পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খুলনা ব্যুরো ও শরণখোলা সংবাদদাতা : মাত্র ১৭ দিনের ব্যবধানে আবার আগুন লেগেছে সুন্দরবনে। পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ষ্টেশনের নাংলী টহল ফাঁড়ির পঁচা কোরালীয়া ও নাপিতখালী বিলের মধ্যবর্তী আব্দুলারছিলা এলাকায় এ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে।
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা গতকাল (বুধবার) ভোর ৬টার দিকে বনের ভেতর থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে বনবিভাগকে জানায়। সকাল ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু হয়। এর আগে ২৭ মার্চ ওই একই স্টেশনের আওতাধীন সিকদারের ছিলা নামক স্থানে আগুন লেগে প্রায় ৫ একর বনভূমির গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এ রিপোর্ট লেখা (বিকেল সাড়ে ৬টা) পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। দাউ দাউ করে জ্বলছে বনভূমি। বেলা যত বাড়ছে আগুনের ভয়াবহতা ততোই তীব্র হচ্ছে। লোকালয় থেকে দেখা যাচ্ছে ধোয়ার কুন্ডলী আর আগুনের শিখা। ভয়াবহ আগুনে ইতোমধ্যে প্রায় ১০ একর বনের গাছপালা, নলখাগড়া ও লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়েছে। মূল বনের সুন্দরী গাছে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে।
বনবিভাগ জানায়, সকাল ৯টা থেকে আগুন নেভানোর কাজে বনকর্মী ও শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের ৩-৪শ’ মানুষ কলস-বালতি নিয়ে প্রাণপন চেষ্টা চালাচ্ছেন। দুপুর দুইটার দিকে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনা পৌঁছলেও কাছাখাছি পর্যাপ্ত পানির উৎস না থাকায় তারা কোনো কাজ করতে পারছেনা। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছেনা। ফায়ার লেন (নালা) কাটা হলেও তা অতিক্রম করে মূল বনে ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন পুর্ব বনবিভাগ বাগেরহাটের ডিএফও মোঃ সাইদুল ইসলাম, চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফ বেলায়েত হোসেনসহ বনবিভাগের কর্মকর্তারা।
প্রতিবছর ধানসাগর স্টেশনের বনে আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে বন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগের আঙ্গুল বনবিভাগের দিকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর ও ধানসাগর এলাকার কয়েকটি অসাধু মৎস্য শিকারি চক্র প্রতিবছর বনে আগুন লাগিয়ে থাকে। শুষ্ক মওসুমে তারা আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার করে মাছের বিল তৈরী করে। বর্ষা এলেই শুরু হয় ওই চক্রের মাছ ধরার উৎসব।
ধানসাগর স্টেশনের দায়িত্বে থাকা বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই চক্রের কাছে মৌসুম ভিত্তিক অলিখিত ইজারা (লিজ) দেয় ওই বিলগুলো। কারেন্ট জাল পেতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করা হয়। প্রতি মওসুমে লাখ লাখ টাকা আয় হলেও সরকারের ঘরে একটি টাকাও রাজস্ব জমা পড়ে না। পকেট ভারি হয় কর্মকর্তাদের।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
বনবিভাগের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, আগুন লাগার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বনবিভাগ ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয় এবং স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। তবে কিভাবে আগুন লেগেছে বা কি পরিমাণ এলাক জুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি। এরআগে গত ২৭ মার্চ নাংলি ক্যাম্প এলাকার বনে আগুন লেগে এক একর বনভূমি পুড়ে যায়।
ওই সময় বনকর্মকর্তারা বলেছিলেন, সুন্দবনের যে এলাকায় আগুন লেগেছে সেখানে বনের তেমন কোনো মূল্যবান গাছপালা নেই। প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে এখানে লতাগুল্ম প্রজাতির কিছু গাছ রয়েছে, যেগুলো ‘বলা গাছ’ নামে পরিচিত।
অগ্নিকা-ের এলাকা থেকে ফিরে বন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের জুবায়ের কবির জানান, এবারের অগ্নিকা- আগের চেয়ে বেশ বড় ধরনের। বারবার আগুন লাগা রহস্যজনক। আগুন লাগানো হতে পারে বলেও সন্দেহ ওই স্থানীয় বাসিন্দার। স্থানীয় ধানসাগর ইউনিয়ন পরিষদের ১নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জাকির হোসেনও আগ্নিকা-ের বিষয়টি রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
ফায়ার সার্ভিসের মোরেলগঞ্জ স্টেশনের লিডার গোলাম মোস্তফা বলেন, তাদের একটি ইউনিট এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে। এছাড়া বাগেরহাট থেকে আরও একটি ইউনিট ঘটনাস্থলের পথে রয়েছে।
বিশ্বের সর্ব বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় প্রায় প্রতিবছরই শুষ্ক মওসুমে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। এ সময় তীব্র বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
সর্বশেষ, চলতি বছরের ২৭ মার্চ আগুন লাগার পর কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি অনুসন্ধানে গঠিত তদন্ত কমিটি কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে ৩ এপ্রিল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে সেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এ নিয়ে ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সুন্দরবনে ২২টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।