পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মূলধন ঘাটতি মেটাতে কয়েক বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা দেয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারি ৯ ব্যাংকে দেয়া হলো ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। গতকাল বুধবার অর্থ বিভাগের উপ-সচিব রেদোয়ান আহমেদ স্বাক্ষরিত এক পরিপত্র জারি করে এ টাকা বণ্টন করে দেয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পরিপত্রে দেখা গেছে, মূলধন ঘাটতি পূরণবাবদ সোনালী ব্যাংককে দেয়া হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা, একইভাবে জনতা ব্যাংককে দেয়া হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংককে ৩০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারের বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে মূলধন ঘাটটি পূরণবাবদ ৪০০ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি ব্যাংককে মূলধন ঘাটটি পূরণ ও সুদ ভর্তুকিবাবদ ১৯৯ কোটি ৭৯ টাকা ও গ্রামীণ ব্যাংককে (পরিশোধিত মূলধনের সরকারি অংশ হিসেবে) ২১ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া সরকারের বিশেষায়িত ব্যাংক কর্মসংস্থান ব্যাংককে পরিশোধিত মূলধন বাবদ ৫০ কোটি টাকা, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংককে একইভাবে ৯০ কোটি টাকা এবং আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংককে ১০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। তবে বেসিক ব্যাংকের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ৩০০ কোটি টাকা দেয়ার সুপারিশ করা হলেও তা দেয়া হয়নি।
যদিও স¤প্রতি বেসিক ব্যাংক বিষয়ে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বেসিক ব্যাংকের অবস্থা এতটাই খারাপ যে অন্যসব ব্যাংকের মত এটিকে মূলধন ঘাটতির জন্য কিছু অর্থ দিলেই হবে না। এ ব্যাংকটিকে আলাদাভাবে নার্সিং করতে হবে। অর্থাৎ এ ব্যাংকটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারকে আরো বেশি আর্থিক সহায়তা করতে হবে।
পরিপত্রে ব্যাংকগুলোর জন্য বলা হয়, এ অর্থ প্রচলিত সকল বিধি-বিধান ও অনুশাসনাবলী যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। যে উদ্দেশ্যে এ অর্থ প্রদান করা হলো ওই উদ্দেশ্য ব্যতিত অন্য কোনো খাতে এ অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
পরিপত্রে আরও বলা হয়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অর্থ বিভাগের অধীন ‘ব্যাংকগুলোর মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’ খাতে বরাদ্দকৃত ২ হাজার কোটি টাকা থেকে দেয়া হলো। বাকি ১৫০ কোটি টাকা ‘অনুন্নয়ন খাতে নগদ ঋণ’ খাতে পুনঃ উপযোজনপূর্বক বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কার্পোরেশন (বিএইচবিএফসি)-এর অনুকূলে কিছু শর্তসাপেক্ষে ঋণ হিসেবে নির্দেশক্রমে প্রদান করা হয়।
শর্তসমূহ হচ্ছে তহবিল সহায়তা বাবদ প্রদানকৃত ১৫০ কোটি টাকা বিএইচবিএফসি’র অনুকূলে সুদযুক্ত ঋণ হিসেবে গণ্য হবে। ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ বিএইচবিএফসি পরিচালিত গৃহনির্মাণ ঋণ খাতে ব্যবহৃত হবে। বার্ষিক ৩ শতাংশ হারে এ ঋণের উপর সুদ প্রদান করতে হবে। এ ঋণ ২০ বছর ষান্মাসিক ভিত্তিতে ৪০টি সমান কিস্তিতে আসল ও সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। ঋণের টাকা উত্তোলনের তারিখ হতে ৫ বছর পর এ ঋণের অর্থ আদায়যোগ্য। তবে প্রথম ৫ বছরের জন্য সুদ প্রদেয় হবে। এছাড়া সরকার প্রদত্ত এ ঋণের বিষয়ে অর্থ বিভাগের সাথে বিধিমতে বিএইচবিএফসি- কে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ব্যাংকগুলোকে ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশের মধ্যে যা বেশি সেই পরিমাণ অর্থ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। এদিকে ঝুঁকি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মানদন্ড ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে ১০ শতাংশ ন্যূনতম মূলধনের পাশাপাশি দশমিক ৬২ শতাংশ হারে অতিরিক্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। গত ডিসেম্বর শেষে ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে নয়টি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে সরকারি-বেসরকারি ৯টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এই ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। এদের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৭ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ঘাটতিতে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি সাত হাজার ৭৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
মূলধন ঘাটতির দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। এই ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি পাঁচ হাজার ৩৯৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এছাড়া বেসিক ব্যাংক দুই হাজার ৬৫৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ৮১৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংক ৬৩৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং জনতা ব্যাংকের ১৬১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে।
এর তিন মাস আগে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী সোনালী, জনতা, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক এবং বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা।
জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি তৈরি হলে বাজেট থেকে তার যোগান দিতে হয়। জনগণের করের টাকায় বিভিন্ন সময় মূলধন ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকগুলোতে অর্থ যোগান দেয় সরকার। তবে করের টাকায় মূলধন যোগানের বরাবরই বিরোধিতা করে থাকেন অর্থনীতিবিদরা।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের যোগান দেয়া অর্থ ও মুনাফার একটি অংশ মূলধন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। কোনো ব্যাংক মূলধনে ঘাটতি রেখে তার শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না।
মূলধন ঘাটতি পূরণে বাজেটে টাকা রাখার বিষয়টি শুরু হয় ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর জন্য যত টাকা বাজেটে রাখা হচ্ছে, সে তুলনায় মূলধন ঘাটতি পূরণের চাহিদা তাদের ১০ গুণ বেশি। কখনো মূলধন ঘাটতি বা প্রভিশন ঘাটতি পূরণের নামে, কখনোবা মূলধন পুনর্গঠন বা মূলধন পুনর্ভরণের নামে ছয় ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংককে আগে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে অর্থ বিভাগ এখন ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য বাজেটে টাকা বরাদ্দ রাখতে নারাজ। এর আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে বিকল্প উপায় বেরও করেছিল, কিন্তু কার্যকর করতে না পেরে সহজ উপায় অর্থাৎ নগদ টাকা দিয়ে দেওয়ার পথই নিচ্ছে এ বিভাগ।
মূলধন ঘাটতি পূরণে বেসিক, জনতা ও রূপালী ব্যাংক গত বছর যখন বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নেয়, বাংলাদেশ ব্যাংক তখন মূলধন ঘাটতি পূরণের চার সম্ভাব্য উপায় এবং এর সুবিধা-অসুবিধা চিহ্নিত করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণও করে। উপায়গুলো হচ্ছে-সরাসরি নগদ মূলধন সরবরাহ, বন্ড ছাড়া, বোনাস শেয়ার ছাড়া এবং খেলাপি ঋণ কমানো। এমনকি বর্তমানে সরকারের যেসব সেবা বিনামূল্যে দিয়ে থাকে ব্যাংকগুলো, সেগুলোর বিপরীতে মাশুল নেওয়ার চিন্তা করাও হয়েছিলো। কিন্তু কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।
সূত্র মতে, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ‘ব্যাংকগুলোর মূলধন পুনর্গঠনে বিনিয়োগ’ খাতে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।