পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : এ যেনো ‘মগের মুল্লুক’। রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় এখন গ্যাস সংকট। এতোদিন চুলা টিম টিম করে জ্বললেও এখন আর জ্বলছেই না। বেশিরভাগ এলাকায় দিনে একেবারেই গ্যাস থাকে না। কোনো কোনো এলাকায় রাত ১০টার আগে চুলা জ্বলে না। সংকটের কারণে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ। চুলা বাড়াতে গেলেও দিতে হয় ঘুষ। গ্যাস নিয়ে কোটি কোটি মানুষ এখন ভোগান্তি পোহাচ্ছে। এই যখন রাজধানীর অবস্থা তখন ঢাকার পাশেই নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৫০ হাজারেও বেশি অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত এই সংখ্যা বাড়ছে। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চলছে। তিতাসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সরকারদলীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরা সরকারী গ্যাসকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পদের মতো ব্যবহার করেছেন। টাকার বিনিময়ে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো সংযোগ দিয়েছেন। হাতিয়ে নিয়েছেন কমপক্ষে আড়াইশ’ কোটি টাকা। এছাড়া এসব অবৈধ সংযোগ থেকে সরকার মাসে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ হিসাব শুধু আবাসিক গ্রাহকের। বাণিজ্যিক হিসাব ধরলে এর সাথে আরও কয়েক কোটি যুক্ত হবে। তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর আনু মুহাম্মদ বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় এটা একটা বড় ধরণের দুর্নীতি। সরকারের লোকজন এই দুর্নীতির সাথে জড়িত। যে কারণে এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এই বিশাল দুর্নীতি ও অপব্যবহারের কারনে দেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, একদিকে বৈধ গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছে না অন্যদিকে গ্যাসের অপব্যবহার হচ্ছে। ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। এটা বন্ধ করা উচিত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে রীতিমত পুকুরচুরি চলছে। বিশেষ করে সোনারগাওঁ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ এবং বন্দর থানা এলাকায় আবাসিক এবং বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রে গ্যাস চুরি হচ্ছে। এসব এলাকার নব্বই শতাংশ সংযোগই অবৈধ বলে জানা গেছে। এতে করে প্রতি মাসে এই জেলায় শত শত কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে প্রকাশ্যেই। তিতাস গ্যাস টিএন্ডডি কোম্পানী লিমিটেড রিজিওনাল মার্কেটিং ডিভিশন নারায়ণগঞ্জ এর আওতায় তিনটি শাখা তথা জোনাল বিপণন অফিস রয়েছে। এগুলো হলো, নারায়ণগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ শহর, ফতুল্লা এবং মুন্সীগঞ্জ), সোনারগাঁও (সোনারগাঁ, রুপগঞ্জ, আড়াইহাজার ও বন্দর) এবং নরসিংদী। এই তিনটি জোনাল অফিসের আওতায় হাজার হাজার অবৈধ লাইন নেয়া হয়েছে। এতে প্রতি মাসে সরকারের শত শত কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে। বাণিজ্যিক এবং আবাসিক উভয় ধরনের লাইন রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই তিনটি জোনাল অফিসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ অফিসের আওতাধীন এলাকা শহরাঞ্চল হওয়ায় এখানে গ্যাস চুরির পরিমাণ কিছুটা কম। বাকী দুটি জোনাল অফিসের আওতাধীন এলাকাগুলোতে রীতিমত গ্যাসের পুকুরচুরি চলছে। ওই সব এলাকায় নব্বই ভাগ গ্যস লাইন অবৈধ। স্থানীয়রা জানান, এই অবৈধ লাইনগুলো নেয়া থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে সরকারদলীয় স্থানীয় এমপি থেকে শুরু করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা জড়িত। তিতাস গ্যাস কোম্পানীর স্থানীয় সূত্র জানায়, সোনারগাঁও, আড়াইহাজার, রুপগঞ্জ, বন্দর এবং নরসিংদী এলাকায় বহু মিল-কারখানায় অবৈধ সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারদলীয় এমপিরা প্রভাব খাঁটিয়েছেন। তাদের প্রভাবে স্থানীয় নেতাদের ভাবখানা ছিল এরকম “সরকারী মাল দরিয়ামে ঢাল”।
সরেজমিনে রুপগঞ্জের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও গ্যাসের সংযোগ দেয়া হয়েছে। এক প্রান্ত থেকে গ্রামের আরেক প্রান্তে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পাইপ লাইন টেনে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে গ্রামবাসীরা সংযোগ নিয়েছেন। এই ঘটনা অবশ্য দেড় বছর আগের। রুপগঞ্জের পশ্চিমগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আজাদ জানান, মেইন লাইন থেকে বাড়ির সংযোগ নিতে তাদেরকে ঘরপ্রতি ৩০ হাজার করে টাকা দিতে হয়েছে। টাকা নিয়েছে স্থানীয় নেতারা। দেড় বছর আগের সেই সংযোগের চুলাগুলো বিল ছাড়াই মাসের পর মাস জ্বলছে। এজন্য কোনো টাকা দিতে হয় না। কেউ টাকা চাইতেও আসে না। একই গ্রামের আব্দুল গফুর বলেন, আমাদের রান্না বান্নার জন্য এমপি সাহেব গ্যাস দিয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে সামনে রেখে এই গ্যাস সংযোগ ছিল আমাদের এমপি সাহেবের উপহার। একই এলাকার বাসিন্দা মিজান জানান, পূর্বগাঁও, পশ্চিমগাঁওসহ রুপগঞ্জের পুরো এলাকাতেই এখন গ্যাসের চুলা জ্বলে। এসব চুলার কোনো বৈধ কাগজ নেই কারও। এ কারণে বিলের ঝামেলাও নেই। সংযোগ দেয়ার সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ‘ওয়ান টাইম’ হিসাবে সে সময় টাকা দিতে কেউ কার্পণ্য করেনি। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার তিতাসের জিএম মোঃ শফিকুর রহমান অবৈধ সংযোগের কথা স্বীকার করে গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি আর স্থানীয় পর্যায়ে নেই। মন্ত্রণালয় কমিটি করে দিয়েছে। সেই কমিটি অবৈধ সংযোগ চিহ্নিত করে একে একে সব বিচ্ছিন্ন করবে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, টিএনওসহ তিতাসের কর্মকর্তারাও আছেন সেই কমিটিতে। কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, এটা ঠিক রুপগঞ্জের দিকে বহু অবৈধ সংযোগ রয়েছে সেগুলোর চিহ্নিত করার কাজ শিগগিরি শুরু হবে। তিনি জানান, এর আগে বন্দরে অবৈধ সংযোগ চিহ্নিত করতে গিয়ে জনতার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন তিতাসের কর্মকর্তারা। সে কারণে এখন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েই তা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র
অনুসন্ধানে জানা গেছে রুপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে (চনপাড়া বস্তি) অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি সিন্ডিকেট। এর অভ্যন্তরে রয়েছে ছোট বড় কমপক্ষে ১০ হাজার ঘরবাড়ি। এই ১০ হাজার ঘরবাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বজলু মেম্বারের নেতৃত্বাধীন এই সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যরা হলো, মেম্বারের ভাগিনা শফিকুল, খাজা, সোহরাব, ইয়াবা সম্রাট মিজু ওরফে বোতল মিজু। এর মধ্যে খাজা ও সোহরাব স্থানীয় রাসেল ভূঁইয়া হত্যা মামলার আসামী বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। বস্তিবাসীরা জানায়, বজলু মেম্বারের লোকজন গ্যাস সংযোগ দিতে ঘরপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে নিয়েছে। চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে সংযোগ দিয়ে এই সিন্ডিকেট রাতারাতি হাতিয়ে নিয়েছে ৩০ কোটি টাকা। রুপগঞ্জ থানার অন্যান্য এলাকায় ফ্রি গ্যাস সরবরাহ করা হলেও বস্তিবাসী তা থেকে নিস্তার পায়নি। মাস শেষে তাদেরকে চুলাপ্রতি দুশ’ টাকা করে দিতে হয়। বস্তিবাসীরা জানায়, অন্যান্য এলাকার মানুষ ফ্রি গ্যাস ব্যবহার করছে এমন উদাহরণ টেনে কেউ টাকা দিতে না চাইলে তার লাইন কেটে ফেলে বজলু মেম্বারের ক্যাডার বাহিনী। তাদের মুখের উপর কেউ কথা বলার সাহস পায় না। বস্তির ভিতরে হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজাসহ সব ধরণের মাদক বিক্রি হয়। এসবও নিয়ন্ত্রণ করে ওই একই সিন্ডিকেট। পেশাদার সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানাও এই পুনর্বাসন কেন্দ্র। থানা পুলিশও এখান থেকে নিয়মিত মাসোহারা পায় বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।
রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সংকট
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রকট আকারে গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েক দিন ধরে এ সংকট চললেও সমাধানের দেখা নেই। গ্যাস না থাকা অনেকের রান্নাঘরে চুলা জ্বলেনি। তাই পরিবারের জন্য রান্না করা কঠিন হয়ে পড়েছে। রাজধানীর রামপুরা এলাকার গৃহবধূ সেলিনা পারভীন জানান, গ্যাস সমস্যার কারণে তিনি ঠিক মতো রান্না করতে পারছেন না। অনেক সময়ই পরিবারের সদস্যদের জন্য নাস্তা বাইরে থেকে আনাতে হচ্ছে। অতিথি আসলে ঘটছে আরো বিপত্তি। যাত্রাবাড়ী এলাকার তাসলিমা আকতার বলেন একই কথা। তিনি বলেন, আগে দুপুরের দিকে একটু একটু করে গ্যাস আসতো। এখন আসে মধ্য রাতে। রাতেও রান্না করা যাচ্ছে না। ভোর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না বললেই চলে। মাঝখানে টিমটিম করে জ্বললেও সে আগুনে রান্না করা যায় না। তিতাস গ্যাস কোম্পানী সূত্রে জানা গেছে, তাদের জরুরী নিয়ন্ত্রণকক্ষে বেশ কিছু এলাকা থেকে এমন অভিযোগ পড়েছে। বাড্ডা, মালিবাগসহ বেশ কিছু এলাকায় গ্যাস সংকট প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে। এদিকে, গ্যাস সংকটের কারণে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সিএনজি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে গতকাল রোববার সিএনজি স্টেশনগুলোতে ছিলে লম্বা লাইন। মীরহাজিরবাগের সিএনজি চালাক আব্দুর রহমান জানান, গতকাল রোববার বেশ কয়েকটি স্টেশন ঘুরে তাকে গ্যাস নিতে হয়েছে।
রাজধানীর অবস্থা যখন এরকম তখন ঢাকার পাশেই নারায়ণগঞ্জে এভাবে গ্যাসের মগের মুল্লুক কিভাবে চলছে- এই প্রশ্ন অনেকেরই। এ বিষয়ে জানার জন্য তিতাস গ্যাস এন্ড ট্রান্সমিশন কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী নওশাদ ইসলামের মোবাইলে গতকাল কয়েকবার কল করলেও তিনি সেই কল রিসিভ করেননি। এরপর তার মোবাইলে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করে ম্যাসেজ পাঠানোর হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।