Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফুঁসছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৬ এএম

বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর উজানভাগে হিমালয় পাদদেশ, চীন-তিব্বত, নেপাল এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে অব্যাহত রয়েছে অতিবৃষ্টি। বৃদ্ধি পাচ্ছে উজানের ঢলের প্রবাহ । ফলে দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির দিকেই রয়েছে। গতকাল (বুধবার) বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় অবিরাম পানি বৃদ্ধির ফলে ফুঁসে উঠেছে উত্তরাঞ্চলের প্রধান এই দুই নদ। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা বিপদসীমা অতিক্রম এবং উত্তরের বিরাট জনপদ বন্যা কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যমুনা নদের সবক’টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর পয়েন্টে বিপদসীমার মাত্র ৫৬ সেমি নিচে এসে গেছে। অন্যান্য পর্যবেক্ষণ পয়েন্টে যমুনা ৮৫ থেকে ১৬০ সেমি নিচে অবস্থান করছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যদিও বিপদসীমার নিচে রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ এবং উত্তর-পূর্বে সুরমা ও কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এমনটি আশঙ্কা বন্যা বিশেষজ্ঞগণের।
উত্তর জনপদের তিস্তার পানি নীলফামারী জেলার ডালিয়া পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে তিস্তার উজানে ভারতের গজলডোবা বাঁধের গেটগুলো ছেড়ে দেয়া হলে উত্তর জনপদের কয়েকটি জেলা বন্যা কবলিত হতে পারে। ফলে বন্যা এবং নদী ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষজন। উত্তরাঞ্চলের ধরলা, ঘাগটসহ বিভিন্ন নদীর পানি উজানের ঢলের তোড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিশেষত আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি নাগাদ ব্রহ্মপুত্র-যমুনা বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা বন্যা কবলিত হতে পারে। বাড়ছে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানিও । উত্তর-পূর্বে বৃহত্তর সিলেটে সুরমা-কুশিয়ারা ও এর সংলগ্ন নদ-নদীগুলোতে পানি আরও বেড়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। পাহাড়ি ঢলের চাপে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল তথা বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাহাড়ি অববাহিকায় অবস্থিত নদ-নদীসমূহেও পানি গতকাল পর্যন্ত বেড়ে যায়। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কতা কেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, দেশের নদ-নদীসমূহের মোট ৯৪টি পানি সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৭৭টিতে পানি বৃদ্ধি, হ্রাস পায় ১৬টিতে এবং বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ৯টি পয়েন্টে। বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত ৭টি নদ-নদীগুলো হচ্ছে বৃহত্তর সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, পুরাতন সুরমা, জদুকাটা, সোমেশ্বরী ও খোয়াই। দক্ষিণ চট্টগ্রাম-বান্দরবানের পাহাড়ি খর¯্রােতা নদী সাঙ্গু বিকেলে বিপদসীমার নিচে প্রবাহিত হয়।
বাংলাদেশ ও ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর পার্শ্ববর্তী ভারতীয় অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় উজানের অববাহিকা থেকে নেমে আসছে ঢল। ভাটিতে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
ভারত ঢল-বানের চাপ কমাতে উজানে নদ-নদীতে বাঁধ-ব্যারেজের গেটগুলো খুলে দিলেও এ সম্পর্কিত আগাম কোন তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশকে সরবরাহ করেনা। বন্যা সতর্কতা ও প্রস্তুতির জন্য উজানের যেকোন দেশের তরফ থেকে এ বিষয়ে জানানো জরুরি।
প্রধান নদ-নদীর পানি প্রবাহ পরিস্থিতির পূর্বাভাসে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা ও এর সাথে যুক্ত নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে আগামী ৪৮ ঘণ্টায়। উত্তর জনপদের ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ঘাগট নদীগুলোর পানি আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দ্রæত বৃদ্ধি পেতে পারে।
গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, জাফলংয়ে ১৮৮ মিমি, লরেলগড় ১৭৫ মিমি, কানাইঘাট ১২৪ মিমি, দুর্গাপুর ১১০ মিমি, সুনামগঞ্জ ১০৫ মিমি, বান্দরবান ১৭৬ মিমি, চট্টগ্রাম ১৫৯ মিমি, পাঁচপুকুরিয়া ১২০ মিমি, লামা ১১৫ মিমি, কক্সবাজার ১০৩ মিমি।



 

Show all comments
  • Arun Subhashis.roy ৫ জুলাই, ২০১৮, ৪:২৫ এএম says : 0
    Rice market prises
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রহ্মপুত্র-যমুনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ