Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিকিৎসক ও ম্যাক্সের অব্যবস্থাপনা দায়ী

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম

ষ চট্টগ্রামে শিশু রাইফার মৃত্যু ষ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল
ষ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ
চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদী বাগের ম্যাক্স হাসাপাতালে শিশু রাইফা খানের মৃত্যুর জন্য তিন চিকিৎসককে দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। তাদের চরম অবহেলায় শিশুটির করুণ মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী এবং ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব। তদন্ত প্রতিবেদনে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ওই কমিটির প্রতিবেদন গতকাল (শুক্রবার) প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে হাসপাতালটিতে ডিপ্লোমাধারী কোন নার্স নেই এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবায় বিশেষজ্ঞের সার্বক্ষণিক উপস্থিতির সঙ্কট প্রবল বলেও উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটিও ম্যাক্স হাসপাতালে ১১টি অনিয়ম ও ক্রটির পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থায় বড় ধরনের গলদের প্রমাণ পায়। চূড়ান্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। আড়াই বছরের শিশু রাইফার মৃত্যুর জন্য হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের অবহেলার প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি। এসব অব্যবস্থার কারণে ইতোমধ্যে হাসপাতালটিকে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শোকজ করা হয়েছে। দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থায় বড় ধরনের গলদ ও অবহেলার প্রমাণ পাওয়ায় হাসপাতালটি বন্ধ ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে দাবিতে চলমান আন্দোলন আরো জোরদার হচ্ছে।
চট্টগ্রামের বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গিয়ে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন অনেকে। ক্ষতিগ্রস্থরা মামলা করলে প্রতিবাদে বার বার চিকিৎসা ব্যবস্থা অচল করেছেন বিএএম’র নেতৃত্বে চিকিৎসকরা। এবারও তারা মাঠে নেমেছেন, ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হলেই চট্টগ্রামের চিকিৎসা সেবা অচল করার হুমকি দিয়েছেন চিকিৎসক নেতারা। এ নিয়ে সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের সাথে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন চিকিৎসকরা।
সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয় রাইফার চিকিৎসায় তিন চিকিৎসকের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন। সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত প্রতিবেদন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে জমা দেন। রাইফা’র বাবা-মা, ম্যাক্স হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লিখিত ও মৌখিক জবাবসহ মোট ১২ জনের বক্তব্য নিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র পর্যালোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সাত দফা পর্যবেক্ষণের ষষ্ঠ দফায় বলা হয়েছে-‘শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিধান রায় চৌধুরী শিশুটিকে যথেষ্ঠ সময় ও মনোযোগ দিয়ে পরিক্ষা করে দেখেননি। ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেব শিশুটির গুরুতর অসুস্থ্যতার সময়ে আন্তরিকতার সাথে সেবা দেননি বলে পিতা-মাতা যে অভিযোগ করেছিলেন, তা এই তিন চিকিৎসকের বেলায় সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।
চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে-শিশু রাইফা যখন তীব্র খিঁচুনিতে আক্রান্ত হয়, তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অনভিজ্ঞতা ও আন্তরিকতার অভাব দেখা যায়। ওই সময়ে থাকা সংশ্লিষ্ট নার্সদের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও এরকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো দক্ষতা বা জ্ঞান কোনোটাই তাদের ছিল না। তবে, তদন্তে ভুল চিকিৎসার প্রমাণ মেলেনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে- শিশুটিকে ভর্তির সময় থেকে পরবর্তী যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে তাতে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধের প্রয়োগ যথাযথ ছিল। তদন্ত প্রতিবেদনে ম্যাক্স হাসপাতালের চরম অব্যবস্থাপনার চিত্রও উঠে এসেছে। পঞ্চম দফায় বলা হয়েছে- রাইফাকে অসুস্থতার জন্য ম্যাক্স হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো থেকে শুরু করে শেষ চিকিৎসা পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটা ক্ষেত্রে তার অভিভাবকের ভোগান্তি চরমে ছিল।
সপ্তম দফায় বলা হয়েছে-তদন্তে স্পষ্ট হয়- হাসপাতালে রোগী ভর্তি প্রক্রিয়ায় ভোগান্তি প্রকট। চিকিৎসক ও নার্সদের সেবা প্রদানের সমন্বয়হীনতা ও চিকিৎসাকালীন মনিটরিংয়ের অভাব দেখা যায়। অদক্ষ নার্স ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের ফলে কাঙ্খিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অনেক দুর্বল। বিশেষত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবায় বিশেষজ্ঞের সার্বক্ষণিক উপস্থিতির সঙ্কট প্রবল।
চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ প্রতিবেদনে চার দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সাথে ম্যাক্স হাসপাতালের সার্বিক ক্রটিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। ওই হাসপাতালে ডিপ্লোমাধারী নার্স নেই উল্লেখ করে বলা হয় ডিপ্লোমাধারী নার্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ম্যাক্স হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক দ্রæত সেবা নিশ্চিত করা এবং অভিভাবকদের রোগীর নিয়মিত আপডেট জানানোর কথাও বলা হয়েছে সুপারিশে। তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী ও সাংবাদিক সবুর শুভ।
প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস বলেন, এই তদন্ত প্রতিবেদন আমরা গ্রহণ করছি এবং আমরা আশা করছি দ্রæত দায়ী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধ করা হবে। আমরা আবারও বলছি-সমগ্র বিএমএ’র বিরুদ্ধে আমাদের কোন আন্দোলন নয়। আমাদের আন্দোলন শুধুমাত্র দায়ী চিকিৎসক ও ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে। আমাদের আন্দোলন সাংবাদিকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণকারী বিএমএ নেতা ফয়সল ইকবাল চৌধুরী এবং সাংবাদিকদের উপর হামলার উস্কানিদাতা ডা. খুরশীদ জামিলদের বিরুদ্ধে। আমরা এই আন্দোলন অব্যাহত রাখব। অপরদিকে গতকালও নগরীতে দায়ী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও ম্যাক্স হাসাপাতাল বন্ধের দাবিতে মিছিল সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়েছে।



 

Show all comments
  • Quazi Bashir Ahmed ৭ জুলাই, ২০১৮, ৪:২৪ এএম says : 0
    As a Bangladeshi Canadian I wish the responsible killer doctors and Max Hospital managements must be jailed with the maximum penalty.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিকিৎসক

৩ ডিসেম্বর, ২০২১
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ