ নছিমন-করিমন, ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক, ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ অটোরিক্সা, ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ কার-মাইক্রো ও ১৫ দশমিক ২৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ অনান্য যানবাহন দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। এ হিসাবে নসিমন ও ইজিবাইকের হার যোগ করলে দাঁড়ায় ২৬ শতাংশ। এ পরিসংখ্যানের সত্যতা মেলে প্রতিদিনের পত্রিকার পাতায়। সারাদেশে প্রতিদিনই ইজিবাইক দুর্ঘটনায় ঝরে যাচ্ছে মূল্যবান প্রাণ। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছে।
এদিকে, দেশের মফস্বল এলাকা ছাপিয়ে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশায় রাজধানী সয়লাব। এগুলোর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে যানজট, ভোগান্তি। শ্রমিক সংগঠনের হিসাবে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত নিষিদ্ধ এ যানের সংখ্যা এখন ৫০ হাজারের বেশি। আর ঢাকার চারপাশে ইজিবাইক চলছে কমপক্ষে দেড় লাখ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশেই নিষিদ্ধ এ যানগুলো চালানের নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা। পুলিশকে ম্যানেজ করে রেখেছে তারাই। রাজধানীর কদমতলীতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। কদমতলী থানা এলাকায় এসব রিকশার সংখ্যা এতোটাই বেড়েছে যে, দিনরাত রাস্তায় চলাচলের মতো জায়গা নেই। এ কারনে সারাক্ষণ যানজট লেগে থাকে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের এজন্য চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জানা গেছে, রাজধানীর শ্যামপুর, কদমতলী, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, দারুস সালাম, কাফরুল, পল্লবী, উত্তরখান, দক্ষিণখান, খিলগাঁও, সবুজবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, তুরাগ, হাজারীবাগ, আদাবর থানা এলাকার অলি গলি ব্যটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশায় সয়লাব। পুলিশের চোখের সামনেই এগুলো চলাচল করলেও উচ্ছেদে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। পলাশ নামে এক চালকের ভাষায়, আগে এগুলো অবৈধ ছিল। চলতে চলতে এখন বৈধ হয়ে গেছে। চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে অবৈধ এ যানগুলো রাস্তায় নামালে পুলিশ বাধা দিতো। এখন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় পুলিশ আর কিছু বলে না। এজন্য সিন্ডিকেটের নেতাদের প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয়। ###



 

Show all comments
  • Mohammad Fahed Hossen ১১ জুলাই, ২০১৮, ৩:৪০ এএম says : 0
    Allah basao
    Total Reply(0) Reply
  • এনায়েত ১১ জুলাই, ২০১৮, ৩:৪৩ এএম says : 0
    এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হলে সড়ক-মহাসড়কে যানজট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। দুর্ঘটনার হারও বেড়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ওবাইদুল ১১ জুলাই, ২০১৮, ৩:৪৩ এএম says : 0
    এতে করে ঝুঁকি এবং দুর্ঘটনা দুটোই বাড়ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • উজ্জল ১১ জুলাই, ২০১৮, ৩:৪৪ এএম says : 0
    পুলিশের চোখের সামনেই এগুলো চলাচল করলেও উচ্ছেদে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না কেন ?
    Total Reply(0) Reply
  • বিপ্লব ১১ জুলাই, ২০১৮, ৩:৪৫ এএম says : 0
    ক্ষমতাসীন দলের অসৎ প্রভাবশালী নেতাদের কারণে আমরা এরকম অনেক সমস্যায় পরছি
    Total Reply(0) Reply
  • আরজু ১১ জুলাই, ২০১৮, ৩:৪৭ এএম says : 0
    এই বিষয়টি নিয়ে সরকার ও প্রশাসনকে সিরিয়াসলি ভাবতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইজিবাইক

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
৬ নভেম্বর, ২০২০
১৬ অক্টোবর, ২০২০
৬ অক্টোবর, ২০২০
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ