Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তারা কেন আমাদের ঘৃণা করে

প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক

পরবর্তী সময়ে আপনি যখন সন্ত্রাসী হামলার কথা শুনবেন, যেখানেই তা হোক না কেন, যে পরিস্থিতিইে ঘটুক না কেন, আপনি হয়তো ভাববেন, মুসলমানরা আবার হামলা চালাল নাকি? এবং সম্ভবত আপনার অনুমান ঠিক।
২০১৪ সালে সন্ত্রাসী হামলায় বিশ্বে ৩০ হাজার লোক নিহত হয়। যারা এ সহিংসতা করেছিল তাদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম। এবং গুরুত্বপূর্ণ হলো নিহতরাও তাই। অর্থাৎ ৩০ হাজার নিহতের অধিকাংশই ছিল মুসলিম।
এখানে যে প্রশ্নটি উচ্চকণ্ঠে উচ্চারিত তা হলো, তারা কেন আমাদের ঘৃণা করে? আসলে মুসলিম সন্ত্রাসীরা শুধু আমেরিকা ও পাশ্চাত্যকে ঘৃণা করে না। তারা আধুনিক বিশ্বকে ঘৃণা করে এবং বিশেষ করে সেই মুসলমানদের যারা আধুনিক বিশ্বে বসবাসের চেষ্টা করছে।
বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার। জিহাদিদের সংখ্যা অল্প। ইসলামী বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তর ক্যান্সার রয়েছে, তা হচ্ছে পশ্চাৎপদতা, উগ্রপন্থা ও অসহিষ্ণুতার ক্যান্সার। যেসব দেশে ধর্মের অবাধ পালন নিষিদ্ধ সেসব দেশের অধিকাংশই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেই ধর্মত্যাগের বিরুদ্ধে আইন রয়েছে।
কিন্তু এসব কি ধর্মে আছে?
বিশেষজ্ঞরা যখন ব্যাখ্যার চেষ্টা করেন যে, ১৭ শতকে ইসলামী সভ্যতা ছিল বিশ্বে সবচেয়ে উন্নত, অথবা কুরআন একসময় উদার ও প্রগতিশীল ধর্মগ্রন্থ হিসেবে পঠিত হতো, তারা আজ পশ্চাৎদতার কথা অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন না। তারা যা বলছেন তা হচ্ছে এটার পরিবর্তন হতে পারে।
১৪ শতকে ইসলাম বিদ্যমান ছিল। ছিল যুদ্ধ ও শান্তির সময়। ১৯০০ সালের আগে শত শত বছর ধরে খ্রিষ্টানদের হত্যা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য ইহুদিরা পালিয়ে তুলনামূলকভাবে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ওসমানীয় খেলাফতে আশ্রয় নেয়। সে কারণেই ১৯০০ সালে মধ্যপ্রাচ্যে ১০ লাখের মতো ইহুদি দেখা যায়। আজ ইরাক ও সিরিয়া থেকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা পালাচ্ছে ও উগ্রপন্থী মুসলিমরা তাদের জায়গা-জমির নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। তখনো যা ছিল এখনো সেই একই ধর্ম রয়েছে। তাহলে পার্থক্য কি?
এটা ধর্মতত্ত্ব নয়, এটা রাজনীতি। উগ্রপন্থী ইসলাম হলো ভেঙে পড়া রাজনীতি ও মুসলিম দেশগুলোর স্থবির রাজনীতির ফল। তারা ধর্মীয় উগ্রপন্থার মধ্যে একটি মতাদর্শ খুঁজে পেয়েছে, যা তাদেরকে আধুনিক বিশ্বের বিরুদ্ধে জড়ো করেছে, সে মতাদর্শ এখন বিশ্বের সর্বত্র, ইউরোপ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিচ্ছিন্ন তরুণদের কাছে রফতানি হচ্ছে।
আমরা কিভাবে এর অবসান ঘটাতে পারি?
প্রকৃতপক্ষে একটাই পথ রয়েছে। মুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করা, ধর্মের সংস্কার করা এবং সমাজকে আধুনিক করে তোলা। আর তা করতে গেলে আমাদের তাদের কথা শুনতে হবে, যারা সামনের সারিতে আছে, যাদের অনেকেই জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ও মারা যাচ্ছে। শত শত মুসলিম সংস্কারবাদীর সাথে কথা বলে দেখা গেছে যে, পশ্চিমা রাজনীতিক ও প-িতরা সমগ্র ইসলামকে নিন্দা করলে, ধর্মের অবমূল্যায়ন করলে এবং সকল মুসলিমকে পশ্চাৎপদ ও সন্দেহভাজন বলে আখ্যায়িত করলে তাদের কাজ অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে এ বিষয় নিয়ে চিন্তার আরেকটি পথ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের গবেষণায় বলা হয়, আমেরিকাতে হত্যাজনিত অপরাধের ৫০ শতাংশই আফ্রিকান-আমেরিকানদের দ্বারা ঘটে যারা কি না জনসংখ্যার মাত্র ১৩ শতাংশ। এখন বোঝা যায়, আশা করি আমরা বুঝতে পারছি যে, রাস্তায় যখন আমরা একজন কালো লোককে দেখি, তার সাথে আমরা একজন সম্ভাব্য হত্যাকারী বলে ব্যবহার করতে পারি না, অবশ্যই করা উচিত নয়। এটা হবে অমানবিক, অন্যায় ও বর্ণবাদী। আমেরিকার সর্বত্রই মানুষকে ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা উচিত, বর্ণবাদ, জাতিগোষ্ঠী বা ধর্মীয় হিসেবে নয়। মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশী ক্যাবচালক আপনাকে বিমানবন্দরে নিয়ে যাচ্ছে, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই যদিও সে একজন মুসলিম।
অবশ্যই কাউকে এসব বিষয়ে দ্রুত জড়িয়ে ফেলা যায়, বিশেষ করে কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায়। কিন্তু আমেরিকায় মানুষকে ব্যক্তি হিসেবে, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ব্যক্তি অধিকারের ভিত্তিতে বিচার করতে হবে। এ কারণেই তারা আমাদের ঘৃণা করে। আমরা আমাদের নিজেদের আদর্শে বাঁচব। সূত্র : সিএনএন ইন্টারন্যাশনাল।
ক্স নিবন্ধকার ফরিদ জাকারিয়া সিএনএনের ‘ফরিদ জাকারিয়া জিপিএস’-এর উপস্থাপক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তারা কেন আমাদের ঘৃণা করে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ