পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যাংক চুরির ঘটনা হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিকে। ঘটনার পর প্রায় আড়াই মাস চলে গেলেও এর কোনো ক্লু বের করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এখনো জানা সম্ভব হয়নি কারা এই টাকা চুরিতে জড়িত এবং এর গন্তব্য কোথায় ছিল। ফিলিপাইনের সিনেট শুনানিতে চুরি হওয়া রিজার্ভের আংশিক অর্থ বাংলাদেশ ফেরত পাচ্ছে বলা হলেও এখনো কোনো অর্থ উদ্ধার করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। শুনানিতে তৃতীয় কোনো পক্ষ না থাকায় একতরফাভাবেই মামলা চলছে। যদিও অর্থ ফেরত পেতে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে এখনো কোন অর্থ আসেনি। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিআইডি কর্মকর্তারা ফিলিপাইন গেলেও তারা আংশিক টাকা উদ্ধারে এখনো কিছুই করতে পারেননি। এই টাকা ফেরত আনার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি। আর তাই চুরি হওয়া অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
ফিলিপাইনে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে দেশটির সরকারি উদ্যোগে সিনেটের ব্লু রিবন কমিটির ৫ম দফা শুনানি গতকাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতদিন শুনানিতে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ব্যাংক কর্মকর্তা রিজার্ভ চুরির কিছু অর্থ ফেরত দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। অথচ গতকালের শুনানিতে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন আরসিবিসি’র প্রেসিডেন্ট লরেনজো তান জানিয়েছে, দোষী সাব্যস্ত হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত দেবে। সিনেট প্রেসিডেন্টের প্রশ্নের জবাবে তান বলেন, ৮১ মিলিয়ন ডলার পাচারে যদি তার ব্যাংক দায়ী হয় তাহলে অর্থ পরিশোধে তিনি বোর্ডকে অনুরোধ জানাবেন। অপরদিকে মুদ্রাপাচার বিরোধী সংস্থা, এএমএলসি জানিয়েছে, ফেরত পাওয়া অর্থের দাবিদার তৃতীয় কোনো পক্ষ না হলে একতরফাভাবেই মামলা চলবে। আর এই অর্থ পেতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে। কারণ হিসেবে এএমএলসি বলছে, মামলা পরিচালনা এবং কিছু পদ্ধতিগত কারণের কথা।
বিশেষজ্ঞদের মতেও রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সব অর্থ ফেরত পাওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংককে অর্থ ফেরত পেতে এক যুগেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে বলে মত দিয়েছেন।
সূত্র মতে, নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি অ্যাকাউন্ট থেকে এখনো বেহাত থাকা আট কোটি ১০ লাখ ডলার আদৌ ফেরত পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফিলিপাইনের অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) জানিয়েছে, বেহাত থাকা ৬৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৩৬১ কোটিই ফিলিপাইনের জুয়ার আসর ক্যাসিনোতে খরচ হয়ে গেছে। বাকি টাকা ফিলিপাইন থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করা হয়েছে। এএমএলসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশটির সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এটা খুবই অস্পষ্ট যে চুরি হওয়া অর্থের মধ্য থেকে এএমএলসি কতটা জব্দ করতে পারবে বা কী পরিমাণ অর্থ আমরা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দিতে পারব, তা বলা সম্ভব নয়।
রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া সব ডলার ফেরত পাওয়া নিয়ে সম্প্রতি সংশয় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেছেন, চুরি যাওয়া পুরো ডলার ফেরত নাও পাওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, টাকার একটা বিরাট অংশ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চলে গেছে, ক্যাসিনোতে খরচ হয়ে গেছে। তাই এটাকে ফিরিয়ে আনা বেশ কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোলে হয়তো এ টাকা ফেরত পেতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
ফিলিপাইনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংস্থা ‘ফিলিপাইন অ্যামিউজমেন্ট গ্যামিং করপোরেশন (পাগোর)’ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, সোলারি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনোর আসরে দুই কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং ইস্টার হাওয়াই ক্যাসিনো অ্যান্ড রিসোর্টে দুই কোটি ডলার খরচ হয়েছে। অর্থাৎ দুই জুয়ার আসরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকারদের চুরি করা মোট আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ৫৬ শতাংশ বা চার কোটি ৬০ লাখ ডলার খরচ হয়েছে। এসব অর্থ নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ফিলিপাইনে ঢুকেছে গত ৫ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। ফিলিপাইনের তদন্ত কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, জুয়া খেলে যারা জিতেছে তারা সেই অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে নিজ দেশে (সম্ভবত হংকং) স্থানান্তর করেছে। এদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনা জানার পরও অদক্ষতার জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সি ইউনিট (বিএফআইইউ) কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ফিলিপাইনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক থাকা সত্ত্বেও সেখানে গিয়ে বিষয়টির কোন কুলকিনারা করতে পারেননি বিএফআইইয়ের এক কর্মকর্তা। কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক পদোন্নতি পাওয়া অনভিজ্ঞ ওই কর্মকর্তা ১৭ দিন ফিলিপাইনে ছিলেন। তার অবস্থানকালের মধ্যেই ফিলিপাইনের ব্যাংক, ক্যাসিনো ঘুরে চুরির হওয়া অর্থ অন্য দেশে পাচার হয়ে গেছে। অথচ ওই সময়ের মধ্যে কোন কিছুই জানাতে পারেননি বাংলাদেশকে। আর ব্যর্থ হওয়া স্বত্তেও ওই কর্মকর্তাকে আবারও অর্থ ফেরত প্রক্রিয়া তদারকিতে ফিলিপাইনে পাঠানো হয়। যা নিয়ে ক্ষোদ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাদের ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, সহজে এ টাকা ফেরত আনা যাবে না। যদিও মুদ্রা পাচার বিষয়ে ফিলিপাইনের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। এ ছাড়া ফিলিপাইন আন্তরিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে সহযোগিতা করছে। তারপরও সময় বেশি লাগবে কেন জানতে চাইলে ওই সূত্র উদাহরণ দিয়ে জানায়, এর আগে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকার পরও আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে তিন বছরের বেশি সময় লেগেছিল। বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের আদালতের রায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে এলে অর্থ ফেরত পেতে তিন থেকে সর্বোচ্চ ১২ বছর সময় লাগতে পারে বলে ওই সূত্র মনে করছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, উদ্ধার হওয়া অর্থ ফেরতের বিষয়ে ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের সহযোগিতা করছে। এছাড়া তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্সি ইউনিটির সমঝোতা আছে। উদ্ধার হওয়া অর্থ বাংলাদেশ কীভাবে ফেরত পাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জেনেছি ফিলিপাইনে উদ্ধার হওয়া অর্থ তাদের অথরিটির কাছে আছে। এই টাকাটা আমাদের অর্থ বলে দাবি করেছি। তাই টাকাটা পাবো বলে আশা প্রকাশ করছি।
টাকা ফেরত পেতে কতদিন সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে মুখপাত্র বলেন, এটা বলা কঠিন। তবে মনে করিনা বেশি সময় লাগবে। যদিও সবকিছু ফিলিপাইনের আইন ও নিয়ম অনুযায়ী হবে। তাই পুরো বিষয় ফিলিপাইনের ওপর নির্ভর করছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে সঞ্চিত বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) চুরি হয়। এর মধ্যে শ্রীলংকায় একটি শব্দের বানানোর ভুলে ২ কোটি ডলার লেনদেন আটকে যায়। ওই অর্থ ছাড়া এই সময়ের মধ্যে কোন অর্থই ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। যদিও টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে ফিলিপাইন বেশ আন্তরিকতা দেখাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫ বার সিনেটে শুনানি করেছে। জড়িতরা অর্থ ফেরত দেওয়ার কথাও বলেছে। কিন্তু তা কথাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।