পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শামসুল ইসলাম : সউদী আরবে সমহারে পুরুষ কর্মীর ভিসা না দেয়া হলে মহিলা গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধের হুমকি দিয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। এতে সউদীর নারীকর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান (সানারকম) বিপাকে পড়েছে। গত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে সউদী আরবে প্রায় ৪০ হাজার মহিলা গৃহকর্মী কর্মসংস্থান লাভ করেছে। সউদীতে কর্মরত উল্লেখিত মহিলা গৃহকর্মীরা প্রতি মাসে প্রায় ৮০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে।
এসব গৃহকর্মীর সাথে একজন করে নিকটাাত্মীয় পুরুষকর্মী নেয়ার কথা থাকলেও তা নেয়া হচ্ছে না। সউদীর বিভিন্ন অঞ্চলে কর্মরত বাংলাদেশী মহিলা গৃহকর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ নানা নির্যাতনের শিকার এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে ইতোমধ্যেই দেশে ফিরে এসেছে। রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ ও জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিস সউদীতে কর্মরত মহিলা গৃহকর্মীদের নানা হয়রানি ও দেশে ফিরে আসার ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখতে হিমশিম খাচ্ছে। বিএমইটি কর্তৃপক্ষ সউদী অভিবাসী মহিলা গৃহকর্মীদের নানা সংকট দ্রুত নিরসনের লক্ষ্যে রিয়াদ, জেদ্দা ও ঢাকায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ৩ এপ্রিল রিয়াদে অনুষ্ঠিত দু’দিনব্যাপী সউদী-বাংলাদেশ স্ট্যান্ডিং কমিটির যৌথ সভায় অভিবাসী বাংলাদেশী মহিলা গৃহকর্মীদের নানা নির্যাতনের ঘটনা খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। যৌথ সভায় সউদী স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতৃবৃন্দ একজন মহিলা গৃহকর্মীর সাথে তার একজন নিকটাত্মীয়ের ভিসা শিগগিরই চালু করার ঘোষণা দেন। সভায় বাংলাদেশের সাত সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদলের পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম শামছুন নাহার। সভায় রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ, বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজা, প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুর রউফসহ রিয়াদ দূতাবাস ও জেদ্দা কনস্যুলেটের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। যৌথ সভায় আরো জানানো হয়, যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি দু’জন করে মহিলা গৃহকর্মী পাঠাবে তার বিপরীতে একজন পুরুষকর্মী (নিকটাত্মীয় ব্যতীত) বিনা খরচে পাঠাতে পারবে। এ ব্যাপারে জনপ্রতি ১ হাজার মার্কিন ডলার (৭৫ হাজার টাকা) সার্ভিস চার্জ হিসেবে পাবে এজেন্সিগুলো।
২০১৫ সালের ১৪ মে ঢাকায় সউদী সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ের সাথে বাংলাদেশের মহিলা গৃহকর্মী প্রেরণ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ঐ চুক্তি অনুযায়ী একজন মহিলা গৃহকর্মীর সাথে তার নিকটাত্মীয় একজন পুরুষ কর্মীও বিনা খরচে নেয়ার কথা ছিল। সউদী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ থেকে শুধু মহিলা গৃহকর্মী নিতেই বেশি আগ্রহ। সউদী কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত কৌশলে বাংলাদেশ থেকে মহিলা গৃহকর্মী নেয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লেও পুরুষ কর্মী নেয়ার কোনো আগ্রহ দেখায়নি। সউদী নিয়োগকারীরা গত ১ বছর যাবৎ বাংলাদেশ থেকে মহিলা গৃহকর্মী দেদার নিলেও এযাবৎ কোনো পুরুষ কর্মী নেয়নি। এছাড়া দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে মহিলা গৃহকর্মীদের সাথে পুরুষ কর্মীদের আটটি পদে ভিসা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। এসব পদগুলো হচ্ছে, ড্রাইভার, দারোয়ান, খাদেম পুরুষ, ক্লিনার, কুক, মাজরা (কৃষি লেবার), রায়েল মাশি (রাখাল) ও নার্স পুরুষ। সউদী আরবে কিছু কিছু বাংলাদেশী অভিবাসী নারীকর্মীদের নিয়ে নানা সমস্যার সৃষ্টি হওয়ায় এখন পুরুষ কর্মী নেয়ার দাবিটি জোরালোভাবে উঠেছে।
গত মে মাসে সফররত সউদী শ্রম মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার ড. আহমেদ আল-ফাহিদের নেতৃত্বে ১০ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, গত রমজানের আগেই ২০ হাজার নারী কর্মী সউদী আরবে যাওয়ার সুযোগ পাবে। গত রমজানের মধ্যে সউদী কর্তৃপক্ষ ৫০ হাজার নারী কর্মী দিতে পারলেও নিতে রাজি ছিল বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এসব নারী কর্মী সম্পূর্ণ বিনা খরচে সউদী আরবে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তারা সউদীতে প্রতি মাসে ন্যূনতম ৮শ’ থেকে ১ হাজার সউদী রিয়াল বেতন পাচ্ছে। সরকার সউদী আরবে মহিলা গৃহকর্মী প্রেরণের জন্য প্রায় ২শ’ রিক্রুটিং এজেন্সিকে অনুমতি দিয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন-সচিব আব্দুর রউফ গতকাল ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, গত ৩ এপ্রিল রিয়াদে দু’দিনব্যাপী যৌথ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় অত্যান্ত ফলপ্রুসূ আলোচনা হয়েছে। একজন মহিলা গৃহকর্মীর সাথে একজন নিকট আত্মীয়কে নেয়ার বিষয়টি সউদী কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছেন। শিগগিরই সউদী গমনেচ্ছু প্রত্যেক মহিলা গৃহকর্মীর সাথে তার নিকট আত্মীয় বিনা মূল্যে সউদী যাওয়ার ভিসা পাবে। এছাড়া যেসব এজেন্সি দু’জন মহিলা গৃহকর্মী পাঠাবে তার বিপরীতে একজন যেকোনো পুরুষ কর্মীকে বিনা খরচে সউদীতে পাঠাতে পারবে। এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ন-সচিব আব্দুর রউফ বলেন, সউদী আরবে কর্মরত কিছু বাংলাদেশী মহিলা গৃহকর্মীর উপর নির্যাতনের ঘটনা রিয়াদ কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সব নির্যাতনের ঘটনাও সত্য নয় বলে যুগ্ন-সচিব দাবী করেন। রিয়াদ ও জেদ্দায় অভিবাসী মহিলা গৃহকর্মীদের নানা সমস্য নিরসনের জন্য সেল্টার হোম চালু রয়েছে বলেও যুগ্ন সচিব উল্লেখ করেন।
গত ১০ এপ্রিল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সউদীতে মহিলা গৃহকর্মী প্রেরণকারী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সাথে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদের সভাপতিত্বে এতে বিএমইটি’র মহাপরিচালক সেলিম রেজা, যুগ্ন সচিব আব্দুর রউফসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এতে বায়রার পক্ষে সভাপতি আবুল বাসারসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, সউদী আরবে বয়স গোপন করে কেউ কেউ ১৬/১৭ বছরের মেয়েদের গৃহকর্মী হিসেবে পাঠিয়ে দিচ্ছে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবী করা হয়। বৈঠকে সউদী আরবে মহিলা গৃহকর্মীদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ সঠিক নয় বলেও উল্লেখ করা হয়। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, কোনো কোনো মহিলা গৃহকর্মী সউদী আরবে যাওয়ার পর মেডিকেল পরীক্ষায় গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ছে। তারা বাংলাদেশে থাকতেই গর্ভবতী হয়েছিল। বৈঠকে এখন থেকে প্রত্যেক মহিলা গৃহকর্মীকে সউদী আরবে প্রেরণের আগের দিন মেডিকেল পরীক্ষা করেই বিমানের টিকিট ও পাসপোর্ট হস্তান্তর করার দিক নিদের্শনা দেয়া হয়।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সউদীতে মহিলা গৃহকর্মী প্রেরণে টপ-২০ রিক্রুটিং এজেন্সি’র মধ্যে রয়েছে হিমেল এয়ার সাভির্স (২১৪২ জন), শূন ওভারসীজ (১৪১৫ জন), সানশাইন ওভারসীজ (৯৬৬ জন), এম এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (৮৮১), রাব্বী ইন্টারন্যাশনাল (৭৯৪ জন), রাজিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (৫৬৩ জন), গালফ ওভারসীজ (৫৬০ জন), আল-হাসিব ওভারসীজ (৫২০ জন), আল-রাবেতা ইন্টারন্যাশনাল (৪৮১ জন), মাশাল্লাহ ওভারসীজ (৪১৪ জন), ওভারসীজ প্রোমোর্টাস লিঃ (৩৯৪ জন), এভিয়েট ইন্টারন্যাশনাল (৩৫০ জন), জাস্ট ওয়ে এভিয়েশন (৩৬৭ জন), আল-বারাকা ইন্টারন্যাশনাল (৩২৪ জন), তিশা ইন্টারন্যাশনাল (২৭৫ জন), খান ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস (২৫৩ জন), সা’দিয়া ইন্টারন্যাশনাল (৩০০ জন), এস এ ট্রেডিং (১৯৭ জন), আল-বুশরা এন্টারপ্রাইজ (১৫৬ জন), কবির ওভারসীজ (১৭১ জন)। প্রত্যেক মহিলা গৃহকর্মীর সাথে একজন করে পুরুষ কর্মীর ভিসা দেয়ার জোর দাবী জানিয়ে গত ১১ এপ্রিল মক্কাস্থ আল জাবরী রিক্রুটিং অফিস (৪৪০)-এর চেয়ারম্যান মনসুর সালেম আল-জাবরী’র লিখিত প্রস্তাব পাঠিয়েছেন আল-রাবেতা ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং পার্টনার আলহাজ আবুল বাশার। আবুল বাশার তার লিখিত প্রস্তাবে উল্লেখ করেন মহিলা গৃহকর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে গত বছর সউদী-বাংলাদেশ সমঝোতা স্বারকের শর্তে বলা রয়েছে একজন পুরুষ কর্মীর সাথে তার নিকট আতœীয়কে বিনা খরচে ভিসা দেয়া হবে। এতে আরো বলা হয়, দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির আলোকে পুরুষ কর্মীর ভিসা শিগরিই চালু করা না হলে মহিলা গৃহকর্মী প্রেরণ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। অন্যান্য রিক্রুটিং এজেন্সিও মহিলা গৃহকর্মীর সাথে পুরুষ কর্মী নেয়ার দাবী জানিয়ে সউদীর সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে লিখিত প্রস্তাব পাঠিছে।
গত ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রিয়াদ সফরকালে সউদী লেবার মন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে মহিলা গৃহকর্মীর সাথে একজন করে পুরুষ কর্মী নেয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন। সউদী লেবার মন্ত্রী বাংলাদেশী প্রবাসী মন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছিলেন মহিলা কর্মীর সাথে পুরুষ কর্মী নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে মহিলা গৃহকর্মীর সাথে একজন করে পুরুষ কর্মী নেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি সউদী শ্রম মন্ত্রণালয়ের মুছা নেট সফটওয়ারের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই দু’শ মহিলা গৃহকর্মী সউদীতে পাঠিয়েছে তাদের অনুকূলে ১শ’ পুরুষ কর্মীর ভিসা দেয়ার কার্যক্রম চলতি মাস থেকেই চালু হচ্ছে। এ ব্যাপারে সউদী আরবের একটি উচ্চ পর্যায়ের টেকনিক্যাল প্রতিনিধি দল বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করে মুছা নেট সওফটওর্য়ারকে আবগ্রেট করছেন। সা’দিয়া ইন্টারন্যাশানালের স্বত্বাধিকারী নোমান এতথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী মে মাস থেকে একজন মহিলা গৃহকর্মীর সাথে তার স্বামী, ছেলে বা তার ভাই সউদী আরবে যেতে পারবেন। যে কোম্পানীর মাধ্যমে মহিলা কর্মী গিয়েছে শুধু সে কোম্পানীর মাধ্যমেই নিকট আত্মীয় সউদী যাওয়ার সুযোগ পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।