Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইউএনওদের এসিআর নিয়ে তোলপাড়

আগামী মাসে নিয়োগ হচ্ছে

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৬ এএম

মাঠ প্রশাসন ঢেলে সাজানো শুরু করেছে সরকার। ৪৯২টি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পদেও পরিবর্তন আসছে। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের এসিআর ও শৃংখলা আমলনামা নিয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেসব কর্মকর্তার এসিআর ও শৃংখলা আমলনামা ভাল পাওয়া গেছে আগামী আগস্টে তাদের ইউএনও পদে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেয়া হবে। এদিকে ইউএনও›দের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে গোপনীয় প্রতিবেদন নিয়ে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো পুলিশ বিভাগের এক চিঠিতে বলা হয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের শিক্ষাজীবনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও তাদের পরিবার বা নিকটাত্মীয়দের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয় অনুসন্ধান চালাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো সব জেলা স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ সুপারদের। গত ২৭ জুন ইস্যু করা ওই চিঠিতে পহেলা জুলাইয়ের মধ্যে একজন ইন্সপেক্টর বা পরিদর্শক পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করতে এবং এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা ও সতর্কতা বজায় রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা-ইউএনও›রা এটি জেনে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোন মন্তব্য করতে কেউই রাজী হননি।
সাধারণত সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার আগেই মনোনীত প্রার্থীদের বিষয়ে একটি তদন্ত করে পুলিশ। পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট চাকরিতে যোগদানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেখানে মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আছে কি-না বা মামলা আছে কি-না কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে কি-না।
চিঠিতে ইউএনওদের সম্পর্কে যেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে কর্মকর্তা ও তার পিতার নাম পরিচয়, স্থায়ী ও কর্মস্থলের থানার রেকর্ড, তিনি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন ও সেখান রাজনীতি করেছেন কি-না, রাজনৈতিক মতাদর্শ, পরিবার বা নিকটাত্মীয়দের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকলে সে সম্পর্কে তথ্যসহ আরও কয়েকটি বিষয়। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ কথা বলতে রাজি হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউএনও ইনকিলাবকে বলেন, নিজ যোগ্যতায় ইউএনও হয়েছি। এখন পুলিশ দিয়ে এ ধরনের অনুসন্ধান করানো অসম্মানজনক। কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও সেটি তদন্ত করতে পারে কিন্তু এ ভাবে নয়।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের মাঠ প্রশাসন ঢেলে সাজানো শুরু হয়েছে। আগামী ২৪ জুলাই জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুরু হয়ে ২৬ জুলাই শেষে ২২ জেলায় নতুন ডিসি পদায়ন করা হবে। পরে সারাদেশে ৪৯২টি উপজেলায় ইউএনও পদেও পরিবর্তন আনা হবে। ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত থাকা ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের এসিআর ও শৃংখলা আমলনামা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। মাঠ প্রশাসনের এসব কর্মকর্তাই মূলত নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবেন। সরকারের লক্ষ্য একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের ভোট প্রক্রিয়া থেকে বিরত রাখতে মাঠ প্রশাসনের কার্যক্রম তদারকি করতে হবে ইসিকে। সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু এখনো ৬ মাস বাকি। ইতিমধ্যে মাঠ প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের যুগ্ম ও অতিরিক্ত সচিব পদে আরেক দফা পদোন্নতির প্রক্রিয়াও চলছে। একই সঙ্গে মাঠ প্রশাসনকে সুসংহত করার লক্ষ্যে ইউএনও, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও অন্যান্য পদে রদবদল করা হবে বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্রে জানা গেছে। প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমলাতন্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। আবার বিএনপি নেতারাও প্রশাসনের ওপর নজর রাখতে শুরু করেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মোঃ মুয়াজ্জেম হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, ৪৯২টি উপজেলায় ইউএনও পদেও পরিবর্তন নয়, পদোন্নতি ও বদলী চলমান প্রক্রিয়া সেই আলোকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের এসিআর ও শৃংখলা আমলনামা চাওয়া হয়েছে। সেখানে অন্য কিছু চাওয়া হয়নি।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এ প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচনকে রেখে মাঠ প্রশাসনকে নিজেদের দখলে রাখতে চায় সরকার। বর্তমান সরকারও সেটা শুরু করেছে। নির্বাচনের সময় ডিসি এবং ইউএনওরা সরাসরি কাজ করে, সে কারণে সরকার নিজেদের লোক বসাতে চায়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠ প্রশাসনে গতকাল সোমবার পর্যন্ত সচিব ৭৮জন, অতিরিক্ত সচিব আছেন ৫০০ জন, যুগ্ম-সচিব আছেন ৭৯৯ জন, উপসচিব আছেন এক হাজার ৭৬৫ জন, সিনিয়র সহকারী সচিব আছেন এক হাজার ৪৩২ জন, সহকারি সচিব এক হাজার ১৯২জন, বিভাগীয় কমিশনার ৮জন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ১৪জন, ডিসি ৬৪জন, এডিসি ১৯২জন এবং ইউএনও রয়েছেন ৪৪০জন। বর্তমানে মাঠ প্রশাসনে ইউএনও পদে ২৭,২৮,২৯, এবং ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেককের বিরুদ্ধে দুনীতি অভিযোগ রয়েছে। তাদের প্রত্যাহার করে ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে নিয়োগ দেবে সরকার। তবে ৩১তম ব্যাচের ২৫০জনের মধ্যে ১৬২জন কর্মকর্তার মধ্যে বেশিরভাগই সরকারি দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এসিআর
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ