Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রেলবহরে হাজারো ইঞ্জিন-বগি

একনেকে ১৬ হাজার ১৪৭ কোটি টাকার ১৪ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৮, ১২:০১ এএম

নিজস্ব টাকায় হবে ৫৬০ মডেল মসজিদ


নতুন করে আরো এক হাজার ১৬৫টি ইঞ্জিন ও বগি বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে যোগ হচ্ছে। বিদ্যমান অধিকাংশ ইঞ্জিন ও বগি’র অর্থনৈতিক লাইফ লাইন শেষ হয়ে যাওয়ায় সরকার নতুন ইঞ্জিন ও বগি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ‘রোলিং স্টক সংগ্রহ’ শিরোনামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে তিন হাজার ৬০২ কোটি টাকা। এরমধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দেবে দুই হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। বাকি ৭৬২ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রেলের সেবার মান বাড়বে। মানুষ হয়রানি ছাড়া স্বাচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারবে। একই সঙ্গে রেলওয়েকে লাভজনক সংস্থা হিসেবে রূপ দেওয়া সম্ভব হবে। পরিকল্পনা কমিশনের দেওয়া তথ্য মতে, এই প্রকল্পের আওতায় ৪০টি ব্রডগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন), ৭৫টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ ভ্যান সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া ৪০০টি মিটার গেজ ও ৩০০টি ব্রডগেজ বগি কভার্ড ওয়াগন এবং ১৮০টি এমজি ও ১২০টি বিজি বগি ওপেন ওয়াগন কেনা হবে। সবমিলিয়ে এক হাজার ১৬৫টি ইঞ্জিন ও বগি কেনা হবে এই প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে নতুন যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রেন পরিচালনা করা যাবে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এদিকে সৌদি আরব সরকারের কাছ থেকে প্রতিশ্রæত ১০০ কোটি ডলার বা আট হাজার কোটি টাকা অনুদান না পাওয়ায় অবশেষে নিজস্ব অর্থায়নেই সারা দেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) শিরোনামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখন খরচ ধরা হয়েছে আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এখন পুরো টাকাটাই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে। যা আগে সৌদি সরকারের কাছ থেকে পাওয়ার আশা করেছিল সরকার। সৌদি সরকারের অনুদান কেন পাওয়া যায়নি এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সৌদি আরবের রাজনীতির পরিস্থিতি এখন টালমাটাল। তাদের বাদশাহ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) বেঁচে আছেন কি না তা নিয়ে সারা বিশ্বে চলছে আলোচনা। সৌদি সরকার এখন অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত। সেখানে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিচার হচ্ছে। আর্থিক দৈন্যও ফুটে উঠেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের সময় বাংলাদেশে মসজিদ নির্মাণে দেশটির অনুদান দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। অবশ্য ওই সময় দুই দেশের মধ্যে মসজিদ নির্মাণের বিষয়ে কোনো সমঝোতা স্মারক সই হয়নি। দেশটি শুধু মৌখিকভাবে অনুদানের বিষয়ে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় কিংবা তার পরে। এক বছরের বেশি সময় দেশটির টাকা পাওয়ার অপেক্ষায় থেকে অবশেষে নিজস্ব টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
প্রকল্পটির আওতায় দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হবে। মসজিদগুলো ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হবে। সে ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে ৪ তলা ভিতে ৪ তলা এবং উপজেলায় ৩ তলা ভিতে ৩ তলা মসজিদ ভবন নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় মসজিদগুলোতে নারী-পুরুষের আলাদা অজু করা ও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে গ্রন্থাগার, সম্মেলন কক্ষ, গবেষণা কেন্দ্র ও অতিথিশালা। বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ সুবিধাও রাখা হচ্ছে। মৃতদেহ গোসল করানো, হজযাত্রী ও ইমামদের প্রশিক্ষণের সুবিধাও থাকবে।
গতকালের একনেক সভায় রেলওয়ের জন্য এক হাজার ১৬৫টি বগি ও ইঞ্জিন, সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পসহ মোট ১৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ১৬ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে খরচ হবে ১৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থার কাছ থেকে মিলবে ২৪ কোটি টাকা। আর দুই হাজার ৮৪০ কোটি টাকা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়ার আশা করা হচ্ছে’।
একনেক সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ৪৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে সিজিএস কলোনিতে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ৬৮৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, ১১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবনের বর্তমান জায়গায় ১৫ তলা ভবন নির্মাণ, ৪৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের উন্নয়ন, ৩৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন, ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুর এর অ্যাপ্রোচ সড়ক প্রশস্তকরণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন (সংশোধিত), ৩৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় চার লেন উড়াল সড়ক নির্মাণ প্রকল্প।



 

Show all comments
  • কামরুজ্জামান ২৭ জুন, ২০১৮, ৩:৫৪ এএম says : 0
    এগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ফারুক আহমদ ২৭ জুন, ২০১৮, ৮:০৫ পিএম says : 0
    ময়মনসিংহ- সিলেট আন্তনগর নতুন ট্রেন দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: একনেক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ