পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবায়েদুর রহমান : বাংলাদেশের সমস্ত ফ্রন্ট যখন হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত তখন একটি ফ্রন্টে আঁধার দিগন্তে ক্ষীণ হলেও একটি রুপালি রেখার আভাস দেখা যাচ্ছে। সেটি হলো, ব্লগার্স এবং অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফ্রন্ট। সাম্প্রতিক অতীতে কয়েকজন ব্লগার আততায়ীর চাপাতির আঘাতে মৃত্যুবরণ করেছেন। কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়। তাই তাদের মৃত্যুও কাম্য নয়। কিন্তু চিত্রের রয়েছে অপর একটি পিঠ। সেটি হলো, তারা ধর্ম বিশেষ করে পবিত্র ইসলামকে অশ্লীল, কদর্য ও নোংরা ভাষায় আক্রমণ করছেন। এদের সম্পর্কে একশ্রেণীর প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া একপেশে প্রচারণা চালিয়েছে। তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। সেই খবরটি প্রতিদিন তারা ফলাও করে প্রকাশ করেছে। ওই আক্রমণের নিন্দা আমরাও জানাই। কিন্তু একশ্রেণীর ব্লগার যে আল্লাহ্, রাসূল এবং পরকাল সম্পর্কে কুৎসিত ভাষায় প্রচারণা চালিয়েছে এবং চালিয়ে যাচ্ছে, সেইসব খবর ওইসব মিডিয়া সম্পূর্ণ ব্ল্যাক আউট করেছে। এই ধরনের একপেশে সাংবাদিকতা তারা চালিয়েই যাচ্ছে। ব্লগারদের সমর্থনকারী বুদ্ধিজীবীরাও ওই একপেশে প্রচারণায় বাতাস দিয়ে যাচ্ছেন।
ধর্মের কল বাতাসে নড়ে
কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। এখন খোদ তাদের মহল থেকেই মৃদু কণ্ঠে বলা হচ্ছে যে, কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন লেখা উচিত নয়। এই কথা এখন বলছেন বামপন্থী অধ্যাপক ও বুদ্ধিজীবী ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। একটি বিশাল কর্পোরেট হাউজের বাংলা দৈনিক বিশেষ সংবাদ ভাষ্য লিখেছে। এসব বিষয় নিয়ে ভাবছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শুধু ভাবনা নয়, এই বিষয় নিয়ে উচ্চ কণ্ঠ হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
বিগত কয়েক বছর ধরে ইসলাম এবং তার নবী-রাসূল ও সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে যে সুসংগঠিত প্রচারণা চলছিল সে ব্যাপারেও মনে হয় ধর্ম নিরপেক্ষ শিবির বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ মহলে দ্বিতীয় চিন্তা শুরু হয়েছে। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে সংবিধানে বহাল রাখাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যে রিট হয়েছিল, সেটি যেরূপ দ্রুত গতিতে এবং পত্রপাঠ খারিজ হয়েছে সেটি অনেককে বিস্মিত করেছে। সকলেই জানেন, এই বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট কোনো বক্তব্যই শুনতে রাজি হননি। তারা ¯্রফে বলে দিয়েছেন যে, মামলাটি যারা করেছে তাদের কোনো লোকাস স্ট্যান্ডি নেই। অর্থাৎ এই মামলার কোনো ভিত্তিই নেই এবং যারা মামলা করেছেন তাদের মামলা করার কোনো এখতিয়ারই নেই।
যে মামলাটি সুদীর্ঘ ২১ বছর ধরে ঠা-া ঘরে পড়েছিল এবং যে মামলার আবেদনের প্রেক্ষিতে রুল জারি করা হয়েছিল, সেই মামলা এমন সামারিলি ডিসমিসড হবে, এটি কি কেউ আগের দিনেও কল্পনা করতে পেরেছিলেন? কিন্তু কথায় বলে, ঞৎঁঃয রং ংঃৎধহমবৎ ঃযধহ ভরপঃরড়হ. অর্থাৎ সত্য রূপকথাকেও হার মানায়। মামলার ফলাফল কি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসেছে, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো ফ্যাক্টর ক্রিয়াশীল ছিল, সেটি অনেকে ভাবছেন।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ব্লগার নাজিম উদ্দিনের হত্যা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ব্লগাররা ধর্ম সম্পর্কে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রতি-আক্রমণ ও হিংসার জন্ম দিচ্ছে। এ জন্য ব্লগারদের সংযত আচরণ করতে হবে। সেইসঙ্গে অন্যদের উচিত হবে ব্লগারদের আক্রমণাত্মক বক্তব্য উপেক্ষা করা। তিনি আরও বলেন, ব্লগাররা যা লিখছে সেটিও ঠিক বলে আমি মনে করি না। কারণ কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া ঠিক নয়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে দেওয়া ব্লগারদের বক্তব্য, মতামত উপেক্ষা করাই যুক্তিযুক্ত। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমেদ শরীফও লেখালেখিতে সরব ছিলেন। তিনিও মুক্তমনা ছিলেন। কিন্তু তিনি কখনো কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে লেখেননি। তিনি শুধু তার মতাদর্শের প্রকাশ ঘটাতেন। আহমেদ শরীফের সময়কালের নাস্তিক্যবাদ-লেখালেখি এবং বর্তমান তরুণ প্রজন্মের ব্লগার ও মুক্তমনাদের মতাদর্শে পার্থক্য রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ব্লগারদের এসব লেখালেখি আমি নিজে পরিহার করি। গুরুত্ব দেই না। এসব নিয়ে ভাবার অবশ্য সময়ও নেই আমার।
জেনারেল এরশাদ
ব্লগার হত্যা, মোয়াজ্জিন হত্যা প্রভৃতি সম্পর্কে সবচেয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। একটি রাজনৈতিক সমাবেশে তিনি বলেন, ধর্ম এবং আমাদের নবীজিকে নিয়ে কটাক্ষ করার অধিকার কারো নেই। আমি কোনো হত্যার পক্ষে নই। যেকোনো হত্যাই নিন্দনীয়। ব্লগার হত্যার বিচার চাই। একই সাথে যারা ব্লগে ধর্ম নিয়ে বিদ্রƒপ করে তাদেরও শাস্তির দাবি করি।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ব্লগার হত্যা সারা পৃথিবীর মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করছে। অথচ আমাদের মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদরাসার ছাত্র প্রতিনিয়ত গুম-খুন হলেও এ নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।
এরশাদ বলেন, জঙ্গি বলতেই আজ মুসলমানদের বোঝানো হয়। আমরা কেন আজ জঙ্গি হলাম? আফগানিস্তানে শিশুসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষ হত্যা করলেন, এটা কি জঙ্গিবাদ নয়? তেলের কারণে ইরাককে ধ্বংস করে দিলেন, সাদ্দামকে হত্যা করলেন, কী দোষ ছিল সাদ্দামের? তেলের কারণে লিবিয়াকে ধ্বংস করলেন, গাদ্দাফীকে হত্যা করলেন। সিরিয়ার মানুষ জীবন বাঁচাতে আশ্রয় চেয়েছিল, আশ্রয় দেননি। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? মুসলমানরা এর প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করলেই এটাকে জঙ্গিবাদ বলে প্রচার করা হয়।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রভূমিকে ইহুদিদের কাছে দিয়ে দিলেন, সেখানেও হাজার হাজার নারী-শিশুকে হত্যা করা হলো। এটা কি জঙ্গিবাদ নয়?
ইসলামবিরোধী প্রচারণার
আসল মতলব
যারাই তাদের ব্লগে ধর্মবিরোধী প্রচারণা করে তাদের সকলেই কি তাদের নিজস্ব বিশ^াস থেকে করে? করে না। একটি বাংলা দৈনিকে গত ১০ এপ্রিল ‘অতি উৎসাহে সর্বনাশ’ শিরোনামে প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘বিদেশে পাড়ি জমানোর মতলবেও বিতর্কিত বিষয় নিয়ে ব্লগে লেখালেখি করে, তাদের সংখ্যাও কম নয়। কিছু দেশের ভিসা পেতে এমন অনেকেই আবেদন করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে। তাদের মতে, যারা দেশ ত্যাগ করেছে, তাদের অনেকেই আবার বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, এমন বেশ কয়েকজন ব্লগারের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, অনেকে শখের বশে ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করে থাকে। এমন কিছু বিষয় তারা বেছে নেয়, যেগুলো মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এবং ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে। বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে ব্লগারদের মধ্যে ঝড় বয়ে যায়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয় এমন বক্তব্য দেওয়াটা অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আলাদা একটি সেল ব্লগারদের এমন মন্তব্যের ওপর নিয়মিত নজরদারি করছে। ব্লগাররা ব্লগে স্পর্শকাতর কোনো বিষয়ে মন্তব্য করছে কিনা, কারও অনুভূতিতে আঘাত দিচ্ছে কিনা সেগুলো খেয়াল রাখছে সেলটি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য
তনু হত্যা নিয়ে যখন চারদিকে তোলপাড় চলছিল ঠিক তখনই বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিম উদ্দিনকে হত্যা করা হয়। সাংবাদিকরা স্বভাবসুলভভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে। এখনও স্পষ্ট কোনো চিত্র পাওয়া যায়নি। যেসব বিষয়ে তদন্ত চলছে তার মধ্যে এই বিষয়টিও রয়েছে যে, নাজিম উদ্দিন যেসব ব্লগ লিখত সেসব ব্লগে ধর্মীয় অনুভূতিকে বিশেষ করে ইসলামকে আঘাত করা হয়েছে কিনা? এই বিষয়টি এখন তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট।
ওপরে যেসব ঘটনার উল্লেখ করা হলো সেসব থেকে দেখা যায় যে, প্রগতি ও মুক্ত মনের নামে যেভাবে ধর্মকে আঘাত করা হচ্ছে, সে বিষয়ে সরকার এতদিন উদাসীন ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, ধর্মকে আঘাত করে ব্লগ লিখলে সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এসব ঘটনাবলি এবং উক্তি থেকে দেখা যায় যে, সরকার ধর্মবিরোধী বিশেষ করে ইসলামবিরোধী এলিমেন্টদের তৎপরতাকে প্রশ্রয় দেবে না। অন্তত মুখে বলছে সরকার এই কথা। অতীতে তারা এই ধরনের কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণও করেনি। সরকারের যদি বোধোদয় হয়ে থাকে তাহলে ভালো। যদি বিলম্বিত বোধোদয়ও হয় তাহলেও ভালো।
বিএনপির নিদ্রা
ভঙ্গ হবে কবে?
যাদের কথা বলা হলো তারা আন্তরিকভাবে বলছেন নাকি লিপ সার্ভিস দিচ্ছেন, সেটি তারাই ভালো বোঝেন। তবুও ব্লগারদের ধর্মদ্রোহিতা সম্পর্কে কিছু কথা এরশাদ, আওয়ামী লীগের দু-একজন নেতা, এমনকি বামপন্থীদের কারো কারো মুখ থেকেও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু বড়ই আশ্চর্যের এবং রহস্যময় বিষয় এই যে, এ ব্যাপারে বিএনপি একেবারে নির্বিকার। তাদের আচরণ দেখে মনে হয়, ইসলামের নাম মুখে আনলেই তাদের জাত যাবে। বিএনপি এখন প্রগতিবাদী হওয়ার প্রাণান্তকর প্রয়াস পাচ্ছে। কিন্তু তাদের এই প্রচেষ্টা বোধগম্য কারণে সফল হবে না। কারণ দাঁড়কাক ময়ূরপুচ্ছ লাগালেও সে দাঁড়কাকই থেকে যায়। পুচ্ছ তুলে নাচলেও সে ময়ূর হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।