পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ‘চিঠির উত্তর দিসরে বন্ধু মনে যদি লয়/কাগজ গেল দিস্তা দিস্তা কলম গোটা ছয়’ (দিলরুবা খান)। স্ত্রী রওশন এরশাদকে চিঠি দিয়ে উত্তরের প্রহর গুনছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ। চমৎকার! একেই বলে স্বামী-স্ত্রীর প্রেম-ভালোবাসা না বিরোধ? একেই বলে রাজনীতি এবং ক্ষমতার লোভ!!! এ বিরোধ পারিবারিক নয় রাজনৈতিক। আদর্শ নীতি নৈতিকতারও বিরোধ নয়; বিরোধ ক্ষমতার হাওয়াই-মিঠাই। স্ত্রী ক্ষমতার হালুয়া রুটি এবং উচ্ছিষ্ট পেতে বদ্ধপরিকর। আর স্বামী জনগণের পক্ষ্যে থেকে দলকে শক্তিশালী ও গণমুখী করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ অবস্থায় মনের ভাব প্রকাশের জন্য স্ত্রীকে চিঠি লিখতে বাধ্য হন এরশাদ। স্বামী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ চিঠি দিয়েছেন স্ত্রী জাতীয় সংসদের ‘ক্ষমতাসীন বিরোধী দলীয়’ নেতা বেগম রওশন এরশাদকে। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে এইচ এম এরশাদ ও বেগম রওশন এরশাদকে পাশাপাশি চেয়ারে বসে থাকা দেখতে যারা অভ্যস্ত ‘এই চিঠি’তে তাদের কি মোহ ভঙ্গ হচ্ছে! এটাই জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরের বাস্তবতা; পর্দার আড়ালের খবর। তিন মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী ও কয়েকজন এমপি বেগম রওশন এরশাদের পক্ষ্যে থাকলেও কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যায়ের সব নেতাই এরশাদের পক্ষ্যে। দলে কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ ও মহাসচিব পদে রদবদলে নেতাকর্মীরা দারুণ খুশি উজ্জীবিত। এরশাদের এই সিদ্ধান্তকে নেতাকর্মীরা বলছেন ‘সময়োপযোগী’ ও ‘রাজনীতির বাস্তবতা’। কিন্তু দলের আওয়ামী লীগপন্থীরা প্রচ- নাখোশ। জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব করায় সরকারপন্থীরা বেজায় ক্ষেপেছেন এরশাদের উপর। তারা রওশন এরশাদকে ‘সাইনবোর্ড’ বানিয়ে এগিয়ে যেতে চান। এ জন্যই রওশন এরশাদের ইচ্ছার বাইরে তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু রওশনের অনাগ্রহে থেমে যায় ঝড়। অতঃপর ওই নেতারা নিজেরাই একটি বিবৃতি দিয়ে তা রওশন এরশাদের নামে চালিয়ে দেন। মিডিয়ায় প্রচারের জন্য দৌঁড়ঝাপ করেন। এ ঘটনায় দুইদিন নীরব থাকার পর শনিবার বেগম রওশন এরশাদ বিবৃতি দিয়ে এরশাদের সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক আখ্যা দেন। এ অবস্থায় এইচ এম এরশাদ স্ত্রী রওশন এরশাদকে চিঠি দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করেন।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এবং জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের দেওয়া বিবৃতির প্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে (রওশন) চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন যে, তার নেওয়া সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেছেন, গঠনতান্ত্রিকভাবেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় পার্টিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দলের মধ্যে কোনো বিরোধ বা অনৈক্য নেই। পার্টি আগামীতে সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী হবে বলে চিঠিতে স্ত্রী বেগম রওশন এরশাদকে আশ্বস্ত করেছেন। গতকাল রোববার এগুলো তিনি রওশন এরশাদকে পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়ে এখন উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছেন।
স্ত্রী রওশন এরশাদকে লেখা পত্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ বলেছেন, ‘প্রিয় সহকর্মী’ আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। ‘২৩ জানুয়ারি শনিবার মিডিয়ায় প্রেরিত আপনার একটি বিবৃতির প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। সেখানে আপনি দু’টি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন। প্রথমতঃ সম্প্রতি পার্টিতে জি.এম. কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান এবং মহাসচিব পদে রদবদলের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। দ্বিতীয়তঃ বিগত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু যে, আপনাকে ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যন’ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন-তা আপনি নাকোচ করেছেন। দ্বিতীয় বিষয়ের ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ বিভ্রান্তি দূর করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। প্রথম প্রসঙ্গের বিষয়টি আপনাকে স্পষ্ট করতে চাই। জি এম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান করার ব্যাপারে আপনারও সম্মতি ছিল।
কো-চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির কোনো গঠনতান্ত্রিক পদ নয়। পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে সংগঠনের প্রয়োজনে আমি কোনো পদ সৃষ্টি বা কাউকে কোনো বিশেষ দায়িত্ব প্রদান করতে পারি। আমি গঠনতন্ত্রের বহির্ভূত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি নাই। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে যা রয়েছে-সেটাই আমাদের পার্টির গঠণতন্ত্র। ৩৯ ধারাটি তারই অংশ। এই ধারাটি আমার সৃষ্টি করা নয়। গঠনতন্ত্র আমি নিজে প্রণয়ন করি নাই। এটি একটি কমিটি দ্বারা প্রণীত এবং পার্টির জাতীয় কাউন্সিল দ্বারা অনুমোদিত। ৩৯ ধারা যদি সংশোধন বা বাতিল করতে হয় তা শুধু পরবর্তী কাউন্সিলেই হতে পারে। তার আগে গঠনতন্ত্রের কোনো ধারা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হবে-গঠনতন্ত্রের অবমাননা, পার্টি শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং দলীয় গণতন্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা।
মহাসচিব পদে রদবদল প্রসঙ্গে আপনাকে অবগত করতে চাই যে, জিয়াউদ্দিন বাবলুকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছি। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মিডিয়ার কাছে আপনাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। এটা ছিল দলকে বিভক্ত করার একটি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। সেকারণে, বাবলুকে যে ধারামতে তাকে মহাসচিব করা হয়েছিল-সেই ৩৯ ধারাতেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আপনার নিশ্চয় জানা আছে যে, জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পরবর্তীতে যে ক’জন মহাসচিবের দায়িত্ব লাভ করেছেন-তারা প্রথমে এই ধারা মতেই নিয়োগ লাভ করেছেন। পরবর্তীতে কাউন্সিলের মাধ্যমে তারা মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথমে এই ধারার বিষয়বস্তু ৪৬ ধারার অন্তর্গত ছিল। সর্বশেষ কাউন্সিলে সংশোধনীর মাধ্যমে এটি ৩৯ ধারায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। যে, দু/একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এখন ৩৯ ধারা নিয়ে বিতর্ক করছেন তারাও কিন্তু এই ৩৯ ধারা মোতাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বলা প্রয়োজন যে, অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং প্রথম মহাসচিব বাদে সকল-মহাসচিবই কোনো না কোনো সময়ে এই ধারা বলে দায়িত্ব লাভ করেছেন। তখন কিন্তু এই প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন আসেনি। আপনি আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে অবগত আছেন যে, সংসদীয় কমিটি দলীয় নীতি-নির্ধারণের কোনো শাখা নয়। একমাত্র প্রেসিডিয়ামেরই পার্টির নীতি-নির্ধারণের এবং কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা অনুমোদনের এখতিয়ার রয়েছে। সুতরাং দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বাস্তবায়নের ব্যাপারে প্রেসিডিয়াম বাদে অন্য কোনো শাখার মতামত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নেই।
আপনি পার্টির একজন শীর্ষনেতা এবং সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে কোনো বিষয়ে আবেদন, নিবেদন কিংবা বিবেচনার আহ্বান জানাতেই পারেন। সেটা আপনার সাংগঠনিক অধিকার। তবে পার্টির স্বার্থে বিবৃতিতে উল্লিখিত আপনার প্রস্তাবটি বিবেচনা করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। আশা করি আপনিও পার্টির সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করবেন। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, পার্টির মধ্যে কোনো বিভেদ বা অনৈক্য থাকবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে পার্টিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবো। আপনি সংসদীয় দলের নেতৃত্বে আছেন, আমি পার্টির নেতৃত্বে আছি। আমাদের উভয়ের মিলিত প্রচেষ্টায় জাতীয় পার্টি আগামী দিনে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান স্বামী এইচ এম এরশাদের চিঠির জবাব স্ত্রী জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদীয় দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ কখন এবং কীভাবে দেবেন তা জানার জন্য অধির অগ্রহে অপেক্ষা করছে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি দেশের মিডিয়া, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও ‘চিঠির জবাব’ জানার আগ্রহ কম নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।