পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
# ঢাকা থেকে ৪৬০ কি.মি. দূরে উৎপত্তিস্থলের মাত্রা ৬.৯
# তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনেকে আহত
# ভূমিকম্পে চট্টগ্রামে হেলে পড়েছে বেশ ক’টি ভবন
ইনকিলাব ডেস্ক : রাত ৭টা ৫৬ মিনিট। হঠাৎ করে কেঁপে উঠলো পায়ের তলার মাটি। যারা ছিলেন ঘরের ভেতরে, অনুভব করলেন তারা যেন শূন্যে দোল খাচ্ছেন! ঘরদোর কাঁপছে। পুরো ভবন যেন ডানে-বায়ে দুলছে। গতকাল রাতে বেশ কয়েক সেকেন্ড ধরে এমনই একটা পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন ঢাকাবাসী। একই অবস্থা ছিল দেশের অন্যান্য স্থানেও। প্রায় ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল পুরো বাংলাদেশ। রিখটার স্কেলের অবিকল হিসেবে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার এই কম্পন রাজধানীসহ সারাদেশে অনুভূত হয়েছে। যদিও কেন্দ্রে কম্পনের মাত্রা আরও বেশি ছিল বলে কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে।
ঢাকা থেকে ৪৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মায়ানমারের মাউলাইক শহরের ৭৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। স্থানটি বাংলাদেশ-ভারত ও মায়ানমারের সীমান্ত সংলগ্ন। এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে ভারত, মায়ানমার এবং নেপালেও। মাত্র তিন মাস আগে গত জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখ ৬ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপেছিল বাংলাদেশসহ আশেপাশের কয়েকটি দেশ।
গতকাল ভূকম্পন শুরুর পর রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ তাড়াহুড়ো করে বাসা-বাড়ির ভবন থেকে রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, মগবাজার, মিরপুরসহ রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন স্থানে অনেকে আহত হয়েছেন। রাজধানীর বড় বড় ভবনগুলো অনেকটা দুলে উঠায় আতঙ্ক বেড়ে যায়। চট্টগ্রামসহ অন্য জেলাগুলো থেকেও ভূকম্পনের খবর পাওয়া গেছে। ভারতের কলকাতা, গুয়াহাটি, পাটনা, ভূবনেশ্বর এবং দিল্লিতে তীব্র কম্পন অনুভূত হয় বলে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে। ভয়াবহ কম্পন হয়েছে মায়ানমারের বিভিন্ন এলাকায়ও।
ভূমিকম্পের পর পরই সারাদেশে ইন্টারনেটসহ মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগে বিঘœ দেখা দেয়। তবে অল্প সময়ের পরই মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। প্রাথমিকভাবে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইউএসজিএসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার এই ভূমিকম্প হয়। এর কেন্দ্রস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ১৩৪ কিলোমিটার গভীরে।
তবে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ বলেন, রিখটার স্কেলে এই ভূকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২। রাত ৭টা ৫৫ মিনিটে অনুভূত এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ঢাকা থেকে ৪২০ কিলোমিটার পূর্বে বলে জানান তিনি। রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ উল্লেখ করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হানিফ বলেন, “এটা ছিল শক্তিশালী ভূমিকম্প। নিকট অতীতে আমাদের আশপাশে শুধু নেপালে এর চেয়ে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল।”
এদিকে, ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে ঢাকার মগবাজারের একটি মাদরাসার বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছেন। নয়াটোলায় মাদরাসাতুল ইহসানের ছয়তলা ভবনের উপর তলায় থাকা শিক্ষার্থীরা হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত হন বলে ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান। মাদরাসাটির শিক্ষক হাফেজ মোহাম্মদ নোমান বলেন, তড়িঘড়ি করে নামতে গিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদের মগবাজারের ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ভূমিকম্পে চট্টগ্রামে হেলে পড়েছে বেশ ক’টি ভবন
চট্টগ্রামে ভূমিকম্পে বেশ ক’টি ভবন হেলে পডেছে। গতরাত ৭টা ৫৫ মিনিটে প্রচ- ঝাঁকুনিতে নগরের চান্দগাঁও, হালিশহর আবাসিক এলাকা এবং লাভলেইন, সাগরিকা, রহমতগঞ্জ ও আমতলা এলাকার ভবনগুলো হেলে পডছে। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের ৮নম্বর সড়কের ৫৩৮ নম্বর হোল্ডিংয়ের ছয়তলা ভবনটি পশ্চিমে প্রায় এক ফুট হেলে গেছে। ভবন থেকে লোকজনকে বের করে দেওয়া হচ্ছে।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আবু মো. শাহজাহান কবির বলেন, ‘৫৩৮ নম্বর বাড়িতে ১০টি পরিবার বসবাস করে। বাড়ির নিচতলা গাড়ি রাখার গ্যারেজ। ভূমিকম্পে বাড়িটি প্রায় এক ফুট পশ্চিম দিকে কাত হয়ে গেছে। আমরা হেলে পড়া বাড়ি থেকে সবাইকে বের করে দিচ্ছি।’
এদিকে, নগরের রহমতগঞ্জ এলাকায় বিবেকানন্দ নামের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল হেলে পাশের ভবনে লেগে গেছে। রহমতগঞ্জের এক বাসিন্দা জানান, স্কুলটি চারতলা ভবনের। প্রচ- ঝাঁকুনিতে ভবনটি পার্শ্ববর্তী আরেকটি ভবনের সঙ্গে লেগে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোতোয়ালি থানাধীন আমতলা এলাকায় আলমাস শপিং মল নামের একটি বহুতল ভবনও হেলে পড়েছে।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক এম.এ. মালেক জানান, নগরের লাভলেইন এলাকায় তিনতলা, হালিশহর বি-ব্লক আবাসিক এলাকায় পাঁচতলা এবং সাগরিকা শিল্প এলাকায় পাঁচতলাবিশিষ্ট একটি পোশাক তৈরি কারখানার ভবন হেলে পড়েছে। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কাজ করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।