Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ঠিক নয় পরিকল্পনামন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া নিয়ে বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ঠিক নয়। বিশ্বব্যাংক নিজেরাই নিজেদের রিপোর্ট বিশ্বাস করে না। ফলে জিডিপি পূর্বাভাস নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দেয়া বক্তব্য অনেকাংশেই ভিত্তিহীন। এদিকে ৮টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই সময় তিনি বিশ্বব্যংকের বিষয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা এবং সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক একেক সময় একেক রকম প্রতিবেদন দেয়। সাউথ এশিয়ান স্প্রিং রিপোর্টে বিশ্বব্যাংক বলেছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। পরবর্তীতে সাউথ এশিয়ান স্প্রিং বৈঠক ২০১৫-তে বলা হলো, ২০১৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ১ শতাংশ, কিন্তু প্রবৃদ্ধি আমাদের হিসাবে হয়েছিল ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মুস্তফা কামাল বলেন, বিশ্বব্যাংক সেটি মেনে নিয়ে পরবর্তীতে বলেছে- ২০১৫ সালে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, ‘গ্লোবাল প্রসপেকটাস ২০১৫ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছেÑ চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এখন বলছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তাই তাদের প্রাক্কলন ঠিক নয়। আমাদের কৃষিশিল্প ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট ভালো। বিশ্বব্যাংক যাই বলুক না কেন, এ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে হবে বলেই জানান তিনি।
এই সভায় জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ ৮টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১ হাজার ৫৭১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৯৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১ হাজার ৯১৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, গ্যাস খাতে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এগিয়ে আসলে ভাল হবে। আগামীতে সারাদেশে শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। গ্যাস আমদানি করা হলে তখন আর সমস্যা থাকবে না।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছেÑ ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম-২য় পর্যায় প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা; মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা; প্রাণিসম্পদ উৎপাদন উপকরণ ও প্রাণিজাত খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা; পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের আওতায় ৭০ হাজার ওভারলোডেড বিতরণ ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা; জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা; ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুড়িং প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সউদী আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা; গাইবান্ধা-ফুলছড়ি-ভারতখালী-সাঘাটা সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
জামালপুর ইকোনমিক জোনের বিস্তারিত হচ্ছে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংযোগস্থলে অবস্থিত। বে অব বেঙ্গল গ্রোথ ট্রায়াঙ্গেলের শীর্ষ সমুদ্রবন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে দক্ষিণ-পঞ্চিমে কলকাতা, মাদ্রাজ ও কলম্বো এবং দক্ষিণ-পূর্বে ইয়াংগুন থেকে থাইল্যান্ড ও প্যানাং পর্যন্ত যোগাযোগ বিস্তৃত। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর নেপাল, ভুটান, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্য এবং মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনাময় সমুদ্র প্রবেশদ্বার। এ কারণে বাংলাদেশ অ্যাসেমব্লিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, ট্রেডিং এবং সার্ভিস সংক্রান্ত ব্যবসার আঞ্চলিক হাব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের চারটি রাজ্য ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম এবং আসামের সঙ্গে প্রায় ১ হাজার ৮৮০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যার মেঘালয় রাজ্যের সঙ্গে ৪৪৩ কিলোমিটার সীমাপ্ত বিদ্যমান। ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়নে অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। জামালপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং, রেডিমেট গার্মেন্টস, ভোগ্যপণ্য ও খাদ্যসামগ্রী তৈরি করে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের রাজ্যগুলোর শিল্প হাব হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব প্রধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে সেগুলো হচ্ছেÑ ৪৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ, ৫৯ লাখ ২৪ হাজার ৬০৩ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ১ হাজার ৬৮০ বর্গমিটার অফিস ভবন, ডরমেটরি ভবন ও কাস্টমস অফিস নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ৫ হাজার ৬২৫ মিটার সীমানা প্রাচীর ও ১ হাজার মিটার অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনটি অনুশাসন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেনÑ সরকার বিদ্যুতের উৎপাদন যেভাবে বাড়িয়ে চলেছে এবং বিদ্যুতের যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে এগুলো বাস্তবায়িত হলে ২০১৮ সাল নাগাদ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় আসবে।
এছাড়া পল্লী এলাকায় যেসব ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার আছে সেগুলো দ্রুত প্রতিস্থাপন করা এবং সউদী আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্সে অতিথিদের বসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ঠিক নয় পরিকল্পনামন্ত্রী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ