পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের নামে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে নানা প্রতিষ্ঠান। অনুমোদনহীনভাবে চলছে এগুলো। অনেক ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে এগুলোর কার্যক্রম। এসব নিরাময় কেন্দ্র থেকে মাদকাসক্তদের সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরার নজির নেই। বরং বেশকিছু নিরাময় কেন্দ্র মাদক কেনাবেচা ও সেবনের নিরাপদ ঘাটি হিসাবে পরিচিত। সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান শুরুর পর অবৈধ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলো তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিনত হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্রেফতার এড়াতে প্রথমে গাঢাকা দিয়ে কিছুদিন কাটানোর পর তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা মাদকসেবী সেজে বিভিন্ন নিরাময় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের উপ পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা জানান, নিরাময় কেন্দ্র খুলে নিবন্ধনের জন্য যারা আবেদনকারীদের তথ্য যাচাই করে ইতোমধ্যে ঢাকার ১২/১৪টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নিরাময় কেন্দ্রে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা আশ্রয় নিয়েছে-এমন তথ্য শুনে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এই তথ্য আমার কাছে নতুন। এমনটা হতেও পারে। তবে কোন নিরাময় কেন্দ্রে কারা আশ্রয় নিয়েছে তা জানতে পারলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারিভাবে মাত্র ৫৭টি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের অনুমোদন থাকলেও অবৈধভাবে গজিয়ে উঠা নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। এসব নিরাময় কেন্দ্র থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছে এমন নজির খুবই কম। কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে কিছুদিন ভালো থাকলেও আবারো তাকে মাদকেই ফিরে যেতে দেখা যায়। অথচ চিকিৎসার নামে অভিনব কৌশলে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
বেসরকারিভাবে মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র করতে হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদন না নিয়ে প্রতিদিন গড়ে উঠছে একের পর এক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। কেন্দ্রগুলোতে নিরাময়ের নামে উল্টো মাদক ব্যবসা চলে আসছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। হরেক নামে রঙ-বেরঙের সাইনবোর্ডের আড়ালে গজিয়ে ওঠা এসব নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার নামে মাদকাসক্তদের ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন। অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, জেলখানার মতো ছোট ছোট রুমে মাদকাসক্তদের তালাবন্দি রেখেই চলে তথাকথিত নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসা।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসা নিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো দিন দিন গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। দেখা যায়, বেশিরভাগ নিরাময় কেন্দ্রে তালা মেরে রাখা হয় মাদকাসক্তদের। ভয়ঙ্কর মাদকাসক্তে আক্রান্তদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে পরিবারের লোকেরা এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়ে নানা উৎকণ্ঠায় থাকেন। নামে-বেনামে গড়ে উঠা এসব নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার নামে মাদকাসক্তদের ওপর চলে অমানবিক নির্যাতন। জেলখানার মতো ছোট্ট একটি রুমে মাদকাসক্তদের রেখে চিকিৎসার ব্যয়ভার হিসেবে পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় হাজার হাজার টাকা। চিকিৎসক নেই, নেই চিকিৎসা সরঞ্জাম, রোগীরা ঘুমায় মেঝেতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে কিছু অসাধু চক্র ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত করে পরিচালনা করছেন। এসব কেন্দ্রে চিকিৎসা সুবিধা বলতে কিছু নেই। নানা অভিযোগ আর চিকিৎসার নামে রোগীর ওপর শারীরিক নির্যাতন, মাদক থেকে মুক্ত করার পরিবর্তে চিকিৎসা কেন্দ্রের মধ্যে মাদক সেবন করানো, জেলখানার আসামীদের মতো বন্দি করে রেখে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অর্থ আদায় করে নেয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছে চিকিৎসার নামে রোগীর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর। প্রায়ই মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলো থেকে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। কেন্দ্র আর থানা পুলিশের মধ্যে মাসোহারার সমঝোতা থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘আঘাতজনিত মৃত্যু’র ঘটনাকেও আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হয়। রাজধানীর মালিবাগ, বাড্ডা, তেজগাঁও, মিরপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলো হরদম মাদক বিক্রি ও সেবনের নিরাপদ আস্তানায় পরিনত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা গাঢাকা দিয়েছে। এদেরই একটা অংশ এখন মাদকসেবী সেজে নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিদিন এদের জন্য খাবার পাঠানো হচ্ছে। নিরাময় কেন্দ্রে ভালই কাটছে তাদের দিন।
সূত্র জানায়, সারাদেশে অবৈধ নিরাময় কেন্দ্রের মধ্যে রাজধানীতে ৩৫টি, রাজধানীর বাইরে ঢাকা উপ অঞ্চলে ১৩টি, দিনাজপুর উপ-অঞ্চলে দুটি, কক্সবাজার উপ অঞ্চলে দুটি, বগুড়া উপ অঞ্চলে চারটি, ময়মনসিংহে নয়টি, রংপুরে একটি, খুলনায় তিনটি, নোয়াখালীতে দুটি এবং রাজশাহীতে আটটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে বলে চিহ্নিত করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। অথচ রাজধানীতেই অবৈধ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। সূত্র জানায়, চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোতেই আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগের একটি পরামর্শ কেন্দ্র’, খিলগাঁও আইডিয়াল কলেজ সংলগ্ন একটি কেন্দ্র, মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের একটি, মোহাম্মদী হাউজিংয়ের একটি, ঢাকা উদ্যানের কাছে একটি প্রতিষ্ঠান, রায়ের বাজারের একটি, মোহাম্মদপুর আজিজ মহল্লায় অবস্থিত একটি, উত্তরা ৩, ৪, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর সেক্টরের একটি করে প্রতিষ্ঠান, এলিফ্যান্ট রোডের একটি ক্লিনিক, পশ্চিম যাত্রাবাড়ীতে অবস্থিত দুটি পূর্নবাসন কেন্দ্র, উত্তর শাহজাহানপুরের একটি, মতিঝিলের একটি, পশ্চিম রামপুরার একটি, রামপুরার ডিআইটি রোডের একটি, গ্রিনরোডের একটি, পল্লবীর একটি নামকরা ক্লিনিক ও লালবাগ ও ইস্কাটনের দুটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি জানান, ঢাকার বেশ কিছু নিরাময় কেন্দ্রের সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এখন আর আগের মতো মাদকাসক্তি নিরাময়ের সাইনবোর্ড চোখে পড়ে না। কারন যেসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স না নিয়ে নিরাময় কেন্দ্র চালু করেছিল সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বন্ধ করে দেয়া নিরাময় কেন্দ্রগুলো গোপনে ব্যবসা করে থাকতে পারে। সে সব কেন্দ্রে কোনো তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী আশ্রয় নিলেও নিতে পারে উল্লেখ করে মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, আপনাদের কাছে কোনো ইনফরমেশন থাকলে আমাদেরকে জানান। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো। মাদকের সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।