Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রিয়নবীর প্রিয় উৎসব

মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বর্ষপরিক্রমায় পবিত্র ঈদুল ফিতর পুনরায় আমাদের দ্বারে সমাগত। এই আনন্দময় পবিত্র দিনে সমগ্র বিশ্ববাসী, বিশেষ করে উম্মতে মুহাম্মদীকে জানাই আমাদের ঈদ মুবারক। সবার জীবনে ঈদ বয়ে আনুক আনন্দের বার্তা। ঈদ শব্দের অর্থও আনন্দ, এমন আনন্দ যা বারবার ঘুরে আসে। এই সুবাদে ঈদ উম্মতে মুহাম্মদ (সা.)- এর উৎসব পর্বও বটে। ঈদ বিশ্ব মুসলিমের একটি বার্ষিক সম্মিলন ও উৎসবের দিন। ঈদের দিন সবাই পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঈদগাহে ছোট-বড়, ধনী-নির্ধন, আমীর-ফকীর একই কাতারে দাঁড়িয়ে বিশেষ ইবাদত করে থাকে। উম্মতে মুহাম্মদীকে মহান রাব্বুল আলামিন বিশেষ কিছু বরকতময় অনুষ্ঠান প্রদান করেছেন, যা অন্যকোনো নবী-রাসুলের কাওম লাভ করতে পারিনি। তন্মধ্যে পরস্পর ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা, প্রীতি ও সৌহার্দের এক অনুপম দৃষ্টান্ত প্রদর্শনের অনুষ্ঠান ঈদ। ঈদ আসে বিশ্ব মুসলিমের দ্বারপ্রান্তে বাৎসরিক আনন্দের বার্তা নিয়ে, আসে সীমাহীন প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ও কল্যাণের সওগাত নিয়ে। সেই ঈদকে যথার্থ মর্যাদায় উদযাপন করা এবং ঈদের নামাজ যথাযথভাবে আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। পবিত্র এই দিনের অনেক ফজিলত রয়েছে। যারা দুই ঈদের নামাজ যথারীতি আদায় করে, মহান রাব্বুল আলামিন তাদের প্রার্থনা কবুল করে অফুরন্ত পুরস্কার প্রদানে ধন্য করেন। হাদিসে যে কটি রাতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে দোয়া কবুল হবার কথা বলা হয়েছে, তার ভেতর দুই ঈদের রাত অন্যতম। ঈদ উৎসবের সন্ধিক্ষণে কে কত দামী এবং সুন্দর পোশাক পরিধান করলো, কে কত উচ্চমানের পানাহার করলো সেটা কখনও দেখার ও বিচার্য বিষয় নয়, বিচার্য বিষয় হলো নিজ আত্মাকে কে কতটুকু নিষ্পাপ রাখতে পেরেছে, আল্লাহর দরবারে ত্যাগ স্বীকার তা নৈকট্য লাভে কে কতটা ধন্য হয়েছে। তাই ঈদের দিনের মর্যাদা ও ফজিলত সম্পর্কে প্রিয়নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পুণ্য লাভের অদম্য স্পৃহায় দুই ঈদের রাতে ইবাদতে মশগুল থাকবে, সেদিন তার অন্তর এতটুকু ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে না। যেদিন অন্য সবার অন্তর ভীতসন্ত্রস্ত মৃতবৎ হয়ে পড়বে। (ইবনে মাজাহ: ১৭৮২)।
প্রতি বছর মুসলিম উম্মাহর জন্য দুবার করে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা খুশি ও আনন্দের সওগাত নিয়ে আসে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় প্রত্যেক মুমিনের জীবনের চাওয়া পাওয়া ও চূড়ান্ত লক্ষ্যই হল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিৎ আনন্দ উৎসবের দিনগুলোতে সীমালঙ্ঘন না করে শরীয়ত-নির্দেশিত পন্থায় সংযত ও নিয়ন্ত্রিত থেকে ঈদ উৎসব উদযাপন করা। মুমিনের আনন্দ উৎসব, শোক-তাপ, সুখ-দুঃখ, জীবন-মরণ কেবলই আল্লাহর জন্য। এই মর্মে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, হে রাসুল! আপনি বলে দিন যে, আমার সালাত, আমার সমস্ত ইবাদত-বন্দেগী, আমার জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্যে। যিনি গোটা বিশ্বে প্রতিপালক এবং তার কোনো অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল। (সুরা আনআম: ১৬২-১৬৩)। অন্যান্য জাতির আনন্দ উৎসব হল ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর সুখ-সম্ভোগ অর্জন এবং ইন্দ্রিয়জ কামনা-বাসনা পূরণ। কিন্তু মুসলমানের কামনা-বাসনা মহান রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছার উপরই নির্ভরশীল। তাদের আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির অধীন।
আমাদের অনেকেই আনন্দ উৎসব মুহূর্তে নিজেদের ব্যক্তিসত্তা হারিয়ে বিভিন্ন গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়, যেভাবে ঈদের আনন্দ উৎসবে মত্ত হয়ে উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি নিতে থাকে, তাতে মনে হয় তারা এ পৃথিবীতে চিরদিনই বসবাস করবে। অথচ মুমিন মুসলমানের আনন্দ উৎসবের বিশেষ মুহূর্তেও আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করা উচিৎ। প্রতিটি মুমিনের ঈদের আনন্দ উৎসব হবে আল্লাহ ও রাসুলের সন্তুষ্টির মধ্য দিয়ে। তাই আনন্দ মুহূর্তেও খেয়াল রাখতে হবে আল্লাহ তায়ালার কিভাবে আনন্দ উৎসব উদযাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই প্রিয়নবী (সা.) যেভাবে ঈদের আনন্দ উৎসব উদযাপন করেছেন, ঠিক সেভাবেই হতে হবে আমাদের ঈদ উৎসব।
হিজরী সালের শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর এবং জিলহজ মাসের দশম তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়। এই উভয়টিকে একই সঙ্গে ঈদাইন (দুই ঈদ) বলা হয়। আরবি ঈদ শব্দটি আওদুন ধাতু থেকে নির্গত। আভিধানিক অর্থ হল বারবার প্রত্যাবর্তন করা। প্রতিবছরই নিয়মিতভাবে দুবার করে এর আগমন ঘটে। তাই এর নামকরণ হয় ঈদ। ইসলামে ঈদের প্র্যাবর্তন হয় পেয়ারা নবীর মুহাম্মদ (সা.)- এর হিজরত করে মদিনায় যাওয়ার পর। মদিনাবাসীদের বিশেষ দুটি দিন ছিল, যাতে তারা আনন্দ উৎসবে কাটিয়ে দিত। এই আনন্দ উৎসবগুলোতে তারা নানা ধরনের আচার-অনুষ্ঠান ও আনন্দ মেলা করত। যা সম্পূর্ণ ইসলামি রীতিনীতির পরিপন্থী এবং বিজাতীয় আচার ব্যবহার ও রীতিনীতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তাই নবীয়ে দুজাহান হজরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলমানদের এই উৎসবদুটি থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলেন। আর বললেন, মহান রাব্বুল আলামিন তোমাদের উক্ত উৎসবের বিনিময়ে ঈদুল ফিতর ঈদুল আজহার পবিত্র দুটি দিন দান করেছেন। এতে তোমরা পবিত্রতার সঙ্গে উৎসব পালন করো। (আবু দাউদ: ১১৩৪)।
প্রিয়নবীর ঈদের দিনের প্রস্তুতির মধ্যে প্রথমেই গোসল করতেন, মিসওয়াক এবং শরীয়ত সম্মতভাবে সাজগোছ করতেন। তবে কোনও ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত করতেন না যা বর্তমান সময়ে আমাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। ফজরের নামাজের সূর্যোদয়ের কিছু পরে ঈদগাহে যেতেন। মহানবী (সা.) ঈদুল ফিতরের প্রত্যুষে ইফতার করতেন ঘুম থেকে উঠেই। রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে ঘরে থেকে বের হতেন না। আর ঈদুল আযহার দিন ঈদের সালাত আদায় না করে কোন কিছু খেতেন না। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ঈদুল ফিতরের দিন রাসুল (সা.) খেজুর না খেয়ে ঈদগাহে রওয়ানা হতেন না আর খেজুর খেতেন বেজোড় সংখ্যায় অর্থাৎ তিনটি, পাঁচটি বা সাতটি এভাবে। (বুখারী : ৯৫৩)। ঈদের দিন রাসুল (সা.) তার সামর্থ্যানুযায়ী উপহার দিতেন। বিশেষ করে এইদিনে পাড়াপড়শিদের খুব বেশী খোঁজখবর নিতেন। ইয়াতিম ও গরীবদের প্রতি অনুগ্রহের হাত বুলিতে দিতেন। তাদের সবধরনের প্রয়োজন পূর্ণ করতেন। প্রিয়নবী (সা.) ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য এক রাস্তা দিয়ে যেতে এবং অন্য রাস্তা দিয়ে প্রত্যাবর্তন করতেন। (চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ