শেষ ষোলোর লড়াই শেষে চলছে সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াই। দিনের প্রথম ম্যাচে উরুগুয়েকে উড়িয়ে শেষ চারে নাম লিখিয়ে রেখেছে ফ্রান্স। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে বিদায় করে তাদের সঙ্গী হয়েছে তারকাখচিত দল বেলজিয়াম।
প্রথমার্ধের গোলেই ২-০ তে পিছিয়ে তিতের দল। তবে ম্যাচের ৭৬ মিনিটে ব্রাজিল ব্যবধান কমায় অগাস্তা গোলে। তবে শেষ পর্যন্ত হার এড়াতে পারেনি, ব্রাজিলকে বিদায় করে রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে গেল বেলজিয়াম। উড়তে থাকা বেলজিয়ামকে শেষ আটে কিভাবে সামলায় ফ্রান্স, সেটিই দেখার।
কাজান অ্যারেনায় ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে যাবার সহজ সুযোহটি পেয়েছিল ব্রাজিলই। সপ্তম মিনিটে নেইমারের কর্নারে কোনোমতে বলে পা লাগিয়েছিলেন থিয়াগো সিলভা। বল উঁচু হয়ে উঠে বারে লেগে ফিরলে তারতম্য হয়নি স্কোরলাইনে। চার মিনিট পর আরেকটি কর্নার থেকে ফাঁকায় বল পেয়েও ১০ গজ দূর থেকে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি পাওলিনহো।
তবে ত্রয়োদশ মিনিটে কর্নার থেকে ঠিকই গোল করে ফেলে বেলজিয়াম। নাসের শাদলির কর্নারে বল ফের্নান্দিনিয়োর কনুইয়ে লেগে জালে ঢোকে। এই নিয়ে এটি রাশিয়া বিশ্বকাপের এটি ১১তম আত্মঘাতি গোল।
গোল খেয়ে আক্রমন আরও জোরদার করে ব্রাজিল। তবে রক্ষণে বেশি জোর না দিয়ে প্রতিবারই প্রতি আক্রমণে ব্রাজিল রক্ষণে ভীতি ছড়ায় বেলজিয়াম। তার সুফলও মেলে ৩২তম মিনিটে।
মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে গতি আর শক্তির বাধা এড়িয়ে রোমেলো লুকাকুর চেরা পাস খুঁজে নেয় ডান প্রান্তে থাকা ডি ব্রুইনকে। কোনরকম ঝুঁকি না নিয়ে বল ধরে সামনে একটু এগিয়ে কোনাকুনি শটে বাঁ পোস্ট ঘেঁষে দুরপাল্লার শটে লক্ষ্যভেদ করেন ম্যানচেস্টার সিটি তারকা।
পাঁচ মিনিট পর দুইবার ব্রাজিলকে বঞ্চিত করেন থিবো কর্তোয়া। বাঁ দিক থেকে মার্সেলোর ক্রস ঠেকানোর পর পরই ফিলিপে কৌতিনিয়োর বাঁকানো শট পুরো ঝাঁপিয়ে ঠেকান চেলসির এই গোলরক্ষক।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমার্ধে দুই গোল পিছিয়ে থেকে জিততে পারেনি কোনো দল। সেই অসম্ভব কাজটা করতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই উইলিয়ানের জায়গায় রবের্তো ফিরমিনোকে নামান তিতে। দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটেই সুযোগটা পেয়েছিলেন লিভারপুলের এই ফরোয়ার্ড। কিন্তু বাঁ দিক থেকে মার্সেলোর দারুণ নিচু ক্রসে পা লাগতে পারেননি।
তার পর থেকে আরো ক্ষুরধার হয় ব্রাজিলের আক্রমণভাগ। তাদের মুহুর্মুহু আক্রমণে কিছুটা ত্রাস ছড়ায় বেলজিয়াম শিবিরে। একের পর এক হলুদ ঢেউ আছড়ে পড়ে বেলজিয়ামের ডি-বক্সে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে সঙ্গত কারণেই রক্ষণে মনোযোগ বেশি ছিল কম্পানিদের।
এরই মধ্যে ৬২তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ম্যাচটা শেষ করে দেওয়া সুযোগ এসেছিল বেলজিয়ানদের। কিন্তু ডে ব্রুইনের বাঁ দিকে বাড়ানো বল ধরে ডি-বক্সে ঢুকে নেওয়া এদেন আজারের শট দূরের পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে যায়। পরক্ষণেই বদলি হিসেবে নামা দগলাস কস্তার নিচু শট দৃঢ়তার সঙ্গে ঠেকান কর্তোয়া।
৭৫তম মিনিটে আবার কস্তার জোরালো শট, আবার বাধা কর্তোয়া। তবে পরের মিনিটে পারেননি। এসময় একটি পাল্টা আক্রমণ থেকে ডানপ্রান্তের একটি বল ভলিতে ডি বক্সে তুলে মারেন কোতিনহো। সেই বলে লাফিয়ে মাথা ছুঁইয়ে জালে জড়ালে দলকে লড়াইয়ে ফেরার রসদ যোগান বদলি হিসেবে নামা রেনাতো অগাস্তা।
২ মিনিট পর খুব কাছ থেকে ফিরমিনো শটটা লক্ষ্যে রাখতে পারলে সমতায় ফিরতে পারতো ব্রাজিল। ৮০তম মিনিটে আরেকটি গোলের খুব কাছে ছিলেন প্রথম গোলদাতা ডিবক্সের মাঝ থেকে তার জোরালো শট একটুর জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। চার মিনিট পর নেইমারের কাটব্যাকে ফাঁকায় থাকা কৌতিনিয়োর শটও লক্ষ্যে থাকেনি।
এরপর কেবল ব্রাজিলের একের পর এক আক্রমণের দৃশ্য। পাঁচ মিনিট যোগ করা সময়েও এসেছিল সুবর্ণ সুযোগ। ডি-বক্স থেকে নেইমারের বাঁকানো শট দুর্দান্ত সেভে ক্রসবারের উপর দিয়ে পাঠিয়ে শেষ বারের মতো বেলজিয়ামের রক্ষাকর্তা কর্তোয়া।
এই কাজানেই দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। শেষ ষোলোতে ফ্রান্সের কাছে হেরে স্বপ্ন ভেঙেছে মেসির আর্জেন্টিনার। এখানেই রচিত হলো ব্রাজিলের বিদায়ের কাব্য!