Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গনে আন্দোলন

কোটা সংস্কার, বয়সসীমা ৩৫, বিসিএস, সাত কলেজ, সৃজনশীল পদ্ধতি

তারিক আবেদীন ইমন : | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

 শিক্ষাঙ্গনে বিভিন্ন দাবিতে গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী, চাকরি প্রার্থী এমনকি কোমলমতি শিশুরাও। কোটা সংস্কার, চাকরির বয়স ৩৫, সাত কলেজ সমস্যা সমাধান, সৃজনশীল ও প্রশ্নফাঁস সমস্যার সমাধানসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষাঙ্গনের পাশপাশি রাজপথে আন্দোলন করেছেন ভূক্তোভোগী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীরা। আন্দোলন করতে বাদ যাননি কোমলমতি শিশু থেকে বিসিএস ক্যাডাররাও।
আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কিছু দাবি সরকার মেনে নিলেও অধিকাংশ ঝুলছে আশ্বাসের বুলিতে। বিশ্লেষকরা বলছেন শিক্ষক ও ছাত্রদের আন্দোলন অব্যাহত থাকলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত¡াবাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, বিভিন্ন দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে আন্দোলন হতে পারে। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। শিক্ষক বা শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে কোনো আন্দোলন করলে তাদের মনেও একটা হতাশা দেখা দেয় এবং মনোবল ভেঙে যেতে পারে। অভিভাবকদের মাঝেও এর একটা প্রভাব পড়ে। তাই আন্দোলনকারীদের উচিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা ও সরকারেরও উচিৎ তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়া।
কোটা সংস্কার আন্দোলন : চলতি বছরে সব থেকে আলোচিত বিষয় ছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি। এ দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেলেও চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলের দিকে তা তীব্রতর হতে থাকে। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল থেকে পাঁচ দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেন।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ১২ এপ্রিল জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলাকালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সব চাকরিতে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেন। আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহŸবায়ক হাসান আল মামুন ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন : সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে চাকরি প্রার্থীরা। গত ৩১ মার্চ রাজধানীর শাহবাগে তারা এক মহাসমাবেশের আয়োজন করে। জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের’ ব্যানারে মহাসমাবেশর আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তবে গেল বুধবার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এছাড়া অবসরের বয়সসীমাও ৬৫ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সাত কলেজ আন্দোলন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাত কলেজ অধিভুক্তির শুরু থেকেই জন্ম দিয়েছে আলোচনা-সমালোচনার। অনেকে পক্ষে বলেছেন, আশা দেখেছেন, ভরসা পেয়েছেন। অনেকে বিরোধিতা করেছেন, কেউ কেউ করেছেন আন্দোলনও। প্রথম দলের সদস্যদের মধ্যে অবশ্য তারাই বেশি, যাদের সন্তান বা পরিবারের কেউ ওইসব কলেজে পড়ালেখা করছেন। আর পরের দলের বেশির ভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী। এ পর্যন্ত অধিভুক্ত হওয়া, না হওয়া নিয়ে যতটুকু আন্দোলন বা বিরোধিতা হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি মাত্রায় আন্দোলন হয়েছে অধিভুক্ত হওয়ার পরে ওই কলেজগুলোর পরীক্ষা সময়মতো নেয়ার দাবিতে। আন্দোলনে একজন শিক্ষার্থীর দৃষ্টিশক্তি চিরতরে হারাতে হয়েছে। তাকে অবশ্য খেয়ে-পরে বাঁচার জন্য চাকরি দেয়া হয়েছে। আবার সাত কলেজের অধিভুক্তি বাদ দিতেও আন্দোলন হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা’ এ আন্দোলন করছেন। তাদের দাবি ছিল, সাত কলেজের অধিভুক্তি বাদ দিতে হবে।
বিসিএস ক্যাডারদের দাবি : বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত না হওয়া নন-ক্যাডারদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে গত ২৮ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডাররা। তাদের দাবি, প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। অনেক মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদ থাকা সত্তে¡ও সময়মতো চাহিদাপত্র পিএসসিতে না আসায় চাকরির জন্য সুপারিশ করা হয়নি। অথচ পিএসসি চেয়ারম্যান সব নন ক্যাডারদের নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন।
নন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়েও ৩৬তম বিসিএসের প্রায় দেড় হাজার চাকরি প্রার্থী বেকার। এর আগে ২০১৬ সালে ৩৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার প্রার্থীরা রাজধানীতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেলিলেন। ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষা নেয়ার আগেই ৩৪তম বিসিএস এর নন-ক্যাডারে উত্তীর্ণ সব প্রার্থীর চাকরির নিশ্চয়তার দাবিতে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : আন্দোলন থেকে বাদ যায়নি কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও। সৃজনশীল প্রশ্ন বাতিল, প্রশ্নফাঁস রোধ, নতুন প্রশ্ন পদ্ধতিসহ নানা দাবিতে আন্দোলন করেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য চালু করা নতুন পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, ২০১৭ সাল থেকে সাতটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। কিন্তু সময় বাড়ানো হয়েছে মাত্র ১০ মিনিট। এই অল্প সময়ে সাতটি সৃজনশীল প্রশ্ন লেখা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এই পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানাতে আন্দোলন করেছিল শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও বিগত কয়েক বছরে একটি সমালোচিত বিষয় ছিল প্রশ্নফাঁস। জেএসসি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষা কোনোটাতেও বাদ যায়নি প্রশ্নফাঁস। আর প্রতিবাদে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ মিছিল করে কোমলমতি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীরাও।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিসিএস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ